এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ঝিনাই নদীর পানি বাসাইল পয়েন্টে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা। ভাঙ্গনের ভয়াল মুর্তি ধারন করেছে ঝিনাই নদী।
গত তিন দিনে নদী তীরবর্তী কাশিল পয়েন্টে একটি কবরস্থান, একটি মুরগীর ফার্ম, বিদ্যালয় আঙিনার গাছের বাগান ও বিস্তীর্ণ জমিসহ প্রায় ২০ টি বসত-বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
চরম হুকীতে রয়েছে কাশিল কেবিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাকা ভবন। এ ছাড়াও ঝুকিতে রয়েছে বাথুলী বিল রক্ষা উপ-প্রকল্পের বাধ, বাসাইল-করটিয়া (ভায়া কাশিল) সংযোগ পাকা সড়কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ।
জানা যায়, ভাঙ্গন ঠেকাতে বর্ষার শুরু থেকেই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি)। তবে উপজেলার ঝিনাই নদী তীরবর্তী বিভিন্ন পয়েন্টে জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলেও ঠেকাতে পারছেনা ভাঙ্গন। ক্রমেই যেন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে বাসাইলের ঝিনাই নদী। এক পয়েন্টের ভাঙ্গনরোধে কাজ শেষ করতে না করতেই আরেক পয়েন্টে হানা দিচ্ছে প্রমত্তা এই নদী।
প্রত্যক্ষদর্শী কাশিল বাসিন্দা ও বাসাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল ইসলাম বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরেই নদী ভাঙ্গনের শীকার কাশিলের তীরবর্তী মানুষ। হঠাৎ করেই গত ২৯ আগস্ট বিকেল বেলায় কাশিল কেবিএন উচ্চবিদ্যায় এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। আর নিমিষেই বিদ্যায়ল আঙিনার প্রায় ১০/১৫টি গাছ নদীতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটিও যে কোন মুহুর্তে নদীকে বিলিন হওয়ার আশংকা রয়েছে। এদিকে কাশিল পূর্বপাড়ার একটি গোরস্থান নদীর গর্ভে চলে গেছে। গত এক সপ্তাহে কাশিলের প্রায় ১৫/২০টি বাড়ি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। ভাঙ্গন কবলিত এ এলাকা ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি করেন তিনি।
ভূক্তভোগি খামারী সোহেল মিয়া বলেন, স্কুলের গাছ ও সংলগ্ন বাড়ি ভাঙ্গন দেখতে দেখতে নিমিষেই আমার মুরগির খামার বাড়ির ৯০ ভাগ নদীতে বিলিন হয়ে গেল।
সরেজমিনে ভাঙ্গণ এলাকায় গেলে নদী ভাঙ্গনের শীকার কাশিল পশ্চিমপাড়ার মান্নান, নজরুল হাই স্কুল পাড়ার শাবান খান, আমিনুল ইসলাম, পূর্বপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান,ফজলকারিসহ ভূক্তভোগি ও স্থানীররা জানান, কাশিল পশ্চিমপাড়া থেকে পূর্বপাড়া পর্যন্ত তীরবর্তী প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার এলাকায় ১৫/২০টি বসতবাড়ি ও ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই বাড়ি-ঘর ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছে নিরাপদ স্থানে। আবার অনেকেই শেষ সম্বল বসত ভিটে হারিয়ে হয়ে পড়ছে আশ্রয়হীন। এছাড়াও প্রায় শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে পাকা সড়ক, খেলার মাঠ, হাট-বাজার, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবার দাবি তাদের। এখনই ব্যবস্থা না নিলে নদীগর্ভে বিলিন হবে বসতবাড়িসহ অনেক গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনা। ছিন্নমূলের তালিকায় যোগ হবে এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার।
অনেকেই অভিযোগের সুরে বলেন, নদী থেকে সারা বছর অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের কারনেই এমন তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, নদী ভাঙন রোধে ইতোমধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলমান রয়েছে। গত বর্ষায় কামুটিয়া পয়েন্টে ভেঙ্গে যাওয়া ঝিনাই নদীরক্ষা বেরিবাধটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যায়ে সংস্কার করা হয়েছে। কিছুদিন আগেই দোহার পয়েন্টে ভাঙন মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক কাজ হয়েছে। কাশিল হাই স্কুলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, ভাঙন রোধে বিভিন্ন পয়েন্টে তাৎক্ষিনিক কাজ করা হয়েছে। গত ২৯ ও ৩০ আগষ্ট বাসাইলের নতুন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে । এর আগেও স্কুল রক্ষার জন্য ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। কিন্তু পুনরায় ভাঙন শুরু হওয়ায় আবারও ভাঙন প্রতিরোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বরাদ্ধ পেলেই জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর অস্থায়ী ভাঙ্গনরোধে শুধু টাকাই অপচয় হচ্ছে। নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী পরিকল্পনা নেয়া জরুরী। ইতোমধ্যে নদী ভাঙনের স্থায়ী প্রকল্প পাঠানো হয়েছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply