আনোয়ার হোসেন তরফদার, ভালুকা প্রতিনিধি ঃ সৃষ্টি কর্তার এই সুন্দর পৃথিবীতে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করে সকল মানুষ সুন্দর ভাবে্ বাঁচতে চায়। পৃথিবীতে কেউ অকালে মৃত্যুবরণ করতে চায়না । তাই তো মৃত্যু এবং জীবন কিন্তু বিপরীত নয় বরং মৃত্যু হলো জীবনের অংশ। মানবদেহে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের আদান প্রদান বন্ধ হয়ে গেলে মানব দেহের আর কোন মূল্য থাকে না। ফলে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সশরীরে চিরবিদায় নেয়। কিন্তু সে মৃত্যু যদি অকাল অর্থাৎ আত্মহত্যা হয় তখন বলতেই হয় পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য কাজ হচ্ছে নিজের প্রতি অবিচার করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া কাজ। আত্মহত্যার খবর শুনে কেন যেন বুক কেঁপে ওঠে। তখন মনে হয় সুন্দর একটা ফুল ঝরে গেলে । সেই ফুলের রূপ আর দেখতে পাব না। কেন ফুল বললাম কারণ পৃথিবীর প্রত্যেক সন্তান তার বাবা মায়ের কাছে একেকটি ফুল। সে যদি অকালে ঝরে যায় তাহলে সে ফুলের ঘ্রাণের বন্ধ হয়ে যাবে। পরিবারের শুরু হবে অশান্তি আর দুর্দশা। ফলে আমরা বলতে পারি আত্মহত্যা একটি সামাজিক ব্যাধি ।
বিশ্বে এই সামাজিক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। প্রত্যেক দেশে কম বেশি দেখা যায় মানুষের আত্মহত্যা। ফলে এই ব্যাধির বাইরে নয় বাংলাদেশ। আমাদের সবুজ শ্যামল বাংলাদেশে আত্মহননের খবর হরহামেশই পত্রিকার পাতায় পাতায় দেখা যায়। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি আমরা খুঁজে বের করতে পারছি? আত্মহত্যা বন্ধের যথাযথ পদক্ষেপ কি নিতে পারছি। আমাদের যুব সমাজ কোন পথে চলছে? প্রত্যেকটি আত্মহত্যার দায় কে নিবে? রাষ্ট্র না কি আত্মহত্যাকারীর পরিবার? কেন আত্মহত্যার খবর বিদ্যুৎ গতিতে বেড়েই চলছে। প্রশ্ন গুলোর করার আগে উদ্বিগ্ন হতে হয় এমন মর্মান্তিক ঘটনায়। আত্মহত্যা কেউ হুট করে হয় না। এর পেছনে অনেক কারণ লুকিয়ে আছে।
ঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে অবশ্যই আত্মহত্যা ঠেকানো অসম্ভব বলে কিছু নেই। আমাদের সমাজে যে আত্মহত্যা গুলো হচ্ছে, তার খবর প্রথমে দিতে হয় থানায়, তারপর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আর জনপ্রতিনিধিরা থানায় একটা মুচলেকা দিয়ে লাশ নিয়ে দাফন করে দেয়। কিছুদিন পর এটা নিয়ে আর কারো কোন মাথা থাকেনা, তবে আসলে কি এটা সঠিক? আমি বলবো অবশ্যই না আমরা কেন আত্মহত্যা করলো, কি তার কারন সেগুলো খোঁজিনা বা খোঁজার চেষ্টা করি না। আমাদের দেশের প্রত্যেকটা আত্মহত্যার কারন যদি খোঁজা হত আর যাদের জন্য আত্মহত্যা করলো তাদের উপযুক্ত বিচার হতো তাহলে অনেক টা কমে আসতো এই সামাজিক ব্যাধি আত্মহত্যা।
আমাদের দেশে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে দেখা যায় মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ের কিছুদিন পর স্বামীর পরিবার থেকে ,যৌতুকের চাপ, অভাব, হতাশা, পারিবারিক কিংবা সামাজিক নির্যাতনের মতো ঘটনায় আত্মহত্যার একটা অন্যতম কারণ, আবার ইভটিজিং তো আছেই তারা ভাবত এটাই মুক্তির একমাত্র পথ। আর পুরুষের বেলায় প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, নেশাগ্রস্ততা কিংবা জীবনের দায়ভার নেওয়ার সাহস না থাকাটাই হয়ে দাঁড়াত আত্মহত্যার কারণ। তবে সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে আত্মহত্যার ধরণ কিছুটা পরিবর্তন এসেছে ফ্রি ফায়ার গেইম খেলতে না দেওয়ায় আত্মহত্যা, নতুন মোবাইল কিনে না দেওয়ায় আত্মহত্যা, নতুন পোশাক কিনে না দেওয়ায় আত্মহত্যা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকছে। নতুন মোটর বাইক কিনে দিতে হবে পরিবারের কাছে বায়না। অনেক ক্ষেত্রে পরকিয়া প্রেম , নিজের সন্তান দেখে ফেলা এগুলো অন্যতম কারন। আবার অনেকে মনে করেন জীবন দিয়ে কি হবে বেঁচে থাকলে তাই অনেক আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিচ্ছে।
নৈতিক স্খলন, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার, ব্ল্যাকমেইলিং এর কারণে কিশোর-কিশোরী, যুবক- যুবতী ও নারী- পুরুষদের মধ্যে আশংকাজনক হারে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। মানুষ অতিমাত্রায় হতাশাগ্রস্ত ও সংবেদনশীল হওয়ায় আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সামাজিক বৈষম্য, পারিবারিক কলহ, মাদক, সন্তানের প্রতি অভিভাবকদের উদাসীনতা, পারিবারিক বন্ধন ভঙ্গুর হয়ে আসার মতো কারণগুলো প্রকট আকার ধারণ করায় মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে।
আমাদের এই সমাজে দুই ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা প্রায় দেখা যায়, আগে থেকেই পরিকল্পনা করে, আয়োজন করে, সুইসাইড চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেন সেটাকে বলা হয় ডিসিসিভ সুইসাইড। আবার হুট করে আবেগের রাশ টানতে না পেরে আত্মহত্যা করেন সেটাকে ব হয় ইমপালসিভ সুইসাইড। তবে কিশোর-কিশোরী বা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি ডিসিসিভ সুইসাইড লক্ষ্য করা যায় কারণ তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৃত্যু আর আত্মহত্যা নিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন। মাদকাসক্তি বা ইন্টারনেটে মাত্রারিক্ত আসক্তি আত্মহত্যায় সহায়তা করে।
এগুলোর পরও কিছু বিষয় আছে সারা রাত জেগে থাকা আর সারা দিন ঘুমানো। এমন কি পড়ালেখা, খেলাধুলা, শখের বিষয় থেকে নিজে দূরে রাখে। নিজেকে গুটিয়ে রাখে যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে না। নিজেই নিজের ক্ষতি করেন যেমন প্রায়ই এঁরা নিজের ক্ষতি নিজেই করে থাকেন , বেশি বেশি ঘুমের ওষুধ খান। মনমরা হয়ে থাকে কাজে প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলে নিজেকে সব সময় দোষী ভাবতে শুরু করে। এমন লক্ষণ প্রকাশ পেলে তার প্রতি বিশেষ যত্ম নিতে হবে এবং প্রয়োজনে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দিতে হবে।
তাই নিজে সচেতন হই, অপরকেও সচেতন হতে সাহায্য করি। নিজের জীবনকে উপভোগ করি। একাকিত্ব ভালো না লাগলে পরিবারের অন্য সদস্যদের বুঝিয়ে বলতে হবে এবং সুযোগ থাকলে ভ্রমণে যেতে হবে। মাদকাসক্তি বা ইন্টারনেটে মাত্রারিক্ত আসক্তি থেকে বিরত থাকতে হবে। পড়ালেখা, খেলাধুলা, শখের কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে হলে সবাইকে যার যার ক্ষেত্র থেকে একযোগে কাজ করতে হবে। শিশুদের বিকাশের সময় তাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সফলতার মতো ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারে। তার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর থেকে গড়ে তুলতে হবে। আত্মহত্যার উপকরণ, যেমন ঘুমের ওষুধ, কীটনাশকের সহজলভ্যতা কমাতে হবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। যেকোনো ধরনের মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার ইঙ্গিত পেলে দ্রুত মনোরো
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply