যশোর থেকে নিজস্ব প্রতিনিধঃ আমদানীকৃত ৩৯ ট্রাক পণ্যবাহী কাষ্টমস থেকে খালাস! প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ধ্বস। অপরদিকে চেকপোষ্ট কাষ্টমসে যাত্রি সেবার নামে চলছে হয়রানী ও উতকোচ আদায়। অবাক হলেও সত্য। এক বা দুটি নয় বেনাপোল স্থল বন্দর থেকে এক যোগে ৩৯ টি ট্রাক কোন ধরনের শুল্ক এবং পরীক্ষন ছাড়াই কি ভাবে খালাস হয়েছে এর কোন উত্তর এখনো পর্যন্ত মেলেনি।
একটি সিএন্ডএফ এর মাধ্যেমে ৩৯ টি ট্রাক পণ্য সহ নিরাপদে গন্তেব্য বেরিয়ে গেলো। ট্রাক গুলোতে আসলে কি ছিল? তা আজোও নিশ্চিত হতে পারেনি কাস্টমস কর্মকর্তারা। এমন গুরুতর বড় ধরনের শুল্ক ফাঁকি ও পণ্য বাহি ট্রাক নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনা আগে ঘটলেও এমন বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাটি ঘটে ২১ সালের ২৪ জুলাই শনিবার। যে বন্দর দিয়ে একজন সাধারন পাসপোর্ট যাত্রী যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া সীমানা পেরুতে পারেন না এমনকি একটি পিঁপড়া ও কাস্টমস নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের চোখ এড়াতে পারে না সেই বন্দর দিয়ে কি ভাবে সরকারের বিন্দুমাত্র রাজস্ব না দিয়ে কোন রকমের পরীক্ষন ছাড়াই এক সঙ্গে পার হয়ে গেল পণ্যবাহি ৩৯ টি ট্রাক।
সেই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি বেনাপোল কোন কাস্টমস কর্মকর্তারা। গত জুলাই মাসে এ ঘটনার বিষয়টি জাতিয় রাজস্ব বোর্ডের নজরে আসার পরও বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার কৌশল অবলম্বন করে। গত বছরের জুলাই মাসে এ ঘটনাটি ঘটায় বেনাপোল স্থল বন্দরের সিএন্ফ এজেন্ড রয়েল এন্টারপ্রাইজ। তারা পৃথক দুটি চালানের মাধ্যেমে ৩৯ টি ট্রাকে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করে। সেদিন ছিল ২৪ জুলাই শনিবার। সরকারের রাজস্ব পরিশোধ না করেই এমনকি আমাদনি সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র জমা না দিয়েই ৩৯ টি ট্রাক পণ্য একসঙ্গে পার করে নিয়ে যায়। ঘটনাটি জানাযানি এবং এ নিয়ে তোলপাড় হলে দুই দিন পরে রয়েল এন্টারপ্রাইজ এর মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল ১ কোটি ১০ লাখ টাকা শুল্ক পরিশোধ করে। বলা হয় ওই সব ট্রাকে আঙ্গুর, আপলে ও আনার, টমেটো ছিল। সেই হিসাবে আনুমানিক ন্যুনতম শুল্ক ১ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোদের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে ট্রাকটিতে কি ছিল কত ওজনের পণ্য ছিল সেটি কাস্টমস কর্মকর্তারা জানে না। এমনকি গুরুতর ও ভয়াবহ কাস্টমস ফাঁকির ঘটনা অফিসিয়ালি ফাঁস হয় শুল্ক পরিশোধের আরো এক দিন পরে। অর্থাৎ ঘটনাটির মোট তিন দিন পর। বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম ২৭ জুলাই গনমাধ্যমের কাছে গর্ব সহকারে প্রকাশ করেন যে বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি এবং কমিশনার যৌথ প্রচেষ্টায় ফাঁকি দেয়া রাজস্ব গত সোমবার ২৬ জুলাই সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বাধ্য করা হয় সিএন্ডএফ এজেন্টকে। তিনি গনমাধ্যমকে জানান, ২টি পণ্য চালানে কাস্টমস নং বি/ই সি ৪৮৬৮৩ও সি ৪৮৬৭০ সহ ৮টি বি/ই বিপরীতে কোন দলিলাদি কাস্টমস সিজিসি -৯ এ জমা না দিয়ে বন্দর থেকে বের করে নিয়ে যায়। এ জন্য রয়েল এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। যদিও এমন ভয়াবহ ঘটনায় লাইসেন্স বাতিল কোন শাস্তি মুলক ব্যবস্থাই নয়। কারণ সি এন্ড এফ মাফিয়া সিন্ডিকেটের সদস্যা প্রত্যেকেই বিভিন্ন নামে অনেকগুলো লাইসেন্স নিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কাগজপত্র জমা না দিয়ে পণ্য পরীক্ষন না করিয়ে শুল্ক পরিশোধ না করিয়ে পণ্যগুলো রয়েল এন্টারপ্রাইজ কি ভাবে নিয়ে গেলো কাস্টমস কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে, দায়িত্বশীল কাস্টমস কর্মকর্তারা আজো তার জবাব দিতে পারে নি। শুধু বলা হয়েছে আঙ্গুর, টমেটো, ও আনার ছিলো ট্রাকগুলোতে। ৩৯ টি ট্রাকে শুধু মাত্র আঙ্গুর টমেটো ও আনার ফল ছিলো। দামি বা বেশী শুল্কের অন্য কোন পণ্য ছিলো না। আমদানি নিষিদ্ধ কোন পণ্য ছিলো না, কতটা ওজনের ছিলো এবসব বিষয়ে নিশ্চিত হলেন কি ভাবে এর কোন ব্যখ্যা আজ কাস্টমস কর্তৃপ স্পষ্ট করেনি।
এব্যাপারে বেনাপোল কাষ্টমস কমিশনারকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিপ করেনি।এপ্রশ্নের জবাব এখনো মেলেনি। ওই সময় কাস্টমস এর অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম বলেন ৩৯ টি ট্রাক বের করে নেয়ার দায়ে রয়েল এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করা হয়েছে। তবে আবার জানা যাচ্ছে লাইসেন্স বাতিলের এক মাসের মধ্যে আবার রয়েল এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। শুল্ক ফাঁকি ঘটনা অহরহ ঘটছে বেনাপোল কাষ্টমস হাউজে।এদিকে কাষ্টমস হাউজে সি এন্ড এফ এজেন্ট লাইসেন্স ধারী ৩/৪ জন সচেতন দালাল সর্বক্ষন ফাইল ছাড় কাজ করার কাজে কমিশনার জেসি এসির রুমের আশপাশে ঘুরা ঘুরি করতে থাকে। বিশেষ করে তাদের যোগ সাজসে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে ব্যবসায়ী মহল ও গোপন সুত্রে জানা যায়।
ফলে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বন্চিত হচ্ছে। অপরদিকে চেকপোষ্ট কাষ্টমসে প্রতিদিন ঘটছে যাত্রী হয়রানী।ভারত থেকে আসা প্রতি যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে উৎকোচ। যারা উৎকোচ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তাদেরকে পন্য সামগ্রী চেকিংএর নামে ঘন্টার পর ঘন্টা হয়রানী করা হচ্ছে। এছাড়াও সম্প্রতি কাষ্টমস হাউজের ভোল্ট থেকে ১৯ কেজি স্বর্ন চুরির ঘটনায় এখনো পর্যন্ত তার কোন হদিস মেলেনি।কয়েকজন নিরীহ কর্মচারীর উপর জোর দায় চাপিয়ে একটি মামলা হয়কিন্ত তার সুরাহ আজও পর্যন্ত হয়নি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply