নিলামে মহাসড়ক বিক্রির ঘটনায় ভয়াবহ জাল-জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্তে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরসহ সরকারি চার সংস্থার কর্মকর্তাদের যোগসাজশের তথ্যও উঠে আসে। গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ারপর ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
রাজধানী উত্তরার আজমপুর এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের একটি অংশ বিক্রি করে দেন-উত্তরার আবুল হোসেন মুকুল। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের ডিএলআর মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, এর আগে ২০০৬ সালে তিনি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের কর্মকর্তা ইউনুস আলীর যোগসাজশে মহাসড়কটি নিজ নামে রেকর্ড করে নেন।
তদন্তে উঠে আসে, অধিদফতরের সেই কর্মকর্তা নিজ ক্ষমতাবলে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সরকারি সংস্থার দুটি দাগ থেকে ৪৮ শতাংশ জমি আবুল হোসেনের নামে রেকর্ড করে দেন। পরে এসব ভুল রেকর্ডের জমি নামমাত্র মূল্যে কিনে নেন গোলাম ফারুক নামের আরেক ব্যক্তি। তারপর ব্যাংক থেকে নেন ১৫ কোটি টাকার ঋণ। কিন্তু তদন্ত কমিটির প্যান্টাগ্রাফ ম্যাপ বলছে ভিন্ন কথা। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের ডিএলআর জানালেন, প্রকৃতপক্ষে ওই জমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নামে, তথা রাজউকের নামে অ্যাকোয়ার করা। এই জমি ব্যক্তি মালিকানায় যাওয়ার ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা নাই বলেও জানালেন তিনি।
দাগে গরমিল থাকলেও অধিগ্রহণের বাইরের জমি দেখিয়ে তৎকালীন এসি ল্যান্ড এস এম শফিক নামজারি করে দেন গোলাম ফারুককে। এরপর অস্তিত্বহীন দাগ আড়াল করতে ঢাকা জেলার সাব-রেজিস্ট্রার আরেকটি ভ্রমসংশোধন দলির করে দেন তাকে। সেটিও ছিল বড় ধরনের প্রতারণা।
তবে গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন ওই ক্রেতা গোলাম ফারুক। ভূমি রেকর্ড অফিস তদন্ত কমিটি গঠন করলে সেখানেও একটি আবেদন করেন গোলাম ফারুক। সেই আবেদন, গণমাধ্যম ও তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সব কারসাজির তথ্য। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর জানান, সুবিধাভোগী আবুল হোসেন ও গোলাম ফারুককে বেআইনিভাবে জায়গাটি দলিল করে দিয়েছেন আপিল অফিসার ইউনুস আলী। তাদের সবার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। জানালেন, কোর্টের নজরে গেলে কোর্ট এসব অবৈধ দলিল উইথড্র করে নেবেন।
বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা জানালেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান। তিনিও মনে করেন, তাদের সবার বিরুেদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের এল এল (আদালত) গোলাম ফারুকের নামজারি বাতিলের আদেশ বহাল রাখেন। অস্তিত্বহীন দাগের জমি কিনলেও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খানের সহায়তায় গোলাম ফারুক দখল করে নেন অন্যের জমি। যেটিতে এখনও ঝুলছে ব্যাংকের সাইনবোর্ড।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply