নিজস্ব প্রতিনিধিঃ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০২৩ এ নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন করায়, অসম্পূর্ণ তথ্য দেওয়ায় ও ভুল তথ্য দেওয়ায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও পরে বিজয়ী জায়েদা খাতুনের হলফনামা অবৈধ ঘোষণা ও বাতিল চেয়ে ০২ জুলাই ২০২৩ রবিবার বিকেলে গাজীপুর সিনিয়র সহকারী জজ প্রথম আদালতে মামলা হয়েছে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল গণফ্রন্ট এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গণফ্রন্ট মনোনীত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০২৩ এর মাছ প্রতীকের পরাজিত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০২৩ এর রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন কমিশনার মোঃ আলমগীর ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সচিব মোঃ জাহাংগীর আলমকে মোকাবিলা বিবাদী করা হয়েছে।
দেওয়ানী মোকদ্দমা নম্বর ৩৭৫/২৩, ০২ জুলাই ২০২৩। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে বিবাদীদের প্রতি সমনের আদেশ দিয়েছেন। আগামী ০২ আগস্ট ২০২৩ শুনানীর দিন ধার্য করা হয়েছে।
মামলার আর্জিতে বলা হয়, ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন তার নির্বাচনী হলফনামায় ‘পিতার নাম’ উল্লেখ করেছেন ‘শামসুল ইসলাম’। কিন্তু তার ২০২২-২০২৩ কর বর্ষের আয়কর রিটার্নে ‘পিতার নাম’ উল্লেখ করেছেন ‘মরহুম মোঃ শামসুল হুদা’। এতে ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন তার নির্বাচনী হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদান করেছেন। “স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০” এর ধারা ১৪ এর উপ ধারা (৩) অনুযায়ী ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বাতিল করার দায়িত্ব ও সুযোগ থাকলেও ২নম্বর মোকাবিলা বিবাদী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০২৩ এর রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম প্রতারণামূলকভাবে জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বাতিল করেননি। এই উপ-বিধি/ধারায় বলা আছে “রিটার্নিং অফিসার স্বীয় উদ্যোগে কোন মনোনয়ন বাতিল করিতে পারিবেন, যদি তিনি সন্তুষ্ট হন যে, (ক) প্রার্থী মেয়র বা ক্ষেত্রমতে, কাউন্সিলর হিসেবে মনোনিত হইবার যোগ্য নহেন; (ঙ) দাখিলকৃত হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদান করা হইয়াছে, বা হলফনামায় উল্লিখিত কোন তথ্যের সমর্থনে যথাযথ সার্টিফিকেট, দলিল ইত্যাদি দাখিল করা হয় নাই”। কিন্তু ২ নম্বর হতে ৪ নম্বর মোকাবিলা বিবাদীগণের যোগসাজসে অবৈধ ও প্রতারণামূলকভাবে ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বৈধ করেন।
মামলার আর্জিতে আরও বলা হয়, ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন তার নির্বাচনী হলফনামায় ১ নম্বর শর্ত পূরণ করেননি। হলফনামায় আছে: “আমি এই মর্মে শপথপূর্বক ঘোষণা করিতেছি যে, ১। আমার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা (উত্তীর্ণ পরীক্ষার নাম) এবং সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি এতদ্সঙ্গে যুক্ত করিলাম।” কিন্তু জায়েদা খাতুন “উত্তীর্ণ পরীক্ষার নাম” এর ঘরে উত্তীর্ণ পরীক্ষার নাম না লিখে এর স্থলে প্রতারণামূলকভাবে উল্লেখ করেছেন “স্বশিক্ষিত” । স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০ (সংশোধনী)-তে “১. হলফনামা (প্রার্থীর সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি সংযুক্ত করিতে হইবে)।” বলা থাকলেও জায়েদা খাতুন তার নির্বাচনী হলফনামার সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি সংযুক্ত না করে প্রতারণামূলকভাবে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনী হলফনামার এই শর্ত পূরণ করতে না পারায় জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন অবৈধ ছিল। কিন্তু ২ নম্বর হতে ৪ নম্বর মোকাবিলা বিবাদীগণ যোগসাজস করে অবৈধ ও প্রতারণামূলকভাবে ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বৈধ করেন।
মামলার আর্জিতে আরও বলা হয়, ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন তার নির্বাচনী হলফনামায় ৪ নম্বর অংশও পূরণ করেননি। নির্বাচনী হলফনামার ৪ নম্বর অংশে “৪. আমার ব্যবসা/ পেশার বিবরণীঃ”-তে জায়েদা খাতুন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও ব্যবসার ধরণ/ বিবরণী উল্লেখ না করে প্রতারণা করেছেন। কিন্তু ২ নম্বর হতে ৪ নম্বর মোকাবিলা বিবাদীগণ যোগসাজস করে অবৈধ ও প্রতারণামূলকভাবে ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বৈধ করেন।
মামলার আর্জিতে আরও বলা হয়, ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন ২০২২-২০২৩ করবর্ষে (মহিলাদের আয়সীমা) ৩,৪৫,০০০/- টাকা আয় দেখিয়ে শূন্য আয়কর দেখিয়েছেন। শূন্য আয়কর দেখানোর কারণে জায়েদা খাতুন আয়কর রিটার্নের রসিদ এর কপি পাননি। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা , ২০১০ (সংশোধনী)-তে “৩. ১২ ডিজিটের টিআইএন সনদের কপি এবং সম্পদ বিবরণী সম্বলিত সর্বশেষ দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নের রসিদ এর কপি।” দাখিল করতে হবে বলা থাকলেও ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন তার নির্বাচনী হলফনামার সঙ্গে আয়কর রিটার্নের রসিদ এর কপি সংযুক্ত করেননি। নির্বাচনী হলফনামার এই শর্তও পূরণ করতে না পারায় জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন অবৈধ ছিল। কিন্তু ২ নম্বর হতে ৪ নম্বর মোকাবিলা বিবাদীগণ যোগসাজস করে অবৈধ ও প্রতারণামূলকভাবে ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বৈধ করেন।
মামলার আর্জিতে আরও বলা হয়, ১নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন তার ২০২২-২০২৩ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপন করে প্রতারণা করেছেন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী হলফনামার সঙ্গে দাখিল করা ২০২২-২০২৩ কর বর্ষের আয়কর রিটার্নে দেখা যায় তিনি ব্যবসার পুঁজি (মূলধনের জের) হিসেবে দেখিয়েছেন ৪,৬৬,০০,০০০/- (চার কোটি ছেষট্টি লাখ) টাকা। এই টাকা জায়েদা খাতুন কোথায় রেখেছেন বা কোথায় বিনিয়োগ করেছেন বা এই টাকায় কোথায় কী ব্যবসা চলে তা জায়েদা খাতুন তার নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেডে ২,৫০,০০০/- টাকা মূল্যের ২৫০০ টি শেয়ারের বিপরীতে কত টাকা মুনাফা পেয়েছেন তাও জায়েদা খাতুন তার আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেননি।
আয়কর পরিপত্র ২০২২-২০২৩ অনুযায়ী কোন করদাতার যদি নিট সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি টাকার বেশি হয় তাহলে সারচার্জ প্রযোজ্য হবে। কিন্তু জায়েদা খাতুন ২০২২-২০২৩ কর বর্ষে কোন প্রকার কর প্রদান করেননি এবং নিট সম্পদের উপর কোন সারচার্জ প্রদান করেননি।
জায়েদা খাতুন নির্বাচনী হলফনামায় অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন নগদ ৩৫,০০,০০০/- টাকা, ব্যাংকে জমা ৫০,০০০/- টাকা, অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেডের ২৫০০ টি শেয়ার মূল্য ২,৫০,০০০/, ৩০ তোলা স্বর্ণ দেখিয়েছেন যার বর্তমান বাজার মূল্য (৭ মে, ২০২৩ তারিখের বাজার দর ৯৮,৪৪৪/- টাকা ভরি হিসেবে) ২৯,৫৩,৩২০/- টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী দেখিয়েছেন ১,৫০,০০০/- টাকা এবং আসবাবপত্র দেখিয়েছেন ১,২০,০০০/- টাকা। এ হিসেবে হলফনামায় জায়েদা খাতুন মোট সম্পদ দেখিয়েছেন ৭০,২৩,৩২০/- টাকা। সুতরাং জায়েদা খাতুন ২০২২-২০২৩ কর বর্ষে আয়কর রিটার্নে নিট সম্পদ দেখিয়েছেন ৪,৭১,২০,০০০/- টাকা। ফলে হলফনামায় দেখানো সম্পদের মধ্যে ৪,০০,৯৬,৬৮০/- টাকার গড়মিল থাকলেও ২ নম্বর হতে ৪ নম্বর মোকাবিলা বিবাদীগণ যোগসাজসে অবৈধ ও প্রতারণামূলকভাবে ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বৈধ করেন।
এ ব্যাপারে উক্ত মোকদ্দমার বাদী বিগত ১১/০৫/২০ ইং তারিখে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০২৩ এর রিটার্নিং অফিসার এর বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। যা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
মামলার আর্জিতে আরও বলা হয়, “স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০” এর ধারা ১৪ এর উপ ধারা (৩) অনুযায়ী ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বাতিল করার দায়িত্ব ও সুযোগ থাকলেও ২ নম্বর মোকাবিলা বিবাদী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০২৩ এর রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম প্রতারণামূলকভাবে জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বাতিল করেননি। এই উপ-বিধি/ধারায় বলা আছে “রিটার্নিং অফিসার স্বীয় উদ্যোগে কোন মনোনয়ন বাতিল করিতে পারিবেন, যদি তিনি সন্তুষ্ট হন যে, (ক) প্রার্থী মেয়র বা ক্ষেত্রমতে, কাউন্সিলর হিসেবে মনোনিত হইবার যোগ্য নহেন; (ঙ) দাখিলকৃত হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদান করা হইয়াছে, বা হলফনামায় উল্লিখিত কোন তথ্যের সমর্থনে যথাযথ সার্টিফিকেট, দলিল ইত্যাদি দাখিল করা হয় নাই” …।
“স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯” এবং ক্ষেত্রমতে “স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা , ২০১০ (সংশোধনী)” অনুযায়ী মেয়র পদে নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন অবৈধ ছিল এবং নির্বাচিত প্রার্থী জায়েদা খাতুন মনোনয়নের তারিখে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য ছিলেন। ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন প্রতারণামূলকভাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন এবং ২ নম্বর হতে ৪ নম্বর মোকাবিলা বিবাদীগণ ১ নম্বর বিবাদীর সঙ্গে যোগসাজস করে অবৈধ ও প্রতারণামূলকভাবে জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বৈধ করেছেন বিধায় অত্র মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত হয়েছেন।
নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন করায়, অসম্পূর্ণ তথ্য দেওয়ায় ও ভুল তথ্য দেওয়ায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও পরে বিজয়ী জায়েদা খাতুনের হলফনামা অবৈধ ঘোষণা ও বাতিল চেয়ে বিজ্ঞ আদালতে আবেদন জানানো হয়।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply