ফারুক খান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষহয়ে যুদ্ধেলিপ্ত ২৪ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়নের একজন সক্রিয় জুনিয়র কর্মকর্তা ছিলেন।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা ফারুক খান স্বাধীনতার ৫০ বছর পর হঠাৎ করে বেসামরিক গেজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন! ফলে মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। কলঙ্কিত করা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস।
ফারুক খান একজন জাতীয় ব্যক্তিত্ব। বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাঁর সরব উপস্থিতি, তিনি নিজেকে কোনোদিনই মুক্তিযোদ্ধা বলে উপস্থাপন করেননি, সর্বজন জ্ঞাত। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাননি, মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয়মাস ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। কারো মতে তিনি পাকিস্তানে আটক ছিলেন, কারো জানা মতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ভারতের বিপক্ষে পাক-ভারত সীমান্তে যুদ্ধ করেছেন। তাঁকে নিয়ে রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। এতেকরে সচেতন নাগরিক মহল তাঁর পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, শুভানুধ্যায়ী ও তাঁর সংসদীয় এলাকার জনসাধারণ চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এহেনো পরিস্থিতিতে মনেহয় তিনিও মানসিক অশান্তির মধ্যে রয়েছেন।
ফারুক খান বলেছেন, আমি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়ে ১৯৬৯ সালের মে মাসে দুই বছরের প্রশিক্ষণের জন্য পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমী, এবোটাবাদে যোগদান করি। তথ্য মতে যাহা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রেকর্ডে সংরক্ষিত আছে।
তথ্য মতে জানা যায়, ফারুক খান পাকিস্তানে 44 PMA Long Course থেকে commission পেয়ে 2nd. Lieutenant পদে এপ্রিল ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দে 24 Punjab Battalion-এ যোগ দেন। ৩ ডিসেম্বরে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে পশ্চীম পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে 24 Punjab-এর সাথে যুদ্ধে নিয়জিত থাকেন। ১৬ ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যুদ্ধ-বিরতি ঘোষনা করে।
স্বাধীনতার পর পাকিস্তানে আটকে পড়া অন্যান্য সামরিক বাহিনীর সদস্যরা দেশে ফিরে এলে তাদেরকে চাকরির ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে চাকরিতে আত্তীকরণ করা হয়। সে প্রেক্ষিতে ফারুক খানের চাকরি East Bengal এ ন্যস্ত করা হয়।
উল্লেখ্য তথ্য অনুযায়ী ফারুক খান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরম বন্ধু ভারতের বিপক্ষে যুদ্ধে লিপ্ত ২৪ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়নের একজন জুনিয়র কর্মকর্তা!
তর্কের খাতিরে যদি কেউ বলেন যে, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কোনো বিশেষ কারণে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তিনি অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। এ যুক্তি সঠিক নয়। সামরিক ও বেসামরিক সব মুক্তিযোদ্ধা চেইন অব কমান্ড অনুযায়ী যে যার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তাদের তালিকা সামরিক হলে সেনা গেজেটে, আর বেসামরিক হলে বেসামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফারুক খান ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকলে হতেন সেনা গেজেটের মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু সেনা গেজেটে তার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি। মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না বলেই তো স্বীকৃতি মেলেনি। এভাবে কেটে গেছে সুদীর্ঘ ৫০ বছর।
ইতোমধ্যেই তিনি জাতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। সেই প্রভাব খাটিয়েও তিনি সেনা গেজেটে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়ে সম্প্রতি জামুকার চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী একজনের সহযোগিতায় তিনি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বেসামরিক গেজেটের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ বলে স্বীকৃতি লাভ করেছেন! ফলে ফারুক খানের মুক্তিযোদ্ধা হওয়াটা কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা বা সচেতন দেশবাসী মেনে নিতে পারছেন না, বিষয়টি আপত্তিকর।
ফারুক খানের উচিত ভুল স্বীকার করে তার বেসামরিক “মুক্তিযোদ্ধা” গেজেট প্রত্যাখান করা, অথবা তিনি যদি সত্যিকার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকেন, তাহলে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি নিয়ে তাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার ক্ষেত্রে জনসমক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনে অবতীর্ণ হয়ে সব বিভ্রান্তি, বিতর্ক ও বিব্রতকর পরিস্থিতির অবসান ঘটানো উচিত বলে সচেতন মহল মনে করেন।
মোহাম্মদ আহসান হাবীব, ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, দুরন্ত সত্যের সন্ধানে-দুসস
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply