১৯৭১ সাল পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক গুপ্তচর হিসেবে মেজর জিয়াউর রহমানকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বলে জেনারেল টিক্কার অনুসারী কর্নেল বেগ নিশ্চিত করেছিলেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে। পাকিস্তানের চৌকস সামরিক কর্মকর্তা কর্নেল বেগ এর ভাষ্যমতে, গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাবার ভয়ে যুদ্ধ শুরু হবার প্রথম ২-৩ দিনের মধ্যেই অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডার আব্দুর রশিদ জানজুয়াসহ গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়টি জানে এমন কয়েকজন বাঙালি সামরিক অফিসারকে হত্যা করেছিল মেজর জিয়াউর রহমান। মূলত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সহ-অধিনায়ক ছিলো এই জিয়া। পাক ভূমি যাতে বিভাজিত না হয় সেদিকে নজর রাখার জন্য পাকিস্তানের সামরিক গুপ্তচর হিসেবে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলো সে। মেজর জিয়ার এসব অপকর্ম প্রকাশ হতে শুরু করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একদল পাকিস্তানের প্রেতাত্মা এই খুনির হয়ে দালালি শুরু করেছেন বলেই প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে।
এবিষয়ে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, পাকিস্তানের সামরিক গুপ্তচর মেজর জিয়ার নানা কুকর্ম খোলাসা করেছেন জেনারেল টিক্কার অনুসারীরা। আর এসব প্রচার হলেই গা জ্বলতে শুরু করে এদেশীয় একদল পাকি প্রেতাত্মাদের। যারা খুনি জিয়ার হয়ে দালালি করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিশেষ করে ড. কনক সরওয়ার, ইলিয়াস হোসাইন, তাসনিম খলিলরা সাংবাদিকতার ট্যাগ লাগিয়ে ঐতিহাসিক সত্যকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য মানুষকে বিভ্রান্ত করার নানান অপপ্রয়াস চালান। যা খুবই দুঃখজনক।
সূত্র বলছে, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মেজর জিয়ার যোগাযোগের মূল সোপান ছিল পাক আর্মি অফিসার কর্নেল বেগ। যে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে কর্নেল বেগ কথা বলেছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
মোটা দাগে দেশদ্রোহী জিয়ার অপকর্মের কিছু পয়েন্ট নিচে তুলে ধরা হলো-
• মেজর জিয়া ছিলেন পাকিস্তানের সামরিক গুপ্তচর!
• যুদ্ধ চলাকালীন জেনারেল টিক্কার অনুসারী কর্নেল বেগের সঙ্গে মেজর জিয়ার সম্পৃক্ততা।
• পরস্পর যুদ্ধরত দুটি দলের দুইজন সেনার মাঝে বিশেষ যোগাযোগ ও পত্র বিনিময়।
• বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের সময় আকস্মিক নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান দাবি করেছিলেন মেজর জিয়া।
• বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে ধূর্ততার সঙ্গে জুনিয়র অফিসারদের ব্যবহার করে মসনদ হাসিল।
এ প্রসঙ্গে তৎকালীন পাকিস্তানের একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা এম আসগর খান বলেছিলেন, মেজর জিয়া খুবই ধূর্ত অফিসার ছিলেন। সে খুব দ্রুত জেনারেল টিক্কার চোখে পড়তে সক্ষম হয়েছিলেন। যখন পূর্ব পাকিস্তানের সকল বাঙালি সামরিক সদস্যদের পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় তখনও কিন্তু জিয়াকে পূর্ব পাকিস্তানেই রাখা হয় বিশেষ অ্যাসাইনমেন্টে। যা অনেকেই জানেন না। জুনিয়র জিয়াকে জেনারেল টিক্কা প্রচণ্ড বিশ্বাস ও স্নেহ করতেন। তাই তাকে অতিরিক্ত সুবিধাদি দিয়ে পাকিস্তানের সামরিক গুপ্তচর হিসেবে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সহ-অধিনায়ক করে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানো হয়।
এদিকে দেশবরেণ্য সাংবাদিক আবেদ খান রচিত অনবদ্য ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘ষড়যন্ত্রের জালে বিপন্ন রাজনীতি’র প্রতিটি পরতে পরতে শক্তিমান এই সাংবাদিক উন্মোচিত করেছেন অতীতের বহু জঠরের জঞ্জাল। ইতিহাসের একজন প্রত্যক্ষ রাজসাক্ষীর মতো লেখাটির বিভিন্ন পর্বে অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ড সংশ্লিষ্ট সেই শাপিত ষড়যন্ত্র, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি ব্যক্তি ও ঘটনা এবং তার পরবর্তী সময়ে অবরুদ্ধ বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক অজানা অধ্যায়ের আত্মপ্রকাশ দিয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে- ধূর্ত মেজর জিয়ার খোলসে আবৃত বীভৎসতা এবং এর সত্যতা প্রকাশের পাশাপাশি নীতিভ্রষ্ট এই সেনা কর্মকর্তাই যে ১৯৭৫ ও তৎপরবর্তী প্রতিটি কুকর্মের মাস্টার মাইন্ড; সেই বিষয়টিও তুলে ধরেছেন।
সম্প্রতি সেই বর্ণিত তথ্যগুলোর সত্যতা জানান দিতেই সামনে এসেছে বেশকিছু আলোচিত গোপন তথ্য। বিশেষ সূত্রের ভিত্তিতে প্রাপ্ত চাঞ্চল্যকর এই তথ্যাদি ও তাদের যৌক্তিক বিশ্লেষণে প্রাপ্ত দিক-নির্দেশনা অন্তত তাই বলছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিকামী বাঙালির নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা জাতি। বরাবরই বিভিন্ন প্রসঙ্গে বিতর্কিত একজন সেনা সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সেই স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজের অবদানের জন্য কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন সাবেক সেনা শাসক, রাজনৈতিক দল বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা- প্রয়াত মেজর জিয়া। কিন্তু এমন ‘দেশপ্রেমিক’ একজন সেনা সদস্য কেন পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সেনা ক্যু’র মাধ্যমে জাতির পিতাকে সপরিবারে (দুইজন ব্যতীত) নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় ইন্ধনদাতা হয়েছিলেন, তা অনেকের কাছেই একটি রহস্য। ধারণা করা হয়, বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রভাবে ক্ষমতালোভী হয়ে ওঠাই ছিল এর মূল কারণ।
সম্প্রতি বেশকিছু স্পর্শকাতর তথ্য ও গোপন নথি প্রকাশের প্রেক্ষিতে দেখা যায়, যুদ্ধ পরবর্তী বা ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গদোষে নয়, বরং পেশাদারিত্বের সঙ্গে শত্রুর সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য নিয়েই তাদের এজেন্ট হিসেবে পুরোদস্তুর একজন দেশপ্রেমিক ও কথিত মুজিব আদর্শের বীরযোদ্ধারূপে আবর্তিত হয়েছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান সেনা গোয়েন্দা সংস্থার অন্যতম চৌকস সদস্য মেজর জিয়া। এ সকল নথির মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময় জাগানিয়া প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করছে যুদ্ধকালীন ও তৎপরবর্তী বাংলাদেশের পক্ষে রণাঙ্গণে লড়াই করা, জেড ব্রিগেড কমান্ডার মেজর জিয়ার কাছে লেখা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্তব্যরত কসাই টিক্কা খানের অন্যতম বিশ্বস্ত অনুসারী কর্নেল বেগের একটি চিঠি। যার প্রেক্ষিতে তৎকালীন নানা ঘটনা ও প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতির যৌক্তিক বিশ্লেষণে সামনে আসছে ভয়াবহ তথ্য। যেখানে বলা হচ্ছে, দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা নয়, বরং পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্সের কুখ্যাত গুপ্তচর হিসেবে মিশনে এসেছিলেন জিয়া। যার লক্ষ্য ছিল, বঙ্গবন্ধুর একান্ত আস্থাভাজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং একান্তই যদি পাকিস্তান যুদ্ধ হেরে যায় সেক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলাদেশে যেন সমৃদ্ধির সূর্যোদয় না হয় তা নিশ্চিত করতে বাঙালির নিউক্লিয়াস খ্যাত বঙ্গবন্ধুকে নিস্তব্ধ করে দেয়া!
এরই ধারাবাহিকতায় জিয়া হত্যাকাণ্ডেরও একটি যৌক্তিক কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। প্রভুদের মিশন সম্পন্ন করতে আসা জিয়া নিজেই যখন প্রভুত্ব অর্জনের লিপ্সায় নিমজ্জিত হয়, তখনই প্রয়োজন ফুরিয়ে আসা মেজর জিয়াকেও নীরব করে দেয়া হয় বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই ক্ষমতামুখী লিপ্সাই মেজর জিয়ার বহু অতীত সত্যের পর্দা উন্মোচিত করছে বর্তমানে। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি অবশ্য বরাবরই তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবি করলেও এই দাবি যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, তা প্রমাণ হয়েছে বহু আগেই।
সম্প্রতি দুর্লভ এই চিঠি, সংশ্লিষ্ট উইকিলিকসের গোপন তথ্য ও সাবেক এক আইএসআই সদস্যের দেয়া তথ্যের প্রেক্ষিতে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও তৎপরবর্তী নানা প্রসঙ্গে অজানা সত্যের সমারোহ ঘটতে শুরু করে মেজর জিয়াকে ঘিরে। যার মধ্যে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হচ্ছে পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যের কারণেই জিয়ার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিকে আইএসআই-এর পর্যায়ক্রমে অর্থায়ন প্রসঙ্গটিও। বেশ কিছুদিন আগে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের মোটা অংকের সঞ্চিত অর্থের হিসাব এবং উৎস জানতে চাইলে ব্রিটিশ তদন্তকারী সংস্থাকে জানানো হয় যে, তার টাকা জুয়ায় উপার্জিত। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে আসলে দেশবিরোধী কত বড় জুয়ার আসরে তিনি মজেছেন।
বাবা মেজর জিয়ার উত্তরসূরি, আইএসআই এজেন্ট তালিকায় নাম ওঠানো তারেক জিয়া কোন সূত্রে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক নিরবছিন্ন রেখেছেন এবং তার মা খালেদা জিয়া কেন জামাতপন্থি রাজনীতির চর্চায় নিবেদিত ছিলেন, তার উত্তর মেলে সে সময় মেজর জিয়াকে লেখা পাকিস্তানি কর্নেল বেগের একটি চিঠির মাধ্যমে। সে সময় জিয়া-বেগ দ্বৈরথ চলার কথা ধুন্ধুমার, যেহেতু মেজর জিয়া ছিলেন একজন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা আর বেগ ছিলেন খুনি পাকিস্তানি জেনারেল টিক্কার ভৃত্য। অথচ বিস্ময়করভাবে তাদের মাঝে সে সময় অবিশ্বাস্যভাবে গড়ে ওঠা সমঝোতার ক্ষেত্রটিই অনেকাংশে স্পষ্ট করে তোলে জিয়ার মূল ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো।
চিঠিটি ১৯৭১ এর ২৯ মে লেখা। চিঠিতে তৎকালীন কর্ণেল বেগ, লিখেছেন, মেজর জিয়াউর রহমানকে। প্রথমেই চিঠির ভাষ্য পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করছি:-
Major Ziaur Rahman, Pak Army, Dacca
We all happy with your job. We must say, good job. you will get new job soon.
Don’t worry about your family. Your wife and kids are fine you have to be more
careful about major Jalil.
Col. Baig Pak Army
May 29. 1971
মেজর জিয়াউর রহমান, পাক আর্মি, ঢাকা
তোমার কাজে আমরা সবাই খুশি। আমাদের অবশ্যই বলতে হবে তুমি ভালো কাজ করছো। খুব
শীঘ্রই তুমি নতুন কাজ পাবে।
তোমার পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ো না। তোমার স্ত্রী ও বাচ্চারা ভালো আছে। তোমাকে
মেজর জলিল সম্পর্কে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
কর্নেল বেগ, পাক আর্মি
মে ২৯, ১৯৭১।
এক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, চিঠি লেখার সময়কাল বলছে, সে সময় হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রাণপণ যুদ্ধে লিপ্ত বাঙালিরা। স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতি মরণপণ সংগ্রাম করছে, চারদিকে অস্ত্রের ঝনঝনানি আর মৃত্যু। যেখানে মেজর জিয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টরের কমান্ডার, একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছেন। আর কর্নেল বেগ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অন্যতম কর্তা। সকাল-সন্ধ্যা বাঙালি নিধনের নির্দেশ দিচ্ছেন, ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করছেন। দুইজন সমর ক্ষেত্রে চরম প্রতিপক্ষ। অথচ কর্নেল বেগ বলছেন ‘তোমার কাজে আমরা খুশি।’ মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াকে শত্রু সেনাদের অন্যতম কর্তা কী এমন কাজ দিয়েছেন যে এতো রক্তক্ষরণ আর সম্ভাব্য পরাজায়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও খুশি ছিলেন কর্নেল?
এ অংশ থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন অকথিত অধ্যায়ের একটি বিশাল অংশ আলোতে আসে। এর মানে কি এই যে, দৃশ্যত জিয়া মুক্তিযুদ্ধ করলেও আসলে তিনি ছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন? আর তাতে তিনি সফল হচ্ছিলেন? আর সেটা যে অনেকাংশেই বাস্তব তা বোঝাতে বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময়ই তিলে তিলে খন্দকার মোশতাকদের ষড়যন্ত্রের জাল বোনা শুরু হওয়ার কথা আজ জাতি কিন্তু জানে। সে সময় পাকিস্তান সম্পূর্ণভাবেই মার্কিন কিসিঞ্জারের জাদুর কাঠির ইশারায় চলতো। আর শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ে গুপ্তচর ও আততায়ী ব্যবহারের ঘৃণ্য ও কাপুরুষোচিত রণকৌশলের জন্যে মার্কিনিরা সারা দুনিয়াতেই বেশ পরিচিত। যা থেকে বোঝা যায়, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে, বিশেষ করে ভারত ও রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সমর্থনের ফলে উৎকণ্ঠিত ও দোসরদের যুদ্ধজয়ে মরিয়া কিসিঞ্জারের আত্মমর্যাদা যখন বিবস্ত্র প্রায়, তখনই এমন গুপ্তচর প্রেরণের মাধ্যমে নোংরা ষড়যন্ত্রের চাল শুরু হয়। যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিশনে ছিলেন সম্ভবত জিয়া।
১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট ষড়যন্ত্রে মোশতাক চক্রের সঙ্গে জিয়ার যোগাযোগের কথাও জাতি জানে। কিন্তু যেটি এই চিঠি স্পষ্ট করে দিয়েছে তা হলো ‘মুক্তিযোদ্ধা’ জিয়া আসলে ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এজেন্ট। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রের অন্যতম অংশ ছিলেন মেজর জিয়া। মুক্তিযুদ্ধের সময়ই তাকে পাকিস্তানিরা ‘বিশেষ দায়িত্ব’ দিয়েছিল, যে দায়িত্ব তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করেছিলেন। ৭৫ এ জিয়ার ভূমিকায় যারা হিসাব মেলাতে পারেন না, তাদের জন্য এই চিঠি একটি বড় উন্মোচন।
এই চিঠি প্রমাণ করে, জিয়া কখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন না, তিনি ছিলেন পাকিস্তানের ‘গুপ্তচর’। আর এ কারণেই ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জিয়া মোশতাক চক্রকে সঙ্গে নিয়ে ইতিহাসের বর্বরোচিত এই ঘটনা ঘটান। এ কারণেই, ৭৫ এর পর জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধে আটকদের মুক্তি দিয়েছিলেন। এ কারণেই, জিয়া গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। এ কারণেই জিয়া আবার জামাতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। এ কারণেই জিয়া, চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন, দলে নিয়েছিলেন। এ কারণেই জিয়া রক্তে ভেজা আমাদের সংবিধান কাঁটাছেড়া করে রক্তাক্ত করেছিলেন। এ কারণেই জিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধুলিসাৎ করেছিলেন।
একই কারণে জিয়ার মৃত্যুর পরও ১৯৯১ এ ক্ষমতায় এসে বিএনপি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেনি। এ কারণেই বেগম জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতকে নিয়ে জোট করেছেন। এ কারণেই, ক্ষমতায় এসে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। এ কারণেই বেগম জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। প্রকাশ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ কারণেই তিনি জঙ্গি, মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন।
এই চিঠির যোগসূত্র আমরা পাই, পাকিস্তানের আদালতে দেয়া আইএসআই প্রধানের বক্তব্যে। কিছুদিন আগে আইএসআই প্রধান আদালতে এক লিখিত জবানবন্দিতে বলেছিলেন ‘বিএনপিকে আইএসআই নিয়মিত অর্থ দেয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, খালেদা জিয়ার একটি নিবন্ধ ‘ওয়াশিংটন টাইমস’ নামে একটি মৌলবাদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ওই নিবন্ধে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান প্রকাশ্যে ঘোষণা করে, এ ব্যাপারে তিনি মার্কিন হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অর্থাৎ জিয়া ‘গুপ্তচর’ হয়ে পাকিস্তানি আনুগত্যের যে বীজ বপন করেছিলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তা তখন মহীরুহে পরিণত হয়েছিল এবং তারেকের হাত ধরে সেটা অব্যাহত রয়েছে। এজন্যই জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব আর খালেদা-তারেকের হাহাকারের সঙ্গে চলেছিল মার্কিন তোড়জোড়- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকালে। এই চিঠির সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার নিবন্ধের যোগসূত্রও পাওয়া যায়। খালেদা জিয়া তার নিবন্ধের শুরুতে বলেছেন ‘১৯৭১ সালে প্রথম সারির জাতিগুলোর মাঝে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের আত্ম-সংকল্পের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।’ ৭১ এর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আমরা সবাই জানি। অনেকে মনে করতে পারেন বেগম জিয়া কীভাবে এই মারাত্মক ভুল করলেন। কিন্তু জিয়ার কাছে লেখা কর্নেল বেগের ৭১ এর চিঠি বলে দেয়, বেগম জিয়া যা লিখেছেন তা জেনে বুঝেই। ৭১-এ পাকিস্তানি হানাদারদের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল ইয়াহিয়ার নির্দেশে। ইয়াহিয়া খানের গুপ্তচর জিয়ার গড়া দলের নেত্রী বেগম জিয়া তাই মার্কিন ভূমিকার প্রশংসা তো করবেনই। একই কায়দায় তিনিও তো মার্কিন আগ্রাসনের আমন্ত্রণও জানাবেন।
সুভাষ সিংহ রায় আরো বলেন, এই একটি চিঠিই দিচ্ছে অনেক প্রশ্নের উত্তর, অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান। আর সেটাই বাস্তবতা। এরই ধারাবাহিকতায় হয়তো একদিন নিজ তাগিদেই এদেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা বুঝে নেবে, খালেদা জিয়ারা কখনো গণতন্ত্রের জননী হতে পারেন না, সেটা গণতন্ত্রের জন্য লাঞ্ছনা। তেমনি জামায়াত কখনও নাম বদলে নিলেও আমার বাংলাদেশের আপন হতে পারে না। আর তারেকরাও পারে না পূর্বসূরির পাপাচারের অনুসরণ না করে তা বন্ধ করতে। সেজন্যেই এদের দ্বারা পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ জাতির পিতাকে হত্যা করা সম্ভব হয়েছিল। সম্ভব হয়েছিল ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় জনকের শেষ রক্তবিন্দুটুকু বাংলার মাটি থেকে নিঃশেষ করে দেয়ার মত ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালানোর।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply