নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঈশ্বরদীর কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টুর নিয়ন্ত্রণে বালু মহালসহ মাদক সিন্ডিকেট। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ট্রেনে হামলাকারী মৃত্যু দন্ড প্রাপ্ত আসামি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী জাকারিয়া পিন্টুর সাথে রয়েছে সখ্যতা। তার সাথে যোগ সাজসে সাবেক মেয়র মিন্টু ঐতিহাসিক ঈশ্বরদী অঞ্চলে গড়ে তুলেছেন ভয়ঙ্কর অপরাধ ও সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য।
একসময়ের জাসদ নেতা বর্তমান আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা বনেযাওয়া ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টুর অপরাধ ও দুর্নীতি বর্তমান সীমাহীন অবস্থায় পৌঁছেছে। স্থানীয় সূত্র থেকে তার ভয়ঙ্কর অপরাধ ও দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে।
জানাযায়, তিনি মেয়র থাকাকালীন সময়ে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা একেবারেই ছিলনা এই পৌরসভা এলাকায়। নাগরিকদের নিকট দেওয়া প্রতিশ্রুতির একটিও করেননি বাস্তবায়ন। পৌরসভার প্রতিটি রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে রাখা হয়েছে স্তুপ করে। দুর্গন্ধে রাস্তায় চলাচল করা দায়। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও যেকোনো সময়ের হালকা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় ঈশ্বরদী পৌর সভার রাস্তা, বাজার, বাসা-বাড়ি। করেননি ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সংস্কার কিংবা নির্মাণ। পৌরসভার আদায়কৃত ট্যাক্সের টাকার হিসাবেও ছিল অসংগতি।
উত্তর বঙ্গের অন্যতম বৃহত ঈশ্বরদী অরণখোলা গরুরহাটের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করেন এই মিন্টু। এই হাটের প্রতিবছরই দিয়েছেন গোপন টেন্ডারের ইজারা। নিতেন কয়েক কোটি টাকা। ঐ টাকা থেকে হাটের উন্নয়নের জন্য ১০ ভাগ ব্যয় দেখানো হতো, কিন্তু কোনো কাজই করেননি তিনি। বাড়িয়েছেন শুধু রাজনৈতিক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, হামলা, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্চারিতা, অবৈধ দখল, চাঁদাবাজি।
বাংলাদেশের একটি অন্যতম উন্নয়ন স্থাপনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পিডির কাছথেকে তিন কোটি টাকা চাঁদা দাবি করার কারনে তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী ডিলু মিন্টুকে দির্ঘ প্রায় দেড় বছর স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে পদচ্যুত করেছিলেন।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, আবুল কালাম আজাদ মিন্টুর সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ঈশ্বরদীর বালুমহাল। এখানের মাদক বাণিজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করেন মিন্টু। মিন্টুর সহযোগী কখ্যাত সন্ত্রাসী শফিকুল, সামাদ, তুষার ও মাস্টার শাহিন এদের কাছে রয়েছে ১০/১২ টি অবৈধ অস্ত্র। এদের মাধ্যমেই পুরো ঈশ্বরদী উপজেলা এলাকায় মিন্টু তার অপরাধ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করেন। এসবের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।
জামায়াত নেতা সলিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মিন্টুর চাচাতো ভাই বর্তমান সরকার বিরোধী চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত। তার নেতৃত্বে স্থানীয় ভাবে হরতাল পালন সহ গাড়ি ভাঙচুরের নেতৃত্বে রয়েছেন মিন্টুর চাচাতো ভাই।
আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ট্রেনে হামলাকারী মৃত্যু দন্ড প্রাপ্ত আসামি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী জাকারিয়া পিন্টুর সাথে রয়েছে সখ্যতা। তার সাথে যোগ সাজসে সাবেক মেয়র মিন্টু ঐতিহাসিক ঈশ্বরদী অঞ্চলে গড়ে তুলেছেন ভয়ঙ্কর অপরাধ ও সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য। স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ভয়ে মুখ খুলতে চায়না আবুল কালাম আজাদ মিন্টুর বিরুদ্ধে।
সাবেক এই মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিনটু প্রয়াত সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মেয়ের জামাই। মন্ত্রী ডিলু জীবিত থাকার সময় ভয়ঙ্কর আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন জামাই মিন্টু। পৌর এলাসহ গোটা উপজেলায় নিজের সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়েছেন। কয়েকবার কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছিল ঈশ্বরদী পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব সরকারকে। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থেকে অবশেষে মারা যান রাজিব সরকার।
সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মিন্টু ঈশ্বরদীর প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ফকির নুরুল ইসলামের জমি দখল করে নেন। এ ছাড়া হিন্দু–মুসলিম যার জমিই পেয়েছেন দখল করে নিয়েছেন। দেশ ছাড়া করেছেন কয়েকটি হিন্দু পরিবারকে
সূত্রগুলো আরো জানায়, সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা মেয়র মিন্টু ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী, পৌরসভা, পাকশী রেলওয়ে, ইপিজেড, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পাবনা সুগার মিলস, ঈশ্বরদী-মুলাডুলি খাদ্য গোডাউন, সাব রেজিস্ট্রার অফিস, বাংলাদেশ সুগার ক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রতিনিয়ত চালাচ্ছেন টেন্ডারবাজি। শহরের বাস, টেম্পু ও সিএনজি স্ট্যান্ডে চালাচ্ছেন ভয়াবহ চাঁদাবাজি। ব্যক্তিগত ভাবে হয়েছেন অঢেল সম্পদ ও টাকা মালিক। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যক্তি তো দূরের কথা আওয়ামী লীগের সমর্থক লোকজনও মুখ খুললেই নির্মম নির্যাতন করা হয়। এমন কি দলের কেউ তার বিরুদ্ধে পৌর মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার কথা মুখ দিয়ে বের করলেই তাকে মারপিট করা হতো। প্রকাশ্যে দিনের আলোয় তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হতো।
ইতিপূর্বে বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরুজ্জামান বিশ্বাস, পৌর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইসাহক আলী মালিথার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। ধারালো রামদা দিয়ে দরজা, জানালা কুপিয়ে এবং গুলি বর্ষণ করা হয়। যার চিহৃ এখনো বাড়িগুলো বহন করে রয়েছে। সাবেক মেয়র মিন্টুর দ্বারা ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের প্রবীণ প্রায় প্রতিটি ত্যাগী নেতাকর্মীই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরপর দুইবার নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় মেয়র নির্বাচিত হয়ে একটি কাজও করেনি। ঈশ্বরদীবাসীর নিকট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন পৌঁছায়নি। ফলে পৌরবাসীর নিকট আওয়ামী লীগ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
ঈশ্বরদী পৌরসভার মধ্যে রিকশাচালক, সিএনজি ও অটো রিকশা চালকরা জানান, ঈশ্বরদী পৌর সভায় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তা ঘাটের কোনো কাজই করেননি। পুরো শহরের রাস্তা খানা খন্দে ভরা। চলাচলের অযোগ্য।
পৌরসভার পশ্চিম ও পূর্ব টেংরী, ফতেমোহাম্মাদপুর, খটখটিয়াপাড়ার বাসিন্দারা জানান, ময়লা পানিতে ড্রেনগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। সাবেক মেয়র মিন্টুর ১০ বছরে এগুলো একবারের জন্যও মেরামত কিংবা নির্মাণ করা হয়নি।
শহরের শেরশাহ রোড, ফতেমোহাম্মাদপুর, হাসপাতাল রোড মাদরাসা পাড়া, খটখটিপাড়া, কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দারা জানান, ময়লা ফেলার ডাস্টবিনগুলো তার আমলে দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছিল। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্ছিষ্ট অংশগুলো মাসের পর মাস রাস্তা ও বাসার পাশে স্তুপ করে রাখতে হয়েছে। এতে দুর্গন্ধে বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে।
পৌরসভার বাসিন্দা পাবনা জেলা কৃষকলীগের সদস্য ও সাবেক ভিপি আসাদুর রহমান বিরু জানান, সাবেক মেয়র মিন্টুর সময়ে ঈশ্বরদী পৌরবাসী সন্ত্রাস ও অনিয়ম ছাড়া কিছুই পায়নি। ঈশ্বরদীর আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও সকলের শ্রদ্ধাভাজন নেতাদের নিয়ে গঠিত সুধী মহলের পক্ষ থেকে মেয়র নির্বাচনে অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি পৌরবাসীকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজও শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র শিশুপার্ক, গণ-পাঠাগার, স্টেডিয়াম মাঠ নির্মাণ করা তো দূরের কথা পৌরবাসীর দৈনন্দিন সমস্যসা রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ সমস্যা, ময়লা ফেলার সমস্যায় সমাধান করেনি সাবেক এই মেয়র।
স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও তৃণমূলের সাধারণ আওয়ামী লীগের সমর্থকদের অভিমত, কি ভাবে কোন পন্থায় ঈশ্বরদীর একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী, অপরাধ ও দুর্নীতির হোতা, ভূমি দস্যু, সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের অনুরোধ, অনতিবিলম্বে এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করে তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply