লক্ষ্মীপুরে প্রতিবন্ধীকে ধরে এনে থানায় নির্যাতন ও ছাড়িয়ে নিতে টাকা দাবির অভিযোগে পুলিশের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযুক্তরা হলেন লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন, শহর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) জহিরুল আলম ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জুয়েল।
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফকে এ মামলা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল সদর আদালতের বিচারক মো. তারেক আজিজ এ নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ৫(২) ধারা এবং একই আইনের ৮(১) ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের নির্দেশনা জেলা পুলিশ সুপারকে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। আদেশ প্রাপ্তির দুই কার্যদিবসের মধ্যে মামলার নম্বরসহ অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ আদেশ কপি পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজিকেও অনুলিপি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
বাদীর আইনজীবী মোসাদ্দেক হোসেন বাবর বলেন, বাদী দেলোয়ারা বেগমের ছেলে আরিফ হোসেন প্রতিবন্ধী। তার ছেলেকে ধরে নিয়ে অভিযুক্তরা অমানবিক নির্যাতন করেছেন। আরিফকে ফেরত নিতে গেলে ৭০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি করেন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা। আদালতের বিচারক অভিযোগটি আমলে নিয়েছেন। এ ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপারকে ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, ১৯৯৮ এর ২০০ ধারায় এবং নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ৪(১) অনুযায়ী অভিযোগটি লিপিবদ্ধ করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয় সোমবার (৩ জুলাই) বিকাল ৪টার দিকে বাদী দেলোয়ারার প্রতিবন্ধী ছেলে আরিফ হোসেনকে তাদের ঘর থেকে তুলে এনে অমানবিক নির্যাতন করেন অভিযুক্তরা। তারা আইনের তোয়াক্কা না করে আরিফকে আটকে রাখেন। পরদিন বাদী তার ছেলেকে থানায় দেখতে যান। এ সময় বাদীর সামনেই তার ছেলেকে অভিযুক্ত এসআই জুয়েল অমানবিক নির্যাতন করেন। আটক আরিফকে ফেরত নিতে গেলে ৭০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে অভিযুক্তরা জানিয়ে দেন। অভিযোগকারী নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৩(১) ও (২) ধারায় অভিযোগ দাখিল করেছেন। যা একই আইনের ১০(১) ধারা অনুযায়ী আমলযোগ্য অপরাধ। অভিযোগের ধরন, গুরুত্ব ও আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ধারা ৫ (১), ৯ এবং পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল, ১৯৪৩ এর ২৪৫ (ক) প্রবিধান এবং ক্রিমিনাল প্রসিকিউর কোড, ১৮৯৮ এর ১৫৬ (৩) নিয়মিত মামলা রুজুর জন্য লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।
মামলার বাদী দেলোয়ারা বেগম লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আসলামুদ্দিন বেপারী বাড়ির মৃত আবুল খায়েরের স্ত্রী।
অভিযোগে তিনি বলেন, জমি নিয়ে খোকন প্রফেসর নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে খোকন বিভিন্ন লোক দিয়ে আমার ছেলেদেরকে মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছেন। ৩ জুলাই বিকেলে আমার প্রতিবন্ধী ছেলে আরিফকে পুলিশের এসআই জুয়েল ঘর থেকে তুলে নিয়ে যান। এরপর থানায় নিয়ে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়। তাকে ফেরত আনতে হলে টাকাও দাবি করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন বলেন, মামলার বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাটি কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখছি।
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, আদালতে একটি অভিযোগ দায়েরের কথা শুনেছি। এখনও আদালতের কোনো কপি পায়নি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply