নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজধানীর মিরপুর-১ এর হযরত শাহ্ আলী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনের কারণে ব্যাহত হচ্ছে কলেজটির প্রশাসনিক কার্যক্রম। নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে কলেজের প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর স্বাক্ষর জালিয়াতিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, নিয়মবহির্ভূতভাবে ছাত্রীদের কমনরুমে স্থাপন করেছেন সিসি ক্যামেরা! অভিযোগ রয়েছে গত ৬ বছরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ফি বাবদ ‘পরীক্ষা কেন্দ্র তহবিল’ নামের একটি ব্যাংক এ্যাকাউন্টে থাকা ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন তিনি। এই বিতর্কিত অধ্যক্ষকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কলেজের এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (সিইডিপি) আওতায় কম্পিউটার ল্যাব, শ্রেণীকক্ষ পুর্নসজ্জাকরণসহ কয়েকটি কাজে কেনাকাটায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার সার্কেলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমানের স্বাক্ষর মেজারমেন্ট বুকে জাল করে অসদুপায়ে বিভিন্ন কেনাকাটা করেন অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন। যা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান।
লিখিত এক বক্তব্যে মোঃ মিজানুর রহমান অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনকে বলেছেন, আপনার প্রতিষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি) এ ব্যবহৃত সিল ও স্বাক্ষর আমার না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
অভিযোগ পাওয়া যায়, অন্যান্য হিসাবের তথ্য অধ্যক্ষ ময়েজউদ্দিন লিখিতভাবে উপস্থাপন করলেও কলেজের ‘পরীক্ষা কেন্দ্র তহবিল’ নম্বর ০১৪৪১২১০০০১৮৫৬১, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, দারুস সালাম রোড শাখার হিসাবের তথ্য প্রদর্শন করেননি। ২০১৩ সালে করা এই ব্যাংক হিসাবটিতে ৬ বছরের ব্যবধানে অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫ লাখ টাকার উপরে। যার অন্তত ১০ শতাংশ কলেজ ফান্ডে জমা দেয়ার কথা থাকলেও অধ্যক্ষ তা করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক শিক্ষক বলেন, এর কারণ হিসেবে অধ্যক্ষ বলেছেন ‘পরীক্ষা কেন্দ্র তহবিল’ নামের হিসাবটি তার একক স্বাক্ষরে পরিচালিত। যা পুরোপুরি অযৌক্তিক।
বরং কলেজ গবর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বহিঃপরীক্ষার আয়ের ১০ শতাংশ কলেজ ফান্ডে জমা না করে সব টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ সম্পর্কে ময়েজ উদ্দিন চাতুর্যপূর্ণ জবাব দিয়েছেন। তবে তিনি যে নির্দিষ্ট তারিখের পর বহিঃপরীক্ষার আয়ের ১০ শতাংশ কলেজ ফান্ডে জমা করেননি তা স্বীকার করেছেন। ক্যাশ বইতে ২০১৮ সালে মাত্র ৮ হাজার ৪০০ টাকা এবং ২০১৯ সালে মাত্র ৮ হাজার টাকা আয় দেখানো হয়েছে। অথচ এই দুই বছরে অনেক পরীক্ষা হয়েছে।
এমনকি গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনএসআইর জনবল নিয়োগ পরীক্ষাসহ আরও কয়েকটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেসব পরীক্ষার কোন টাকাই কলেজ ফান্ডে জমা করেননি ময়েজ উদ্দিন। অভিযোগ পাওয়া যায়, অসাধু উদ্দেশ্যে ময়েজ উদ্দিন ছাত্রী কমনরুমে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন। এর কারণ দর্শাও পত্রের জবাবে তিনি বলেছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টেকনেশিয়ান ভুলক্রমে ছাত্রী কমনরুমে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছিল। এবং কোভিড-১৯ ছুটি পরবর্তী শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর আগে এই সিসি ক্যামেরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টেকনেশিয়ান শেখ এন্টারপ্রাইজের পক্ষে মাসুদ রানা এবং আব্দুল্লাহ মোড়ল লিখিত আকারে জানিয়েছেন, অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ছাত্রী কমনরুমসহ সব সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।
এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ পাওয়া যায়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র নিয়েও তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে কলেজের পিওন, সিকিউরিটি গার্ড এবং কলেজের অধ্যক্ষদের স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনদের দিয়ে গার্ড দিয়ে থাকেন। তাহাদের অনৈতিক আচরণে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া ওই সকল শিক্ষার্থী পরীক্ষার্থীরা অতিষ্ট। এছাড়াও যে সকল পরীক্ষার্থীরা অর্থের বিনিময়ে অধ্যক্ষকে ম্যানেজ করতে পারে তাদের জন্য রয়েছে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আলাদা বিশেষ রুমের ব্যাবস্থা। এই কলেজে অন্য কলেজ থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের সাথে করাহয় অনমনীয় রুক্ষ আচরণ। পরীক্ষার্থীদের এমআরআই সিট প্রদান করা হয় পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে। অথচ এই সিটটি পুরণ করতে পরীক্ষার্থীদের চলে যায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এই সময়টিও পরীক্ষার সময়ের সাথে কাউন্ট করে নেয় ওই সকল পিওন দারোয়ান সহ ঘরোয়া পরিক্ষার গার্ডরা।
কলেজের মালিকানাধীন শাহ্ আলী কলেজ শপিং কমপ্লেক্সের দোকানের জমিদারি ভাড়া আদায়েও নানা ধরনের প্রতারণা করেছেন তিনি। ভাড়া আদায়ের রসিদে কলেজের অংশে অর্থের পরিমাণ এক লিখেছেন আবার দোকানের ভাড়াটিয়াদের কাছে আরেক পরিমাণ লিখে বাড়তি অর্থ নিজে আত্মসাত করেছেন। এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও এর সপক্ষে তাৎক্ষণিক কোন প্রমাণ দেখাতে পারেননি অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন। বরং তিনি, দাবি করেছেন সব দলিল দস্তাবেজ অফিসের লকারে সংরক্ষিত রয়েছে। যার কোন ভিত্তি নেই বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply