টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের বাসাইলে পেশি শক্তি ববলে খেলার মাঠে অনধিকার প্রবেশের মাধ্যমে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা ও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারসহ গ্রামবাসীর ওপর হামলা, নির্যাতন খুন ও দেশ ত্যাগের হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে আরুহা শালিনাপাড়া গ্রামের অধিবাসীরা ।
সোমবার (৫ জুন) উপজেলার হাবলা ইউনিয়নের আরুহা শালিনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম আফানুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য আব্দুর রউফ মিয়া, স্থানীয় বাসিন্দা ফেরদৌস মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, শ্রী নিরাঞ্জন ঘোষ, বকুল ঘোষ, নীল রতন সরকার, কাশেম মিয়া, আলহাজ মোতালেব মিয়াসহ তিন শতাধিক সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ও গ্রামের নারী-পুরুষ এ মানববন্ধনে অংশ নেন।
পরে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানানো হয়- হাবলা ইউনিয়নের আরুহা শালিনাপাড়া মৌজায় সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান ও তার স্বজনদের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ১০৮ শতাংশ জমিতে স্থানীয় বিভিন্ন বয়সের লোকজন খেলাধুলা করে আসছিল। এক পর্যায়ে বর্তমান বিআরএস জরিপে ভূমি ‘খ’ তপশীল ভুক্ত হওয়ায় বিআরএস ১-১ নং খতিয়ানে জেলা প্রশাসকের নামে হাল ১৪০০ নং দাগে ১০৮ শতাংশ জমিটি খেলার মাঠ হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।
এরপর থেকে হাবলা উত্তরপাড়ার কিছু সংখ্যক লোক সন্ত্রাসী কায়দায় মাঠটি আরুহা গ্রামবাসীদের বেদখল দিয়ে নিজের দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারা আরুহা শালিনাপাড়ার কোনও লোকজনকে মাঠে যেতে দিচ্ছে না। তারা বিভিন্নভাবে মাঠে যেতে বাধা প্রদান করছে। এমন কি মাঠকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে আরুহা শালিনাপাড়ার হিন্দু মুসলিম সমম্প্রদায়ের ব্যবসায়ী, ছাত্র যুবক ও সাধারন মানুষদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হামলা ও হুমকি ধামকি প্রদান করে আসছে। বিষয়টি জানতে পেরে জমির মালিক মালিকানা সংশোধন করে আরুহা শালিনাপাড়ার লোকজনকে মাঠ হিসেবে দেওয়ার জন্য টাঙ্গাইলের যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে ৩১-২২ সং স্বত্ব মোকাদ্দমা দায়ের করে। যা বিচারাধীন রয়েছে। মামলার বিষয়টি জানাজানির পর থেকে হাবলা উত্তরপাড়ার লোকজন বিভিন্নভাবে আরও বেপরোয়া হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে বলে দাবি আরুহা গ্রামবাসীর।
গত দুই বছর ধরে চলে আসা বিশৃঙ্খল পরিবেশ প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করে আরুহা শালিনাপাড়া গ্রামবাসী।। চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল আরুহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন আরুহা শালিনাপাড়া যুব সংঘের ক্লাব ঘরের মাটি ভরাটের জন্য আড়াই লাখ টাকা সঙ্গে নিয়ে বিল দিতে মাঠটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় হাবলা উত্তরপাড়ার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী রাম দা, টেটা, হকিস্টিক, ফালা, বাঁশের ও কাঠের লাঠি দিয়ে পথরোধ করে অতর্কিত আক্রমণ করে। এসময় মোফাজ্জল হোসেনের কাছ থেকে টাকাগুলো ছিনিয়ে নেওয়ার দাবি করেন ওই শিক্ষক। এসময় তাকে মারতে মারতে হাবলা উত্তরপাড়া গ্রামের বড়বাড়ী মসজিদের কাছে নিয়ে যায়। তাকে আটকে রাখার বিষয়টি মূহুর্তের মধ্যেই তার নিজ গ্রাম শালিনাপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তাকে উদ্ধার করতে শালিনাপাড়ার প্রায় ২০ থেকে ২৫জন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। শালিনাপাড়ার লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে হাবলা উত্তরপাড়ায় মাইকিং করে প্রায় ২শ’ থেকে ৩শ’ লোকজনকে একত্রিত করে তারা। এক পর্যায়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এসময় প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেনকে উদ্ধার করে তাদের স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেন। ঈদের পরে দুই গ্রামবাসীর লোকজনের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সংঘর্ষের ঘটনায় আরুহা শালিনাপাড়া গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে বাসাইল থানায় ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেড় থেকে ২শ’ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর উল্টো হাবলা উত্তরপাড়া গ্রামবাসী ১৮ জনের নাম উল্লেখ্য করে আরও অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে।
তারা আরও জানান, প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে হাবলা উত্তরপাড়ার লোকজন আরুহা শালিনাপাড়ার সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে মারধর করে আসছে। এটির সমাধান না হওয়ায় আরুহা শালিনাপাড়ার খেলার মাঠের মূল মালিকদের পক্ষ থেকে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারার জন্য পিটিশন দায়ের করেন। পিটিশনটির শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ জুন। দুই গ্রামের লোকজনকে আদালত থেকে বাসাইল থানা পুলিশের মাধ্যমে নোটিশ প্রেরণ করে মাঠে নামতে নিষেধ করা হয়। এবং আগামী ৮জুন দুই পক্ষকে জমির বৈধ কাগজপত্র নিয়ে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়। হাবলা উত্তরপাড়ার লোকজন প্রশাসনের নিষেধ অমান্য করে মাঠটি ব্যবহার করে আসছে। এছাড়াও সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার সময় মেয়েদের উত্ত্যক্তের ঘটনাও ঘটছে বলে দাবি তাদের। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন গ্রামবাসী। তারা দ্রুত বিষয়টির সমাধান চান।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply