আনোয়ার হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ যশোরে ডেভিল ডেথ বা রাসায়নিক দ্রব্য শয়তানের নিঃশ্বাস নামে একটি আন্তর্জাতিক প্রতারকচক্রের ৫ সদস্যকে আটক করেছে যশোর ডিবি এবং অভয়নগর থানা পুলিশ। এই প্রতারকচক্রের মধ্যে তিন জন ইরান দেশের নাগরিক রয়েছে। মূলত ওই ইরানী নাগরিকরাই এই প্রতারকচক্রের সদস্য। তাদের সাথে দুইজন বাংলাদেশি সহযোগী হিসাবে কাজ করেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। যদিও বাংলাদেশি দুইজনের বলে তারা প্রাইভেটকার ভাড়া দিয়ে থাকে। ইরানী ওই চক্রটি তাদের প্রাইভেটকার নিয়ে প্রতারণা করে বেড়ায়।
গতকাল সোমবার দুপুরবেলা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান যশোর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) বেলাল হোসাইন। সাথে ছিলেন ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার এবং অভয়নগর থানার উপপরির্দশক বিমান তরফদার।
আটক ৫ জনের মধ্যে ইরান দেশের নাগরিক তিনজন হলো, খরাজগহরদস্ত জেলার বল ইন গাভ কে. ইনফানিয়ারীর ৬ নম্বর ব্লকের নাদের মাহবুবীর ছেলে খালেদ মাহাবুবী (৫৪), তার ছেলে সালার মাহবুবী (১৬) এবং রাজধানী তেহরানের বোলভার, আজাদী এলাকার ৬ নম্বর রোডের ৩৫ নম্বর বাড়ির লতিফ মাসুফির ছেলে ফারির্বোজ মাসুফি (৫৭)।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন জানিয়েছেন, গতকাল ৮ এপ্রিল যশোরের অভয়নগর উপজেলার বর্ণি হরিশপুর গ্রামের একটি বাজারে যায় ইরানী ওই তিন নাগরিক। এরপর তারা ওই বাজারের জালাল মার্কেটের শরিফুল ইসলামের মরিয়ম স্টোরে যান। এদের মধ্যে ফারিবোর্জ মাসুফি নারকেল তেল কেনার জন্য শরিফুল ইসলামের কাছে যান এবং তার নাকের কাছে একটি মার্কিন ডলার দিয়ে তেল দিতে বলে। সে সময় ওই মুদ্রা থেকে একটি রাসায়নিকের গন্ধ বের হয়। তখন শরিফুল অজ্ঞান হয়ে যান এবং তাকে যা বলতে বলে শরিফুল ইসলাম তাই করতে থাকে। এক পর্যায়ে শরিফুলের ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা দিতে বললে তিনি বাক্স থেকে ৬ লাখ টাকা দিয়ে দেন। ওই টাকা নিয়ে তারা চম্পট দেয়। এই ঘটনায় অভয়নগর থানায় একটি মামলা হয়।
মামলাটি হওয়ার পর অভয়নগর পুলিশ এবং ডিবি পুলিশ প্রতারকচক্রটিকে ধরতে নানা টেকনোলোজি ব্যবহার করে। ওই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাইভেটকার থেকে নম্বর সংগ্রহ করে ওই নম্বর অনুযায়ী প্রাইভেট কারের মালিক গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘ্যানাসুর গ্রামের মৃত সরোয়ার হোসেনের ছেলে খোরশেদ আলমকে (৫৩) ঢাকা থেকে আটক করে। মূলত ওই প্রাইভেটকারের মালিক খোরশেদ আলম। ওই প্রতারক চক্রটি সাইফুল ইসলাম বাবুর মাধ্যমে প্রাইভেটকারটি ভাড়া নেয়। বাবু ঢাকার বনানী এলাকার এটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করেন। সেই সুবাদে বাবুর কাছে সুপারিশ করে ওই ইরানী নাগরিকদের জন্য ঠিক করে দেয়। ২০১২ সালে বাবুর সাথে ফারিবোর্জের ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। সেই সুবাদে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। পুলিশ বাবুকেও আটক করেছে।
প্রেস ব্রিফিং এ বেলাল হোসাইন জানিয়েছেন, ইরানী এই চক্রটি আন্তর্জাতিক প্রতারকচক্র। এদের মধ্যে ফারিবোর্জ মাসুফি ২০১২ সালে এবং করোনার আগে দুইবার বাংলাদেশে আসে। সে ভারত, নেপাল ও ভিয়েতনামেও গিয়ে প্রতারণা করেছে। তার কাছ থেকে মার্কিন ডলার, ভারতীয় রুপি, মুদ্রা, ইরাকী মুদ্রা, নেপালী রুপি, ভিয়েতনামের রুপি এবং বাংলাদেশি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া তিনটি পাসপোর্ট, ৭টি মোবাইল ফোনসেট এবং ২টি আইডিকার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো দুইটি তরল জাতীয় পদার্থ উদ্ধার হয়েছে দুইটি বোতলে। তাদের ভাষায় এই দুটি পারফিউম। কিন্তু ওই পারফিউম দিয়ে তারা চেতনানাশকের কাজটি করে।
এক প্রশ্নের জাবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ওই পারফিউম ব্যবহারে তাদের (প্রতারকচক্রের) কোনো ক্ষতি হয় না। তাদের শরীরের এন্ট্রি চেতনানাশক দেয়া আছে। তারা খুলনায়ও একাধিক নারীর কাছ থেকে সোনার গহনাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে বলে তাদের কাছে সংবাদ আছে। বিষয়টি বাংলাদেশের বৈদেশিক বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেছেন, আসামি ফারিবোর্জের পাসপোর্টে লাগানো ভিসার মেয়াদ তিন মাস আগেই শেষ হয়ে গেছে। গত জানুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশে আসেন। বর্তমানে তিনি অবৈধভাবে বাংলাদেশের অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে আলাদাভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ৫জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা হবে।
এদিকে বাংলাদেশি খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, তার একটি প্রাইভেটকার আছে। ওই গাড়িটি তিনি ভাড়া দিয়ে থাকেন। বাবু তার কাছ থেকে ওই ইরানী নাগরিকদের জন্য দৈনিক ৫ হাজার টাকার চুক্তিতে ভাড়া নিয়েছিল।
সাইফুল ইসলাম বাবু জানিয়েছেন, ইরানী ওই নাগরিকদের সাথে হোটেলে যাতায়াত নিয়ে তার পরিচয় হয়। তারা বাংলাদেশে ঘুরবে বলে গাড়ি ভাড়া করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করলে তিনি খোরশেদ আলমের প্রাইভেটকারটি ভাড়া করে দেন। তারা প্রতারচক্র তা তিনি জানতেন না।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply