ডা.নুরুল আমিন তামিজী সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ পাচ্ছেন কবি নাসির আহমেদ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের যেকোনো শাখায় সার্বিক অবদানের জন্য একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিককে এই পুরস্কার প্রদান করবে কবি সংসদ বাংলাদেশ। আগামী ৩ নভেম্বর ২০২৩ রাজধানীর কেন্দ্রীয় কচিকাঁচা মেলা মিলনায়তনে সংগঠনের ২৫ বছর পুর্তি উৎসবে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রয়াত ডা. নুরুল আমিন তামিজীর জ্যেষ্ঠ পুত্র অধ্যাপক মু. নজরুল ইসলাম তামিজী ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন কবি সংসদ বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম কনক।
৫ ডিসেম্বর ১৯৫২ খৃ. এ দ্বীপজেলা ভোলা সদরের আলীনগর গ্রামে কবি নাসির আহমেদ এর জন্ম। ছাত্র জীবন থেকেই সাংবাদিকতা শুরু। দৈনিক বাংলা, দৈনিক জনকন্ঠ, দৈনিক সমকাল, দৈনিক বর্তমান ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচালক (বার্তা) পদসহ বিভিন্ন দৈনিকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। কবিতায় “বাংলা একাডেমী পুরস্কার”, ভারতের “বিষ্ণু দে পুরস্কার”, “মাইকেল মদুসুধন দত্ত পুরস্কার”, “বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পদক”, “কবি মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশন পুরস্কার” “শিল্পি বশীর আহম্মেদ স্মৃতি সম্মাননা” এবং নাটকে“বাচসাচ পুরস্কার” সহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই কবি।
কবি নাসির আহমেদের কাব্যগ্রন্থের মধ্যে, আকুলতা শুভ্রতার জন্য, বৃক্ষমঙ্গল, ভালো থাকার নির্দেশ আছে, তোমার জন্য অনিন্দিতা, একাত্তরের পদাবলি, মিশে যাবো তোমার সবুজে ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কবি দেখেন, যা অন্যের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। কবি ভাবেন অন্তরাত্মার গভীরে পৌঁছে, জীবনকে অনুসন্ধান করেন আবেগকে বুদ্ধি দ্বারা পরিশোধনের মাধ্যমে। কবি পোড়েন কবিতার তুষাগ্নিতে। পুড়তে পুড়তে উপস্থাপিত হন ইন্দ্রিয়গত প্রক্রিয়ার নির্ভেজাল উদ্যানে। এমন উদ্যানে আমরা আবিষ্কার করি নাসির আহমেদকে। শব্দ নিয়ে খেলতে খেলতে তিনি কবিতার পূজারী হয়েছেন। শুরু ছোট গল্প দিয়ে, ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যান ছড়ার হাত ধরে, প্রচুর লিখেছেন ছোটদের জন্যে, লিখেছেন গান ও গল্প। অবশেষে অন্তর্লীন হয়েছেন কবিতায়। এ পথের যাত্রী তিনি যখন থেকেই হোন, তাঁর কপালে তিলক চিহ্ন এঁকেছে সত্তর দশক।
শব্দ ব্যবহারের মুনশিয়ানা, রূপকল্প, চিত্রময়তা তাঁর কবিতাকে হৃদয়গ্রাহী করেছে। ঐতিহ্যচেতনা তাঁর কবিতায় নতুন মাত্রা লাভ করে। তাঁর কবিতা স্নাত হয়েছে প্রকৃতির নিটোল আলো-হাওয়ায়। তিনি এঁকেছেন সবুজের সৌম্যমূর্তি। তিনি কবিতার ওষ্ঠাধারে তুলে ধরেছেন সমাজ, দেশ ও দেশের মানুষের হৃদয়নিঃসৃত কথামালা। তাঁর অধিকাংশ কবিতা অন্তর্গত ছন্দের দোলায় পাঠকমনকে নাচিয়ে তোলে। তাঁর কাব্য রচনার পটভূমিতে রয়েছে প্রেমের অনুষঙ্গ। মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের পরিপার্শ্ব, সামাজিক, রাজনৈতিক পরিবেশ তাঁকে বিদ্ধ করেছে আর এর থেকে উৎসারিত হয়েছে কবিতা।
জীবনের পরিপূর্ণতা আনে মৃত্যু, তা জীবনের উৎসও। এই উৎসকে জানার মধ্যেই সর্বস্বতা ধ্বনিময়। যা নাসির আহমেদ এর কবিতায় প্রাণ পেয়েছে এভাবে-
‘পূর্ণতাকে আবাদ করো অন্ধকারে’। (কৃষ্ণপক্ষ শুক্লপক্ষ)
তাঁর মনে হয়েছে মৃত্যু- দিনের গল্প ফুরানোর মতো জীবনে ছেদ টেনে দেয়। তাই তিনি মৃত্যুর পথযাত্রী হয়ে লিখেছেন-
‘এইভাবে রাত্রি নেমে এলে ফুরায় দিনের গল্প
তুমি সেই নৈঃসঙ্গপীড়িত দিন
তোমার পৃথিবী এসে শেষাবধি মিশে যায়
গৃঢ়ার্থ রাত্রির অর্থহীন দ্বান্দ্বিক রেখায়।’ (অর্থহীন দ্বান্দ্বিক রেখায়)
শিল্পের তন্ময় ধ্যানে মগ্ন কবি বুঝতে পারেন না ‘গন্তব্য কোথায়’। তাই তিনি বলেন-
‘হে নিসর্গ! সে অসীম সৌরলোক
হে অজস্র আলোকবর্ষব্যাপী ছড়ানো সময়
সেই অন্ধকারের পরে কী রয়েছে
তোমরা কি জানো?
এই অজ্ঞতার দুঃখ নিয়ে
নিভে যেতে হয়!
নিভে যেতে হবে!
সাড়ে তিন হাত মাটি, আলোভুক্ত মাটি
চিরদিন অপেক্ষায় থাকে ঘোর অজ্ঞতায়:
গন্তব্য কোথায়?’ (গন্তব্য অজ্ঞাত)
তিনি সমস্ত চরাচরে এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। নিরবচ্ছিন্নভাবে কেউ বলতে পারেন না সর্বশেষ অন্ধকারের পরে কী, তা কবিরও অজ্ঞাত। এই অজ্ঞাত গন্তব্যের দিকে যেতে যেতে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো তিনি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। আবারও এঁকে যাচ্ছেন ছবি: নদী, চর, সবুজ প্রান্তর ইত্যাদি নানা চিত্রকল্প ও শব্দের সুষমা।
বার্তা প্রেরক
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply