নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আনোয়ার হোসেন। যশোর শহরের ঘোপ জেল রোডের একটি ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয়তলায় আগে ছিলো নূর মহল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগোনস্টিক সেন্টার। নানা অনিয়মের কারণে স্বাস্থ্য বিভাগ অভিযান চালিয়ে এটি বন্ধ করে দেয়। এর কিছুদিন পর ক্লিনিক মালিক ডাক্তার মোজাম্মেল হক শুধুমাত্র সাইনবোর্ড পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করেন মাতৃসেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগোনস্টিক সেন্টার। কিন্তু ডাক্তার, আয়া-কর্মচারী সবাই একই ছিল, শুধু বদলে ছিল সাইনবোর্ড। চতুর ডাক্তার মোজাম্মেল শুধুমাত্র নতুন ওই নামে ক্লিনিকের আবেদন করে চালিয়ে যাচ্ছিলেন একের পর এক অবৈধ কর্মকা-। রোগীর জীবন নিয়ে খেলা করা হচ্ছিল।
যশোরের আলোচিত মাতৃসেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগোনস্টিক সেন্টার চতুর্থ দফায় বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল রোববার সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস ক্লিনিকএক অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে সিলগালা করে দেন। সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে যশোর শহরের ঘোপ জেল রোডেও আরো একটি ক্লিনিক বন্ধন। অনুমোদন ছাড়াই নানা অনিয়মে পরিচালিত হওয়ায় জন্য এই দুই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন সেবা প্রদান করায় বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। সিভিল সার্জন এবং ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক সহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা গন অংশ নেয়।
ক্লিনিক দীর্ঘদিন ছিল না লাইসেন্স, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, দক্ষ সেবিকা, প্যাথলজিস্ট ও পর্যাপ্ত অবকাঠামো গত সুবিধা। কেবল মাত্র এম বি বি এম পাশ ডাক্তার মোজাম্মেল হক সকল রোগের বিশেষজ্ঞ সেজে অসুস্থ রোগীর অস্ত্রপোচার করছিলেন। আর কথিত সেবিকা পিঞ্জিরা চিকিৎসক সেজে রোগীকে অজ্ঞান করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ ক্লিনিকে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি আসমা বেগম (৩২) নামে এক গৃহবধূ অপচিকিৎসায় মারা যান। এর পর সেখানে সিভিল সার্জন অভিযান চালিয়ে ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিন দিন পর ১৩ জানুয়ারি ক্লিনিক বন্ধের আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয় মাতৃ সেবা ক্লিনিক।
এরআগে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর যশোর নির্বাহী ম্যাজিস্টেট মাহামুদুল হাসান এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান এ নানা অনিয়মের কারণে মাতৃসেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করেন। এসময় মালিক ডাক্তার মোজাম্মেল হককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। এর আগে অক্টোবর মাসে লাইসেন্স বিহীন মাতৃসেবা ক্লিনিকে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এসময় ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহারের প্যাড এবং বিভিন্ন কাগজপত্র আগুনে পুড়ানোর পর মাতৃসেবা ক্লিনিকের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য বিভাগ।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে এ ক্লিনিকে ডাক্তার মোজাম্মেল হকের ভুল অস্ত্রোপচারে এক নারী মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় সিভিল সার্জনের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে নূর মহল ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল ও রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। একই বছরের ২ নভেম্বর নূর মহলের লাইসেন্স বাতিলের পত্র আসে সিভিল সার্জন অফিসে। পরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়।
সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানায়, গতকাল রোববার বেশ কয়েক ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করেন। এর মধ্যে মাতৃসেবা ও বন্ধন ক্লিনিকে অনিয়ম পাওয়ায় ক্লিনিক দুইটি সিল গালা করা হয়েছে। মাতৃসেবা ক্লিনিক অবৈধভাবে পরিচালনা করায় ৪ মাস আগে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু গোপনে তারা এতো দিন পরিচালনা করে আসছিলো। বলে বন্ধন ক্লিনিকের ওটি বিভাগ সিলগালা করা হয়েছে। অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে সরকারি নির্দেশনার অংশ হিসেবে এ ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply