নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের বিষয়ে গত ২৮ মার্চ শুনানি শেষ হয়েছে। এরপর রায় ঘোষণার জন্য ৩০ মার্চ দিন ঠিক করে আদালত। ওইদিন রায়ের তারিখ পিছিয়ে ৪ এপ্রিল নতুন দিন ধার্য করা হয়। তবে এদিনও রায় ঘোষণা করেননি হাইকোর্ট। এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২ মে পুনরায় দিন ধার্য করেছেন আদালত।
৪ এপ্রিল ২০২৩ মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মোঃ বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এদিন ঠিক করেন। আদালতে আজ জাহাঙ্গীরের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এম কে রহমান ও ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মোঃ রাসেল চৌধুরী। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার গোলাম সারোয়ার পায়েল। সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম।
শুনানিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র দাখিলের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে তা দেখবেন বলে মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করেছেন হাইকোর্ট।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট জাহাঙ্গীরের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন।
আদালত রিটের রুলের পরবর্তী শুনানি ও রায়ের জন্য আগামী ২ মে পরবর্তী দিন ধার্য করলে জাহাঙ্গীরের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, এর মধ্যে তো আগামী নির্বাচনের মনোনয়ন জমার সময় শেষ হয়ে যাবে। ফলে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র দাখিলের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
তখন হাইকোর্ট বলেন, যেহেতু ৬ এপ্রিল থেকে সুপ্রিম কোর্টের ভ্যাকেশন শুরু, এটি শেষ হবে ৩০ এপ্রিল। তাই আমরা পরবর্তী শুনানি ও রায়ের জন্য ২ মে দিন রাখছি। তবে শুনানির ধারাবাহিকতায় রায় ৩ মে তারিখেও যেতে পারে। এরপর আর রায়ের দিন পরিবর্তন হবে না। এদিকে, আজকের রায় ঘিরে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাহাঙ্গীরের পক্ষে কয়েক হাজার সমর্থক উপস্থিত হন।
গত বছরের ২৩ আগস্ট গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মোঃ আক্তারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
স্থানীয় সরকার সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। শুনানিতে ওইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জাহাঙ্গীর আলমকে যেসব অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও চলমান।
রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, জাহাঙ্গীর আলমকে যে অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আগেও একই অভিযোগ আনা হয়েছিল। তখন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পায়নি।
গত বছরের ১৪ আগস্ট গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া জাহাঙ্গীর আলম পদ ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে তাকে সাময়িক বরখাস্তের আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। ব্যারিস্টার মশিউর রহমান সবুজ জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে এ রিট করেন।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করার অভিযোগে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়া জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওইদিন নিজ দপ্তরে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকটি অভিযোগ আছে। কোথাও অবৈধভাবে জায়গা দখল করা, জনগণের স্বার্থ পরিপন্থি কাজ করা ও কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন তাকে সেখানে অবকাঠামো ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোর-জবরদস্তি করা এসব অভিযোগ আছে।
আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, সেখানে মেয়রদের প্যানেল গঠন করা হয়েছে। মেয়রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে কেন্দ্র করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply