২৩ অক্টোবর শামসুর রহমানের ৯৪তম জন্মদিন। তিনি ছিলেন আমাদের সমকালে শ্রেষ্ঠ কবি প্রতিভা। তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতা ও অঙ্গীকার পালন বাংলাদেশের সমাজ জীবনে শিল্পীর স্বাধীন ও অকুতোভয় অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। আমাদের সুখে ও দুঃসময়ে, আনন্দগানে ও প্রতিরোধ মিছিলে তিনি সাধারণের পাশে ছিলেন আমৃত্যু। কিন্নরকণ্ঠ এই কবিপুরুষ আধুনিক বাংলা কাব্যের সমুন্নত এক ভুখণ্ডের সম্রাট ছিলেন। বাঙালির সৃজনমনীষা, স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা, সংগ্রাম ও বিজয়ের পরস্পরা সংহত হয়ে তার কাব্যশরীরে ব্রীড়াময় হয়ে আছে-থাকবে। চিরায়ত বাংলা কবিতায় অমরবৃন্দের সঙ্গে তিনিও থাকবেন জ্যোতির্ময় হয়ে। তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলা কবিতার মুকুটহীন সম্রাট। ২৩ অক্টোবর ৯৪তম জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
প্রথম কবিতা-প্রথম বই: শাসসুর রাহমান কবিতা লেখা শুরু করেন ১৯৪৮ সাল থেকে। তখন তাঁর বয়স ১৯ বছর। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় নলিনী কিশোর গুহ সম্পাদিত ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক সোনার বাংলা’য়। সেই কবিতার নাম ছিলো ‘উনিশ’শ ঊনপঞ্চাশ’। ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। বাংলা ১৩৬৬ ফাল্গুন, এবং ১৯৬০ সালের ফেব্রুয়ারি ছিলো এই বইয়ের প্রকাশ কাল। ‘বার্ডস এন্ড বুকস’ নামের ঢাকার একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে বইটি বের হয়েছিলো। ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ বইয়ের প্রচ্ছদ শিল্পী ছিলেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রকাশিত তাঁর বইয়ের বেশিরভাগ প্রচ্ছদই শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর করা।’ শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ সংকলনের প্রচ্ছদ শিল্পীও ছিলেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।
তিনি স্বাধীনতার কবি: শামসুর রাহমানের মৃত্যুর পর শহীদ মিনারে শোক সভায় খ্যাতিমান কবি ও কথাশিল্পী সৈয়দ শামসুল হক বলেছিলেন, “শামসুর রাহমান আমাদের স্বাধীনতার কবি।” বাস্তবিক অর্থেই শামসুর রাহমান আমাদের মুক্তি স্বপ্ন সংগ্রাম ও স্বাধীনতাকে তাঁর কবিতায় ধারণ করেছেন গভীরভাবে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনাকালেই সেই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় লেখা তাঁর ‘আসাদের শার্ট’ কবিতাটি হয়ে ওঠে বাঙালির সংগ্রাম ও চেতনার ইশতেহার। আর একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি লিখছেন, ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা; গেরিলা, ‘বন্দী শিবির থেকে এইসব কবিতা। মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর কবিতা মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে প্রেরণা সঞ্চার করতো। অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ নির্যাতন, ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমৃত্যু সংগ্রামী ছিলেন কবি শামসুর রাহমান। অন্যায়ের সাথে অশুভের সাথে কখনো তিনি আপোষ করেননি। মুক্তিকামী সংগ্রামী মানুষের প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। আর তাই তাঁর ‘স্বাধীনতার কবি’ এই উপাধী-যথার্থই বলেছেন, বাঙালির আরেক অহংকারের কবি ও কথাকার-সৈয়দ শামসুল হক।
গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন : স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মম ভাবে হত্যার পর- সংবিধান গণতন্ত্র লুণ্ঠিত হয় সামরিক জান্তার বুটের আঘাতে। সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আর তখনই কবি লিখলেন- ‘একটি মোনাজাতের খসড়া’ শিরোনামের অসামান্য এক কবিতা। দ্বিতীয় পর্যায়ের সামরিক শাসনামলে গণতন্ত্রের দাবীতে ঢাকার রাজপথে আত্মাহুতি দেয় নূর হোসেন। যার বুকে পীঠে লেখা ছিলো- “গণতন্ত্র মুক্তি পাক-স্বৈরাচার নিপাত যাক। শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে এক অবিনাশী কবিতা লিখলেন কবি-‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়।’ তখনই লিখলেন- ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’। রাষ্ট্রশক্তির নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমৃত্যু কলমযুদ্ধ চালিয়েছিলেন শামসুর রাহমান। বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবি লিখেনে-‘টেলেমেকাস’ ও ‘ইলেকট্রার গান’ তার এই অমরগাথা অনন্তকাল ধরে আমাদেরকে প্রণোদিত করবে শোককে শক্তিতে পরিণত করতে। শামসুর রাহমান সব সময় উন্নত, আধুনিক গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কবির স্বপ্ন পূরণ হয়নি আজও। এক অন্ধকার স্বদেশে তাঁর মৃত্যু হয়। মৌলবাদী জামাত ও তাদের দোসর বিএনপির দু:শাসনে বিপন্ন বাংলাদেশে বলা যায় বিনা চিকিৎসাতেই কবির মৃত্যু হয়। স্বাধীনতা বিরোধী জোট সরকার বাঙালির এ সূর্য সন্তানকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করেনি। এতে কবির মর্যাদা কমেনি বরং বেড়েছে। নষ্ট-পতিতরা কবির মৃতদেহে ছায়া ফেলেনি, কবির পবিত্র শবযাত্রায় নষ্ট ভ্রষ্ঠ রাষ্ট্রপরিচালকদের স্পর্শ লাগেনি, তাতে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। ক্ষোভের কিছুই নেই বরং এতে ভালো হয়েছে। হাজারো সাধারণ জনগণের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অর্ঘ্যে সিক্ত হয়েছিলো কবির শেষযাত্রা…।
শামসুর রাহমানের কবিতায় রাজনীতি ও সমাজ: রাজনীতি বিমুখ- জীবনবিমুখ শিল্পসম্পন্ন নান্দনিক কবিতা লিখে বিশুদ্ধ কবির ভান করেননি কবি শামসুর রাহমান। এখানেই তাঁর স্বকীয়তা ও মৌলিকত্ব। তিরিশের কবিদের ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ ধারণাকেও বাতিল করে দেন তিনি। বাঙলা কবিতায় নতুন এক ধারার প্রবর্তন করেন তিনি। রাজনীতি ও সমাজ পরস্পর হাত ধরে চলেছে তাঁর কবিতার পথে পথে। এই পথ একান্তই তাঁর নিজেরই সৃজন। স্বাধীন বাঙালি জাতী-রাষ্ট্রের প্রথম দ্রোহ ভাষা আন্দোলন নিয়ে তিনি লেখেন অমর পঙ্ক্তিমালা- ‘বর্ণমালা, আমার দু:খিনী বর্ণমালা; এ কবিতার শেষ ক’টি চরণ এমন-
-‘তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো তবে, কী থাকে আমার?
উনিশ শো বায়ান্নোর দারুণ রক্তিম পষ্পাঞ্জলি
বুকে নিয়ে আছো সগৌরবে মহীয়সী।
সে ফুলের একটি পাপড়িও ছিন্ন হ’লে আমার সত্তার দিকে
কত নোংরা হাতের হিংস্রতা ধেয়ে আসে। এখন তোমাকে নিয়ে খেঙরার নোংরামি এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি-খেউড়ের পৌষমাস! তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো, বর্ণমালা, আমার দু:খিনী বর্ণমালা।
এ অবিনাশী কবিতা ভাষা আন্দোলতো বটেই, ধারণ করে আছে বাঙালির স্বপ্ন আকাংখা উত্থানের ইতিহাসকে। তাঁর- ‘ ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯; মাওলানা ভাসানীকে নিয়ে লেখা ‘সফেদ পাঞ্জাবি’, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে নিহত আসাদকে নিয়ে লেখা-‘আসাদের শার্ট’ ‘দুঃসময়ের মুখোমুখি’; ‘ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা’, ‘ধন্য সেই পুরুষ’, ‘বুকতার বাংলাদেশের হৃদয়’,। এরকম অসংখ্য রাজনীতি ও সমাজভাবনা বিষয়ক কবিতা শামসুর রাহমান রচনা করেছেন। তাঁর কবিতায় বারবার এসেছে সমাজের অবহেলিত দু:খী মানুষের জীবন, বৃহত্তর গণমানুষের কল্যাণ চিত্তা ও তাঁর লেখায় আমরা দেখতে পাই। শামসুর রাহমান ছিলেন এই বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোর এক নিপুন চিত্রকর।
শামসুর রাহমানের কবিতায় মিথ প্রসঙ্গ: শামসুর রাহমান তাঁর কবিতায় বেশ কিছু গ্রিক মিথ ব্যবহার করেছেন, যেমন-‘টেলিমেকাস’ ইদিপাস, ইকারুস, আগামেমনন, অর্ফিয়ুস, কাসান্দ্রা, সিসিফাস, আর্টিমিস। আরবিয় মিথ আলিবাবার কথাও তাঁর কবিতায় এসেছে। শামসুর রাহমান সেই কবি যাঁকে মৃত্যু আঁধারে ঢাকলেও তিনি সাহসী ইকারুসের মতো সূর্যের পানে অবিরাম ছুটে চলেন। শামসুর রাহমান তাঁর কবিতার মিথের মতোই বাংলা সাহিত্যে তিনি নিজেই এখন মিথ তুল্য। ফিনিক্স পাখির মতো বার বার তাঁর জন্ম হবে এই বাংলায়।
শামসুর রাহমানের প্রাপ্ত পদক ও সম্মাননা: সাহিত্য সাধনা ও কবিতার জন্য অনেক পদক ও সম্মাননা, উপাধি-অর্জন করেন শামসুর রাহমান। পাকিস্তান আমলে সর্বোচ্চ সাহিত্য-পুরস্কার আদমজী পুরস্কার পান ১৯৬২ সালে। বাংলা একাডেমী পুুরুস্কার ১৯৬৯, জীবনানন্দ পুরস্কার ১৯৭৩, একুশে পদক পুরস্কার-১৯৭৭, আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার-১৯৮১, নাসির উদ্দিন স্বর্ণ-পদক-১৯৮২, ভাসানী পুরস্কার-১৯৮২, মিতসুবিশি পুরস্কার-জাপান-১৯৮২, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার-১৯৯১, আনন্দ পুরস্কার-ভারত-১৯৯৪, ভারতের যাদবপুর বিশ^বিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট উপাধী-১৯৯৪, রবীন্দ্র ভারতী বিশ^বিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট উপাধীন-১৯৮৪, বাংলাদেশ রাইটার্স ফাউন্ডেশন সম্মাননা, গণসাহায্য সংস্থা সম্মাননা, ঋষিজ এর সম্মাননা সহ দেশ ও বিদেশে বহু সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন। শামসুর রাহমানকে নিয়ে বেশ কিছু সাময়িকপত্র ও সম্পাদিত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। নিসঙ্গ শেরপা- হুমায়ুন আজাদ, নির্জনতা থেকে জনারণ্যে-ভূঁইয়া ইকবাল সম্পাদিত, মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা-মীজানুর রহমান সম্পাদিত শামসুর রহমার সংখ্যা, কায়সুল হক সম্পাদিত-শৈলী শামসুর রাহমান সংখ্যা।
শামসুর রাহমান: সংক্ষিপ্ত জীবনকথা: শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর বুধবার পুরনো ঢাকার মাহুতটুলি ৪৮ নং বাড়িতে সকাল ১০টায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুখলেসুর রহমান চৌধুরী, মাতার নাম আমেনা খাতুন। ঢাকা শহরের মাহুতটুলির ৪৮ নম্বর বাড়ি ছিলো তাঁর পৈতৃকগৃহ। কবির শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত মাহুতটুলির সে বাড়িটি এখন আর নেই। সেখানে এখন সু-উচ্চ ভবন নির্মিত হয়েছে। কবির গ্রামের পৈতৃক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রামে। মাহুতটুলির ৪৮ নম্বর বাড়িতে কবি শৈশব ও কৈশোরসহ ষোল বছর জীবন যাপন করেছেন। এরপর ৩০ নম্বর কাজী আওলাদ হোসেন লেনে, পুরানো ঢাকার আশেক লেনে, ইস্কাটনে এবং শুক্রাবাদের তল্লাবাগে বসবাস করেন। সর্বশেষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, পনেরো বছরের মতো বসবাস করেছিলেন শ্যামলীর এক নং রোডের ৩/১ নম্বর বাড়িতে। ১৯৩৬ সালে শামসুর রাহমান সাত বছর বয়সে পুরনো ঢাকার পোগোজ স্কুলে ক্লাস টুতে ভর্তি হন। তিনি যখন পোগোজ স্কুরে ভর্তি হন, সেই সময়ে তাদের স্কুলে মোট আটশ ছাত্রের মধ্যে মুসলমান ছাত্র ছিলো মাত্র ১০ জন। ১৯৪৫ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ভর্তি হন। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের কারনে সৈনিকদের আস্তানায় পরিণত হয় কলেজ, ফলে ওই সময় থেকে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ সিদ্দিক বাজারে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৪৭ সালে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। উচ্চমাধ্যমিক পাশের বছরেই ১৯৪৭ সালে শাসসুর রাহমান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন। তিন বছর অনার্সে পড়াশোনা করেও ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। পরে ১৯৫৩ সালে পাস কোর্সে বি.এ পাশ করে ইংরেজি বিষয়ে এম.এ-তে ভর্তি হন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলেও এম.এ শেষ পর্বের পরীক্ষা আর দেননি। তার পড়াশোনার সমাপ্তি হয় এভাবেই।
১৯৫৫ সালের ৮ জুলাই তিনি জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন । কবির তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। সুমায়রা রাহমান-(১৯৫৬), ফাইয়াজ রাহমান (১৯৫৮), ফাওজিয়া সাবরিন (১৯৫৯), ওয়াহিদুর রাহমান মতিন (১৯৬০), যিনি অল্পবয়সে মারা যান, সেবা রাহমান (১৯৬১)।
১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিং নিউজে সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পত্রিকাটির তিনি সহ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৭-১৯৫৯ এই সময় তিনি রেডিও পাকিস্তানের প্রযোজক ছিলেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত, দৈনিক মর্নিং নিউজে সিনিয়র সহ সম্পাদক হিসেবে ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত, দৈনিক পাকিস্তান, পরবর্তীতে দৈনিক বাংলার সহকারী সম্পাদক এবং ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত দৈনিক বাংলায় ও সাপ্তাহিক বিচিত্রায় সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯ বছর বয়সে কাব্য চর্চা শুরু তাঁর ১৯৪৮ সালে। ১৯৬০ সালে ৩১ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ তাঁর সর্বমোট প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭২টি। কবিতার বাইরে অন্যান্য প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে উপন্যাস ৪টি, ছোটগল্প ১টি, প্রবন্ধ ২টি, শিশু কিশোর ও ছড়া সাহিত্য ১৪টি, অনুবাদ কবিতা ৩টি, অনুবাদ নাটক ৩টি, আত্মজীবনী-১টি, রচনা সংকলন ১৬টি, তাঁর সম্পাদনায় বের হয়েছে সাময়িকপত্র-কবিকণ্ঠ ( যৌথ সম্পাদক ফজল শাহাবুদ্দিন), অধুনা ও মূলধারা, তাঁকে সভাপতি করে ১৯৮৭ সালে গঠিত হয় জাতীয় কবিতা পরিষদ, কণ্ঠশীলনের সভাপতি ছিলেন ১৯৯৪ থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। তিনি বিভিন্ন সময়ে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, মিয়ানমার, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও ফ্রান্স ভ্রমণ করেন।
মহাযাত্রায় শামসুর রাহমান: ৫ আগস্ট ২০০৬ অসুস্থ্য হয়ে কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৩ দিন অসুস্থ্যতার সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে ১৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার মৃত্যুর দেশে পাড়ি দেন জীবনমঙ্গলের কবি স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমান। তাঁর মৃত্যু সংবাদের সঙ্গে সঙ্গে পুরো বাংলাদেশ যেন শোকার্ত হয়ে ওঠে। কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও তাঁর ভক্তরা ছুটে যায় শ্যামলীর কবি গৃহে সবার চোখে শ্রাবণমেঘের কান্না। পরদিন ১৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কবির কফিন ঘিরে লাখো জনতার শ্রদ্ধা ভালোবাসার পুষ্পার্ঘ্য, সত্যি এক অকল্পনীয় দৃশ্যের অবতারণা করে। পুরো বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে শোক ও সম্মান জানালো যেন কবিকে। শামসুর রাহমানের মৃত্যুতে শহীদ মিনারে যে জনতার ঢল নেমেছিলো, মানুষের শোকাহত আর্তনাদ ঝরে ঝরে পড়েছিলে ফুলের পাপড়িতে। এমন শ্রদ্ধা ভালোবাসা শত বছরেও আর কেউ পাবেন কিনা সন্দেহ….।
শামসুর রাহমান নেই, প্রিয় রাহমান ভাই আপনি নিষ্পাপ নিসর্গে বনানীতে মায়ের কবরস্থলে মায়েরই কোলে বসে অলৌকিক চোখে দেখছেন-হায়! আপনার স্বপ্নের বাংলাদেশ! সম্প্রীতিভরা অসাম্প্রদায়িক উন্নত আধুনিক বাংলাদেশের সে স্বপ্ন, এখন ধূলোয় লুটায়- আপনি বেঁচে থাকলে কী কবিতা লিখতেন জানিনা। আপনার স্বপ্নসুন্দর বাংলাদেশের জন্য অবিরাম সংগ্রাম ও সাধনা চালানোই বুঝি আপনাকে সম্মান জানানোর শ্রেষ্ঠ উপায়। আমার দু’লাইন কবিতা দিয়ে শেষ করছি বকুল মরে যাবে ঝরে যাবে সুগন্ধ যাবে না কবিতা পাবে তুমি কবিকে পাবে না…।
রাহমান ভাই আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে আপনি কি এখনো ঈশ^রের সুন্দরী হুরদের আড্ডায় বসে লিখে যাচ্ছেন কবিতা ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা…।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply