December 14, 2024, 7:52 am

তথ্য ও সংবাদ শিরোনামঃ
বিএনপির তিন জেলার আহ্বায়ক কমিটি গঠন, পদ পেলেন যারা। ভারত থেকে বেনাপোল দিয়ে রেলপথে ট্রেনে এলো ৪৬৮ টন আলু। বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়রের অবৈধ দখল থেকে ৩০০ বিঘা খাস জমি উদ্ধার। মাদার তেরেসা গোল্ডেন এ্যাওয়ার্ড পেলেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সুমন অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠন ঢাকা মহানগর শাহ্আলী থানা শাখার উদ্যোগে কবিতা আবৃত্তি ও কবি আড্ডা অনুষ্ঠিত। ভালুকায় তারুণ্যের উৎসব সাংবাদিকদের কাজের জন্য বিপজ্জনক দেশের তালিকায় নাম এসেছে বাংলাদেশের। পাঠ্যপুস্তকে মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক জীবনী তুলে ধরতে হবে…..বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ মওলানা ভাসানীর ১৪৪তম জন্মবার্ষিকীতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন ভালুকায় চোরকে ধাওয়া করে ধরতে গিয়ে ছুরির আঘাতে যুবক নিহত। ভালুকায় এক ওড়নায় স্বামী-স্ত্রী সহ ৩ জনের আত্মহত্যা। সাংবিধানিকভাবে মওলানা ভাসানীকে স্বীকৃতি দিতে হবে ……..সাবেক ছাত্রনেতা কাজী ছাব্বীর প্রান্তিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় স্থানীয় সরকারের ভূমিকা। চলমান রাজনৈতিক অবস্থার সংকট ও সম্ভবনা প্রসঙ্গে ….এম এ আলীম সরকার বেকার সালাউদ্দিনের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রয়েছে বহুতল ভবন দুদক এর হস্তক্ষেপ কামনা। ওরা আমাকে বিবস্ত্র করে অত্যাচার করেছে, আমার শরীরের দাগ শুকায়নি। -নির্যাতিত সাংবাদিক সালাম আক্তার। ভালুকায় গায়ের জোরে জমি দখলের অভিযোগ। ভারতের জলসীমায় অবৈধভাবে মাছ ধরার অভিযোগে দুটি জাহাজ ও ৭৮ জন জেলেকে আটক করেছে ভারতের কোস্ট গার্ড। ময়মনসিংহ জেলা মালিক সমিতি ভালুকা উপজেলা শাখার কমিটি গঠন ভালুকায় বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে কলেজ ছাত্রদলের মানববন্ধন গাজীপুরের প্রবীণ সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাদামীর কবর জিয়ারত জুলাইয়ের গণঅভ্যূত্থানের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে মানবাধিকারের কোন বিকল্প নেই। -লায়ন মোহাম্মদ এরশাদ হোসেন রানা মানবন্ধনে বক্তারা : পৃথিবীতে মানবাধিকার যেন আজ কথার কথা মানুষের বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোটের অধিকার নিশ্চিতে ঐক্যের বিকল্প নাই” খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানের গাইড লাইন বিষয়ক আলোচনা সভা রেমিটেন্স যোদ্ধা রাসেল মাহমুদকে মুক্তি দিন : মানববন্ধনে গোলাম মোস্তফা ভালুকায় পুত্রবধুকে বাঁচাতে গিয়ে মারা গেলেন শ্বশুর ভালুকা মুক্ত দিবস উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত কৃষি ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলনের মানববন্ধন প্রশাসনে ফ্যাসীবাদী দোষররা এখনো লুকিয়ে আছে মট্স এর শিক্ষার্থীরা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে …. রিফাত মাহবুব সাকিব

নারায়ণগঞ্জের আরতি দেশ বিভাগের বলি বার ড্যান্সার।

নারায়ণগঞ্জের আরতি দেশ বিভাগের বলি বার ড্যান্সার।

দেশ বিভাগের বলি আরতির মিস শেফালিতে বিবর্তনরিফিউজি থেকে বার ড্যান্সার

মানস বন্দ্যোপাধ্যায় ভারত: একটা সময় ছিল যখন আমি কলকাতায় সাংস্কৃতিক সাংবাদিক হিসাবে রীতিমত সাড়া জাগিয়েছিলাম। সিনেমা, থিয়েটার,যাত্রা, নাচ,গান, বাজনা নিয়ে প্রায়ই বলিষ্ঠ লেখা লিখে চলেছি।চলচ্চিত্র জগতে উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, সুমিত্রা মুখার্জি, লিলি চক্রবর্তী, সন্ধ্যা রায়, ভানু ব্যানার্জি, জহর রায়, পাহাড়ী সান্যাল, অনুপ্ কুমার, তরুণ কুমার,সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কালী ব্যানার্জি, ছবি বিশ্বাস সকলের সঙ্গে গড়ে উঠেছিল এক আত্মীয়তার সম্পর্ক।যাত্রা জগতের স্বপন কুমার থেকে বীণা দাশগুপ্ত, কাবেরী মুখার্জি বেলা দেবী এবং সমস্ত যাত্রা জগতের মালিকরা আমাকে ভালবাসতেন, ভয়ও করতেন। এছাড়াও আমি নাচ গান, ও অনুষ্ঠান নিয়েও লিখতাম। প্রযোজক, পরিচালক , নায়ক ও মালিকদের শারীরিক,আর্থিক শোষণের শিকার হয়েছেন অসংখ্য গরীব ঘরের মেয়েরা। আমি এদের নিয়ে কলম ধরেছিলাম। শিল্পীরা আমাকে শিল্পী বন্ধু উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন।কিন্তু মালিক,প্রযোজক, পরিচালক, নায়করা হাড়ে হাড়ে চটে গিয়েছিলেন।এমনই একটা সময় আমার কলকাতার শীর্ষ দৈনিক পত্রিকার অফিসে বসে যখন একটি লেখা তৈরি করছিলাম,তখন একজন মহিলা কামরার পর্দা সরিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন,”আসতে পারি?”।অনুমতি দেয়ার পর তাকে বসতে বললাম। আগমনের কারন জানতে চাইলে,তিনি বলেন,”স্যার, আপনি সকলের জন্য লিখে যাচ্ছেন,তাদের দুঃখ, কষ্টর কথা তুলে ধরেছেন,কিন্তু হোটেল,রেস্টুরেন্টের, বার ড্যান্সার, সিঙ্গারদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন নি। ” আমার বিবেকে দংশন করলো কথাটি। আমি এরপর হোটেলে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে শুরু করলাম। প্রথমেই লিখছি বাংলাদেশের সেই মেয়েটির কথা। দেশ বিভাগের পর সর্বস্য খুইয়ে যারা পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছিল।তার মুখেই শুনুন সেই অশ্রুসজল কাহিনী ।

এক ‘নষ্ট’ মেয়ের গল্প…..“বাঙালি মেয়ে হয়ে হোটেলে নাচবে?” পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করেন তাকে।“ক্যান, আপনে আমারে খাওয়াইবেন? রাখবেন আপনার বাড়িতে? ঝি হইয়া কিন্তু থাকুম না, মাইয়ার মতো রাখতে হইব। তাইলে আমি হোটেলে নাচুম না।”

বারো বছরের মেয়েটি বার ডান্সারের লাইসেন্স নিতে গিয়েছিল কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তর লালবাজারে। সেখানেই এই কথোপকথন। যে বয়সে মেয়েরা বিনুনি বেঁধে স্কুলে যায় বা এক্কাদোক্কা খেলে সেই বয়সে একটা মেয়ে কিনা নাচনি হতে চায় ! উপায়টাই বা কি, পেটের জ্বালা যে বড় জ্বালা।

সন ১৯৪৭, ভাগ হয়ে  গেল একটা দেশ। আর তার সাথে ভাগ হয়ে গেলো দুটো প্রদেশ, বাংলা ও পাঞ্জাব। হাজার বছর ধরে পাশাপাশি বসবাস করা, একই ভাষায় কথা বলা লোকজন দেখলেন দুটো আলাদা দেশের মাঝে উঠে গেছে কাঁটাতারের বেড়া। শুরু হলো বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মহানিষ্ক্রমণ। একদিন যারা বৃষ্টিভেজা সবুজ গাছগাছালি ঘেরা কুটিরে বাস করতো শান্তিতে, তাদের ঠিকানা হলো রেল প্লাটফর্ম কিংবা অস্বাস্থ্যকর বস্তি অঞ্চলে। রাতারাতি তাদের পরিচয় হলো উদ্বাস্তু।

মেয়েটির নাম আরতি দাস। জন্ম পূর্ববাংলার নারায়ণগঞ্জে। ওপার বাংলা থেকে যেদিন বাবা মায়ের হাত ধরে কোলকাতায় আসে তখন বয়স এক বছরেরও কম। প্রথমে শেয়ালদা স্টেশনের ঝুগ্গী ঝুপড়িতে। তারপর একে ওকে ধরে আহিরীটোলায় মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই হলো। সামান্য যে সোনাদানা আনতে পেরেছিলো তা বেচে চললো কিছুদিন। তারপর মা বাবুদের বাড়িতে ঘর পোছা, বাসন মাজার কাজ,আর বাবা এক দোকানে কাজ নিলো। সামান্য আয়ে পাঁচটা পেট চালানো মুস্কিল। এরকম আধপেটা খেয়ে দিন চালানোর বিরুদ্ধে আরতি বিদ্রোহ করে বসলো একদিন। দুদিন ঘোরাঘুরি করে এক এ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবারের কাজ জুটিয়ে নেয়। বয়স তখন তার মাত্র এগারো।

এই এ্যাংলো পরিবারে প্রায় সন্ধ্যায় রেকর্ড প্লেয়ারে গান চালিয়ে  উদ্দাম নাচানাচি হতো। পাশের ঘরে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আরতি দেখতো, চেষ্টা করতো তাদের নাচ নকল করতে। সে বাড়ির পার্টিতে নিয়মিত আসতন ভিভিয়েন হ্যানসেন, পার্ক স্ট্রিটের ‘মোক্যাম্বো’ রেস্তরাঁর এক গাইয়ে। তার চোখে একদিন ধরা পড়ে গেল আরতির প্রচেষ্টা। তাকে নিয়ে হ্যানসেন গেলেন চৌরঙ্গির ‘ফারপোজ’-এ। হ্যানসেনের সুপারিশে মাসিক সাতশো টাকা বেতনে কাজ পেলো আরতি। সাদা চামড়ার মেয়েরা তখন দেশ ছেড়ে যাওয়ায় হোটেলে বার ডান্সারের তীব্র অভাব দেখা যায়। কাঠখড় পুড়িয়ে হাতে এসেছিল লাইসেন্স। প্রতি রাতে বার-নর্তকী হওয়ার ছাড়পত্র। দর্শকদের সামনে আসার আগে চলেছে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ।

সেই প্রশিক্ষণের  সময়ই দেওয়া হয়েছিল পোশাক যা পরে তাকে প্রতি রাতে নাচতে হবে। দেখে অঝোরে কেঁদেছিল মেয়েটা। এতটা নিরাবরণ হয়ে আসতে হবে রাতের আসরে! ধীরে ধীরে একদিন সেই লজ্জাটুকু ভুলে গেলো, মন দিলো অনুশীলনে। প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে একদিন উদ্বাস্তু আরতি দাসের পায়ে উঠে এল ক্যান ক্যান, চার্লসটন, টুইস্ট, হাওয়াইয়ান হুলা এবং বেলি ডান্স। হোটেল থেকে নাম রাখা হয় শেফালি, মিস শেফালি। জৌলুসময় এক ক্যাবারে ড্যান্সারের আড়ালে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জে জন্ম নেওয়া আরতি নামের সাদামাটা মেয়েটা।

ফিরপোজ হোটেলের পর থেকে আর কখনোই পিছু ফিরতে হয়নি শেফালিকে। সেখান থেকে ওবেরয় গ্রান্ড, সতেরো বছর ধরে প্রতি রাতে নেচেছেন, আনন্দ যুগিয়েছেন পুরুষের পিয়াসু দৃষ্টিকে। রাতের কলকাতা তখন সম্মোহিত তাঁর নামে। তার মাঝেই এল সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ফিল্মে কাজ করার সুযোগ। নামের পাশে বসল ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ এবং ‘সীমাবদ্ধ’তে কাজের অভিজ্ঞতা। বড় পর্দায় অভিনয়ের পাশাপাশি এল থিয়েটার। তরুণকুমারের উদ্যোগে মঞ্চেও দেখা গেল মিস শেফালিকে। প্রতাপ মঞ্চে নাটক “বারবধু” হাজার রজনীর ওপর চলেছে শুধু তার নামে।

অর্থ সাফল্য সবকিছু পেলেও পাননি সামাজিক স্বীকৃতি বা নারীর মর্যাদা। বিনোদন জগতের অনেক নামকরা মানুষ এসেছিলো জীবনে, কিন্তু তাদের চোখে দেখেছিলেন শুধু লাম্পট্য। বার ড্যান্সার বলে অনেক শিল্পীই যে তাঁকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো, উপেক্ষা করতো, সেটাও তিনি অকপটে স্বীকার করে গেছেন তার আত্মজীবনী ‘সন্ধ্যা রাতের শেফালি’তে। নিঃসংকোচে সেখানে লিখেছেন,  “হোটেল নাইট ক্লাবে নাচি বলেই আমি খারাপ মেয়ে হয়ে গেলাম? ওপার বাংলা থেকে এক কাপড়ে পালিয়ে আসা একটা রিফিউজি পরিবারের দু’বেলা ঠিকমতো খেতে না পাওয়া একটা মেয়ে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায়, কী কষ্ট করে, কী পরিশ্রম করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা তাঁরা কেউ দেখতে পেলেন না? একলা মেয়েটার লড়াইটা ওঁদের চোখ এড়িয়ে গেল? এমনকি সিনেমা জগতে যারা বামপন্থী বলে পরিচিত তাঁরাও কেউ  আমার পরিশ্রম, আমার লড়াইটা দেখতে পেলেন না!”

ঘর সংসারের মতো অধরা থেকে গেল ‘শিল্পী’ পরিচয়ও। আরতি দাস নৃত্যশিল্পী নন। অভিনেত্রী নন। তিনি শুধুই মদিরা-আসরের ‘মিস শেফালি’। পরিচয় নিয়ে আক্ষেপ ছিল না। আক্ষেপ ছিল স্বীকৃতি না পাওয়া নিয়ে। একরাশ অভিমান বুকে  নিয়ে  চলে গেলেন তারাদের দেশে  যেতে অন্তত কোন সামাজিক স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না!

আমাদের প্রকাশিত তথ্য ও সংবাদ আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)

Design by Raytahost.com