ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: দিল্লিতে দূষণের মাত্রা এতো বেশি যে এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের শীর্ষ আদালতকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কেন প্রতি শীতে দিল্লি অঞ্চলে ধোঁয়াশা গ্রাস করে? সাধারণ বায়ু দূষণ ভারতের অর্ধেকেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা পোড়ানোর সাথে যুক্ত। দিল্লিতে, এটি লক্ষ লক্ষ গাড়ি থেকে নির্গমন এবং নির্মাণ শিল্পের ধোঁয়াগুলির সাথে মিলিত হয়, যার কোনও দূষণ নিয়ন্ত্রণ নেই।
দিল্লির কোন অংশ দূষিত?
জাতীয় রাজধানী জুড়ে বেশ কয়েকটি এয়ার মনিটরিং স্টেশনে AQI এখনও ৪০০ এর উপরে ছিল, যা “গুরুতর বিভাগের” অধীনে পড়ে। সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড (সিপিসিবি) অনুসারে, জাহাঙ্গীরপুরি এবং উজিরপুরে সর্বোচ্চ ৪৩৭ রিডিং রেকর্ড করা হয়েছে, তারপরে বাওয়ানা ৪১৯ , অশোক বিহার এবং মুন্ডকা ৪১৬ -এ রেকর্ড করা হয়েছে।
একটি ভাল AQI স্তর কি?
AQI মান ১০০ বা তার নিচে সাধারণত সন্তোষজনক বলে মনে করা হয়। যখন AQI মান ১০০ -এর উপরে থাকে, তখন বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর হয়: প্রথমে নির্দিষ্ট সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য, তারপর AQI মান হিসাবে প্রত্যেকের জন্য উচ্চতর হয়। AQI ছয়টি বিভাগে বিভক্ত।
দিল্লিতে Grap 4 বাস্তবায়িত হয়েছে?
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে দিল্লি সরকার এবং সিটি পুলিশ রাজধানীতে ভারী যানবাহন প্রবেশের বিষয়ে GRAP স্টেজ 4 বিধিনিষেধ কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত ১৩ টি প্রধান প্রবেশপথ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়েছে যাতে ভারী যানবাহন প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে।
দিল্লির দূষণে বেঁচে থাকা কি নিরাপদ?
দিল্লি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণের সঙ্গে লড়াই করছে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের কারণ উত্তর পশ্চিমের হাওয়া,যেটি রাজস্থানের থর মরুভূমির ওপর দিয়ে বয়ে তপ্ত আবহাওয়াকে টেনে আনে। শীতের সময় উত্তরী হাওয়া বইতে থাকে,যেটি হিমশীতল কাশ্মীর ও সিমলা থেকে আসে। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইতে থাকে। শীতল মাসগুলির বায়ুর গুণমান প্রতি বছর খারাপ হয়। বায়ুহীন দিন মানে কৃষি বর্জ্যের আগুন, কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং শহরের আকাশে ট্রাফিকের ঘোরাফেরা থেকে ধোঁয়াশা। কনকনে ঠান্ডা হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশা এবং ধোঁয়াশা মিলে বেলা বারোটা এমনকি একটা পর্যন্ত কিছুই দেখা যায় না। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। নাক, চোখ জ্বালা করে। ট্র্যাফিক বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ধোঁয়াশার অন্ধকারে ফগ লাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে গাড়ি গুলি চলতে থাকে। প্রচুর দুর্ঘটনাও ঘটে। ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। বিমান বন্দর থেকে সমস্ত ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করতে হয়।
এমন অবস্থা থেকে দিল্লিকে রক্ষা করতে সুপ্রীম কোর্ট কেন্দ্র এবং দিল্লি সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশের পর দিল্লি সরকার এগিয়ে আসে। মুখ্য মন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সমস্ত গাড়িকে চলাচলে খানিকটা কড়াকড়ি আরোপ করেন। বর্তমানে দিল্লির সকল গাড়িকে সিএনজি গ্যাস ব্যবহারের নির্দেশ পালন বাধ্যতামূলক করেন। সপ্তাহে তিনদিন অড নম্বর এবং তিনদিন ইভেন নম্বর গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অর্থাৎ তিনদিন শুধু অড নম্বর যুক্ত গাড়িই চলবে পথে। বাকি তিনদিন ইভেন নম্বর যুক্ত গাড়ি চলবে। একটি দিন সব গাড়িই চলবে।এরফলে যাত্রীদের অনেকটা অসুবিধা হলেও দূষণের স্তর অনেকটা নেমে এসেছে। এছাড়াও দিল্লির কোন পথের কোন ঠেলা গাড়িতে মোবাইল চুল্লি নিয়ে রান্নার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।তবুও দিল্লি এখনো ভারতের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত শহর।
দিল্লির পরে সবচেয়ে দূষিত শহর কোনটি?
দিল্লি আজ ভারতের সবচেয়ে দূষিত শহর। এরপর রাজস্থানের জয়পুর ;উত্তর পূর্বের মিজোরামের আইজল, অসমের গুয়াহাটি ইত্যাদি।
দিল্লিতে কোন মাসে সবচেয়ে বেশি দূষণ হয়?
দিল্লিতে নভেম্বর-“দ্য গ্রেট স্মোগ মাস”-এ বায়ু দূষণকারীর এপিসোডিক মাত্রা বেশি। দিল্লিতে বায়ু দূষণকারীর ঘনত্বও দীপাবলির সময় অনেক বেশি। তাই দীপাবলি উৎসব কালে বাজি পটকা ফাটানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়ে থাকে।
অন্যান্য রাজ্যে দিওয়ালি উদযাপন এবং ফসল পোড়ানো সহ পর্বের ঘটনাগুলির সময় এপিসোডিক মাত্র বৃদ্ধি পায়, যার ফলে দূষণের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply