দুসস ডেস্কঃ মুজিবনগর সরকারের মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের কাটঅফ ডেট প্রজ্ঞাপন ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা অবজ্ঞা করে যাকে-তাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বানানোর অপরাধে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের জরুরী পদত্যাগ দাবি করে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আবীর আহাদ বলেছেন, অর্থ, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঐতিহাসিক চেতনা ও মর্যাদা ভুলুন্ঠিত করা চরম রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল।
আজ এক বিবৃতিতে উপরোক্ত মন্তব্য করে আবীর আহাদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবত বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করে আসছি যে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী তথাকথিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের পিঠে সওয়ার হয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নামে গেজেট জারি করে হাজার হাজার অমুক্তিযোদ্ধা, এমনকি রাজাকারদেরও মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে আসছেন। জামুকার দপ্তরে হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে বিপুল অভিযোগ দায়ের করা হলেও কোনো প্রকার তদন্ত ব্যতিরেকে পর্দার অন্তরালে বিপুল অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে ছাড় দেয়া হচ্ছে। অথচ বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী, এমনকি খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন! তাদেরকে উচ্ছেদের নামে যেসব মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডাররা অর্থের বিনিময়ে অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দিতে বিশাল ভূমিকা পালন করেছিলো, অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, জামুকা থেকে সেসব কমান্ডারদের নিয়ে বাণিজ্যিকভিত্তিতে যাচাই বাছাই কমিটি করে ভুয়াদের পার করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার ফলে সেসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ফিরে এসেছে।
বিশেষ করে বেসামরিক গেজেট, লাল মুক্তিবার্তা ও মুজিবনগর প্রমাণকে বিপুলসংখ্যক অমুক্তিযোদ্ধা থাকলেও যাচাই বাছাই কমিটি ও জামুকা তাদেরকে নতুন করে স্বীকৃতি দিয়ে সমন্বিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা স্থান করে দিয়েছে। অপরদিকে যে তালিকা বিতর্কের ঊর্ধে সেই ভারতীয় তালিকার বহু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ঐ সমন্বিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আসেনি! মূলত: বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের নামে ব্যবসা ও তামাশা করা হচ্ছে!
আবীর আহাদ বলেন, আমরা আরো বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গী হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়া কিছু বাঙালি সেনা কর্মকর্তা সম্পর্কে অভিযোগ থাকলেও সেসব তদন্ত না করেই বিশেষ কোনো ব্যক্তিস্বার্থে তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিশেবে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার স্বাধীনতার সুদীর্ঘ ৫০ বছর পর সাবেক সেনা সদস্যদেরকে বেসামরিক গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা বানানো হচ্ছে! নিয়ম হলো, সামরিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বাহিনী গেজেটধারী হবেন। সেটাতো সেই ১৯৭২ সালেই ফয়সালা হয়ে গেছে। কিন্তু বাহিনী সদস্য হয়েও বেসামরিক গেজেটে কীভাবে কোন নিয়মে কিসের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা বলে কাউকে এতদিন পর স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে তা কারোরই বোধগম্য নয়। এসব তথাকথিত নব্য মুক্তিযোদ্ধা গেজেট অবিলম্বে বাতিল করা হোক।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু-কন্যার সরকারের মর্যাদা ও ভাবমূর্তির পরিপ্রেক্ষিতে, বিশেষ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি পণ্য ও ছেলেখেলার হাত থেকে উদ্ধার করার জাতীয় প্রয়োজনেই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ এ মন্ত্রী মহোদয়ের পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করে আবীর আহাদ বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়নে মুজিবনগর সরকারের মুক্তিযোদ্ধা কাটঅফ ডেট ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে উচ্চ আদালত ও সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে “জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমিশন” গঠন করার জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
আবীর আহাদ
চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply