বিশেষ প্রতিবেদনঃ পারিবারিক ভাবে আমার জন্ম একটি প্রভাবশালী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে। প্রভাবশালী বলার কারণ, আমার বাবা এবং চাচারা সাত ভাই, তাদের পাঁচ ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন হাওলাদার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শুরু থেকেই ২নং সেক্টরের যুদ্ধ ট্রেনিং ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। আমার আরেক চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল আলম রব, বাবার ক্যাম্পে থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে চাঁদপুরে ২নং সেক্টরের অন্তর্গত ৪নং সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। আর অন্যান্য চাচারা তার সঙ্গে থেকে চাঁদপুরের সকল থানাগুলোতে অনেক বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। আমার পরিবার যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ এর পটপরিবর্তনের পরে অনেক জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। রব কাকা ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকার এরশাদের নির্যাতনে স্বপরিবারে আমেরিকা চলে যান, কারণ তার উপরে সামরিক সরকারের তীব্র ষড়যন্ত্র ছিল, তিনি আমেরিকা পালিয়ে গিয়ে বেঁচে গেছেন। আর এদিকে আমাদের পুরো পরিবার ছিল তৎকালীন সামরিক সরকারের বন্দুকের নলের মাথায়। এর পরে আমার পরিবারের কেউ জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়নি। শুধুমাত্র এই পরিবারের একমাত্র আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত সম্পৃক্ত থেকে রাজপথের একজন প্রতিবাদী ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। ৯০ এর গণ অভ্যুথান অতঃপর খালেদা হটাও আন্দোলনে ঢাকার রাজপথ দাপিয়ে বেড়িয়েছি। কিন্তু যখন আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে তখন আর আমি এর ফল ভোগ করতে পারিনি। পেশাগত কারণে ব্যস্ত হয়েপরি। আর এদিকে আমার পরিবার জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি বৃহৎ সাংগঠনিক কাঠামো ধরে রাখেন। আমি আমার চাকরিজীবনের সমাপ্তি নিজ থেকেই ইতি টেনে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মনোনিবেশ করলাম। রাজনীতির নেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার লখ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠনের সঙ্গে সপৃক্ততা শুরু করলাম। ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন “বাংলাদেশ প্রজন্ম সংসদের” কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব নিলাম। এরপরে চলছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম। আমি সারা বাংলাদেশের বেশিরভাগ জেলাগুলোতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নিয়ে কথা বলেছি। তখন দেখেছি যে, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড বলতে সবাই এক ডাকে মেহেদী হাসানকে চিনে। ভালো মন্দ মিলিয়েই মানুষ। মেহেদী হাসানের অনেক দোষ এবং গুনের কথাও শুনলাম। কিন্তু আমি তখনও তাকে চিনিনা। এরপরে আমি এবং আমাদের সংগঠনের সভাপতি ওয়ালিউর রহমান সহ আমাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রায় ৩৫/৪০ জন নেতা কর্মী নিয়ে মগবাজার মুক্তিযোদ্ধা সংসদে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড মেহেদী হাসানের একক নেতৃত্বে চলছে। প্রথমে মেহেদী হাসান আমাদের তেমন কোনো পাত্তা দিচ্ছেন না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সংসদে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমত কাদির গামা আমাদের বেশ স্নেহ ও গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। আমরা হেলাল ও মতিন সাহেবের সঙ্গে আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা করলাম। মতিন সাহেব বললেন আমাদের তিনি মেহেদী হাসানের সঙ্গে এক সাথে করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ডের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক করে দিবেন। কিন্তু তখন দেখেছি যে মেহেদী হাসান এই বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না, এবং তখন এমনও দেখেছি যে, মেহেদী হাসান হেলাল মতিনের একছত্র অন্ধ ভক্ত ছিল, আমি যেদিন মুক্তি যোদ্ধা সংসদে প্রথম গিয়েছি সেদিনই আচকরতে পেরেছিলাম যে এখানে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। কিন্তু তখন মেহেদী হাসানের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা বলা যায়নি। তিনি হেলাল মতিনের অন্ধ ভক্তে পরিণত হয়েছিলেন। অতঃপর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমরা আমাদের সংগঠন “বাংলাদেশ প্রজন্ম সংসদ” নিয়ে অংশগ্রহণ শুরু করলাম। তখন মুক্তিযোদ্ধা সংসদে সন্তানদের মধ্যে লিস্টেড ২ টি প্যানেল হলো, একটিতে মেহেদী গ্রূপ এবং অন্যটিতে ওয়ালী গ্রূপ। আমি ওয়ালী গ্রূপের সঙ্গে ছিলাম। তখন আমরা এই দুইটি গ্রূপ মিলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর অনেক প্রোগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি। সেই সময়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য আমাদের সন্তানদের যে কিঞ্চিৎ বাজেট বরাদ্দ হতো তা মেহেদী গ্রূপ ও ওয়ালী গ্রূপের মধ্যে সম বন্টনের মাদ্ধমে হতো, এইযে এতো কিছুর বর্ণনা দিলাম এই জন্য যে, তখন আমি আতিক বাবু নামে কাউকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তানদের নেতৃত্বে পাইনি বা দেখিওনি। হঠাৎ একদিন জানলাম আতিক বাবু নামে কোনো একজনকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডার এর সভাপতি করে নতুন একটি কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আমি তখন তার সম্পর্কে জানার জন্য সংসদে গেলাম। সেখানে গিয়ে গামা কাকার সঙ্গে অতিক বাবু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি উচ্চস্বরে বলেন!
“ও কিসের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। ওর বাবা কোনোদিন মুক্তিযোদ্ধা ছিলোনা। ১৯৭১ এ ওর বাবা রাজাকারের ভূমিকায় ছিল! মুক্তিযোদ্ধারা ওর বাবাকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। ও কিভাবে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করে। বাবু হেলাল মতিনকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে ও এখানে ঢুকেছে।”
এই বক্তব্যের পরে আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা যে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এই সংসদে হেলাল মতিন কি দুর্নীতি করেছেন!
আর একজন অ-মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আতিক বাবু কোন প্রক্রিয়ায় এখানে অনুপ্রবেশ করেছে।
এখানে আমার অভিমত হলো, যেখানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের মূল নেতৃত্বে মেহেদী হাসান সহ আমাদের প্যানেল থাকার কথা ছিল, কিন্তু দুর্নীতিবাজ হেলাল মতিন আতিক বাবুর টাকা খেয়ে এমন অনৈতিক কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা করেছে। যাহা আমাদের মতো বনেদি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য গাত্রদাহ। আমি ব্যক্তিগতভাবে এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
জাতির পিতার দুর্নীতিমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে
আমরা অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মরণপণ যোদ্ধা।
বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
মোহাম্মদ আহসান হাবীব
প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর
দুরন্ত সত্যের সন্ধানে (দুসস)
মোবাইল ফোন : ০১৯১১৭০২৪৬৩1
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply