আনোয়ার হোসেন। নিজস্বপ্রতিনিধিঃ বেনাপোল স্হল বন্দর ছেড়ে কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী সাতক্ষীরা ভোমরা স্হল বন্দর দিয়ে ফল ও কাঁচামাল আমদানি করছে।এমন অভিযোগ উঠেছে, এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী শুল্ক ফাঁকি দিতে ভোমরা স্থল বন্দরকে বেছে নিয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের দাবি, পচনশীল পণ্য হওয়া সত্ত্বে ফল ও কাঁচামাল দ্রুত ছাড় করণে বেনাপোল স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো ছাড় দেয় না। তার উপর কাঁচামাল আমদানিতে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে তারা ভোমরা স্থল বন্দরের দিকে ঝুঁকেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ভোমরা স্হল বন্দরে ফল ও কাঁচামাল আমদানি বেড়ে যাওয়ার নেপথ্য কারণ নিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকায় গুঞ্জন শুরু হয়। বিষয়টির অনুসন্ধানে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি সামনে চলে আসে। তবে ভোমরা স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকি বা কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেনাপোল স্হল বন্দরে আমদানিকৃত কাঁচা মাল ফলসহ সব পণ্যের ওজন ডিজিটাল স্কেলে নির্ধারণ করা হয়।যার ফলে কোনো পণ্যের ওজন কারচুপির সুযোগ বেনাপোল বন্দরএ দেয়া হয় না। পাশের স্হল বন্দর ভোমরা ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে ওজন করা হলেও হাতে লেখা ওজন স্লিপ ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে ওজনের একটা তারতম্য ঘটিয়ে কারচুপি করার সুযোগ এখানে থেকেই গেছে।
ওজন স্কেলে কারচুপির মাধ্যমে আমদানিকৃত ফলসহ সব পণ্যের বিরাট অঙ্কের শুল্ক ফাঁকি দেয়া সম্ভব। অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি এমন অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন ভোমরা স্হল বন্দর ও কাস্টমসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
বেনাপোল স্হল বন্দরে ফলের চালান ছাড়ের কাজ করেন এ ধরনের ব্যবসায়ীরা বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি অনেক কমে গেছে। এর আগে প্রতিদিন বেনাপোল দিয়ে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের ফল ও কাঁচামাল আমদানি হতো। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ থেকে ছয় ট্রাক। এই কারণে বিভিন্ন ধরনের ফল আমদানি থেকে সরকার মোটা অঙ্কের শুল্ক হারাচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে।
তারা বলেন, ভারত থেকে আঙুর আমদানি হয়ে থাকে প্লাস্টিকের ক্যারেটে। খালি ক্যারেটের ওজন ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম হলেও ভোমরা বন্দরে ক্যারেটের ওজন দেখানো হচ্ছে দেড় কেজি। ক্যারেটের ওজন বাদ দিলে প্রতি ক্যারেটে আমদানিকারকরা ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম পণ্যের শুল্ক ফাঁকির সুবিধা পাচ্ছেন ।
ভারত থেকে একটি ট্রাকে ১৫০০ ক্যারেট ফল আমদানি হয়ে থাকে। ক্যারেট প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম সুবিধা পাওয়া গেলে প্রতি গাড়িতে প্রায় এক টন ওজন ফলের শুল্ক দেয়া লাগছে না। তবে এখানে সরকার হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায়। আর এ কারণে অধিক মুনাফার আশায় বেনাপোল স্হল বন্দর ছেড়ে অসাধু আমদানিকারকরা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভোমরা বন্দরের দিকে ছুটছেন।
ভোমরা স্হল বন্দর সূত্রে জানা যায়, আঙুর বোঝাই একটি ট্রাক (ডব্লিউ-বি-২৫-এল-৬৪৬৮) ২০ মার্চ বাংলাদেশে প্রবেশ করে।যাহার ওজন স্কেলে এই ট্রাকের দুটি ওজন স্লিপ করা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে আমদানিকারকের জন্য, অপরটি সরকারের শুল্ক আদায়ের।
সূত্র আরও জানায়, আমদানিকারকের জন্য প্রথম স্লিপে ট্রাকের গ্রোস ওজন দেখানো হয়েছে ৪০ হাজার ৭৮০ কেজি এবং নিট ওজন ২৭ হাজার ৮৮০ কেজি। আর সরকারের রাজস্বের জন্য প্রিন্ট করা ওজন স্লিপে গ্রোস ওজন দেখানো হয়েছে ৩৮ হাজার ৮৮০ কেজি এবং নিট ওজন ২৫ হাজার ৯০০ কেজি। এই ওজনের মাধ্যমে কমানো হয়েছে ১ হাজার ৯৮০ কেজি বা প্রায় দুই টন। ১ হাজার ৯৮০ কেজি পণ্যের রাজস্ব আসে প্রায় দুই লাখ টাকা। প্রতিদিন গড় আদায় ৫০টি ট্রাকে এমন হলে প্রায় এক কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বেনাপোল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গাজী এক্সিমের স্বত্বাধিকারী গাজী শামিম উদ্দিন বলেন, ‘গত এক মাসে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি কমে গেছে। ফল সহ কাঁচা মাল পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল বন্দরে কোনো সুযোগ সুবিধা না থাকায় ও কাঁচামাল আমদানিতে সময় বেঁধে দেয়ায় বেশির ভাগ আমদানি কারক বেনাপোল ছেড়ে ভোমরা বন্দর ব্যবহার করছেন। এ কারণে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভোমরা স্থলবন্দরের কাস্টম হাউজের ডেপুটি কমিশনার মোঃএনামুল হক বলেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এই বন্দরে ফলসহ কাঁচামাল আমদানিতে তেমন কোনো সুবিধা দেয়া হয় না। কাঁচামাল কখনও কখনও বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হয়। আবার কখনও ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি হয়ে থাকে।
‘ফলসহ কাঁচামাল আমদানিতে ভোমরা বন্দরে কোনো রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটছে না। ভোমরা বন্দর এখন একমাত্র স্বচ্ছ বন্দর। ওজনে কোনো ছাড় দেয়া হয় না বলে জানান।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply