নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পণ্য ওঠানামায় নতুন একটি টার্মিনাল যোগ হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের বহরে। যেখানে থাকছে পণ্যবাহী জাহাজ ভেড়ানোর তিনটি জেটি। এর মধ্যে একটি খোলা পণ্য এবং বাকি দুটি কনটেইনার পণ্য ওঠানামার জেটি। পাশাপাশি থাকছে তেল খালাসের বিশেষায়িত জেটিও। ২০০৭ সালের পর এই প্রথম কোনো জেটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহরে যুক্ত হচ্ছে।
আগামী ২১ জুলাই একটি খোলা পণ্যের জাহাজ ভেড়ানোর মাধ্যমে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরীক্ষামূলক চালু হবে। সফল হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি সাপেক্ষে সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে এই টার্মিনাল।
চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটি থেকে অনেক দূরে পতেঙ্গা বোট ক্লাব এবং চট্টগ্রাম ড্রাইডকের মাঝখানে ২৬ একর খালি জমিতে কর্ণফুলী নদীর পার ঘিরে এই পিসিটি টার্মিনাল নির্মিত হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ২০০৭ সালে এই নির্মাণকাজ শুরু হয়ে বেশ কয়েকবার সময় পেছানোর পর এখন সেটি চালু হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান গণমাধ্যমে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে এখন পণ্য ওঠানামার মোট ১৮টি জেটি আছে। নতুন চারটি জেটি যোগ হলে ২০ শতাংশ বাড়তি পণ্য ওঠানামা করা সম্ভব হবে। আমরা এখন ৪৯ শতাংশ জাহাজ অন-এরাইভাল বার্থিং দিচ্ছি। তখন বহির্নোঙরে জাহাজের অপেক্ষায় সময় আরো কমে যাবে। বেশি জাহাজ জেটিতে ভেড়াতে পারব। আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে খরচ সাশ্রয় হবে। ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশি অপারেটর দিয়ে টার্মিনাল পরিচালিত হলে এই টার্মিনালের গতি বাড়বে। পাঁচ লাখ একক কনটেইনার ওঠানামা সম্ভব হবে। তার আগ পর্যন্ত আমরা তিনটি জেটির দুটিতে ক্রেনযুক্ত কনটেইনার জাহাজ এবং একটি জেটিতে খোলা পণ্যের জাহাজ ভেড়াতে পারব।
দেরিতে হলেও পিসিটি চালুর উদ্যোগের প্রশংসা করে সি কম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, এটি ঠিক এই মুহূর্তে বন্দরের জন্য সুফল দেবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক দক্ষ অপারেটর দিয়ে পরিচালনা শুরু করতে পারলে দ্রুত সুফল মিলত। আর বন্দরে যে হারে পণ্য ওঠানামার প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, সে অনুপাতে তো জেটি তৈরি হয়নি। সরকার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তার সুফল পেতে বন্দর সুবিধা প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এত করে বলছি বে টার্মিনাল নির্মাণ শুরু করতে, কিন্তু অগ্রগতি নেই। ’
পিসিটির তিনটি জেটির দৈর্ঘ্য হচ্ছে মোট ৬০০ মিটার। এর বাইরে একটি ডলফিন জেটি আছে, যার দৈর্ঘ্য ২২০ মিটার। ৬০০ মিটার জেটির মধ্যে প্রতিটি জেটি ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের অর্থাৎ প্রতিটি জেটিতে ২০০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ ভিড়তে পারবে। বন্দরের মূল জেটিতে এখন সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার এবং সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারে। আর পিসিটিতে ভিড়বে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ। ফলে মূল জেটির চেয়ে পিসিটি সব দিক থেকেই এগিয়ে আছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম বলেন, পিসিটি অবস্থানগত কারণেও বাড়তি সুবিধা পাবে। এখানে বন্দরের ১৮টি মূল জেটির চেয়েও বড় জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। একটি জাহাজ বহির্নোঙর থেকে মূল জেটিতে পৌঁছতে ১৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। পিসিটিতে ছয় কিলোমিটার পাড়ি দিয়েই পৌঁছে যাবে। মূল জেটির চেয়েও কম সময়ে পিসিটিতে জাহাজ ভিড়তে পারবে। জাহাজ কর্ণফুলী চ্যানেল দিয়ে প্রবেশ করে পেরোতে হবে না সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটি। আর আমরা চাইছি প্রথম দিনই ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ জেটিতে ভেড়াতে।
২১ জুলাই খোলা পণ্যের জাহাজ দিয়েই পিসিটি পরীক্ষামূলক চালু হচ্ছে, কিন্তু কোন জাহাজ সেদিন ভিড়বে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আর পিসিটি পরিচালনা করবে বন্দরের মূল জেটিতে কর্মরত বর্তমান বার্থ অপারেটরই। বিদেশি অপারেটর নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তারাই ক্রমান্বয়ে কাজ করে যাবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply