পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় রাষ্ট্রবিরোধীহীন তৎপরতায় লিপ্ত জেএসএস, ইউপিডিএফ এবং কেএনএফ বাংলাদেশের মানচিত্র ছিন্ন ভিন্ন করে তথাকথিত জুম্মল্যান্ড নামে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য তারা ভারতের মিজোরাম, কলকাতা, আগরতলা, নয়াদিল্লীতে এবং জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক সম্মেলনে গিয়েও জোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তাদের এই ষড়যন্ত্র ইতিমধ্যেই ফাঁস হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৩ মে গণভবনে ১৪ দলের সমাবেশে উক্ত অভিযোগ করেছেন এবং বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম মিয়ানমার নিয়ে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে। পূর্বতিমুর ও দক্ষিণ সুদানের মতো দেশের একদশমাংশ কেড়ে নিয়ে পৃথক রাষ্ট্র কায়েমের জন্য দেশে বিদেশে চক্রান্ত অব্যাহত আছে। সবাইকে এ জন্য সচেতন হতে হবে।
বিগত ৫০ বছর যাবত পাহাড়ের দেশপ্রেমিক জনগণ উক্ত অভিযোগ করে আসলেও কেউই তা গুরুত্ব দেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর উক্ত অভিযোগের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে দেশে বিদেশে বিশদ পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ পিসিএনপি উক্ত বিষয়ে তীব্র দৃষ্টি রেখেছে এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকেক খুবই সময়োপযোগী ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে স্বাগত জানিয়েছে। রাঙামাটি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এবং পিসিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনিরুজ্জামান মনির আজ ঢাকার সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে উপরোক প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি অভিযোগ করেছেন, বান্দরবান জেলা পরিষদের সিনিয়র কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগের কতিপয় উপজাতীয় নেতা বিভিন্নভাবে কেএনএফকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। পিসিএনপি এর তদন্ত দাবি করেছে। রাষ্ট্রদ্রোহী কেএনএফ কমান্ডার নাথান বমের স্ত্রীকে বান্দরবান জেলা পরিষদে চাকুরী প্রদান, বম সম্প্রদায়ের অভিযুক্ত নেতাদেরকে লাখ লাখ টাকার ত্রাণ সামগ্রী, অর্থ প্রদান এবং সেনা অভিযানে গ্রেফতারকৃত বম গোষ্ঠীর সদস্যদেরকে জামিন দেওয়ার ব্যাপারে বান্দরবান জেলা পরিষদের অর্থভান্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার নিরবতায় আমরা মর্মাহত হয়েছি। তাছাড়া প্রায় এক ডজন সৈনিক হত্যায় রাষ্ট্রদ্রোহী সশস্ত্র তৎপরতা, ও গণবিরোধী কাজে লিপ্ত কেএনএফকে দমনের জন্য সরকার ২০২২ সালে অভিযান শুরু করেছিলেন। কিন্তু বান্দরবান জেলা পরিষদের ঐ নেতা আলোচনার ফাঁদে ফেলে বমদেরকে রক্ষার ব্যবস্থা ককরেন এবং সেনাবাহিনীকে বিদ্রোহ দমনে বাধা দিয়েছেন। ফলে কেএনএ নতুনভাবে সুসংগঠিত হয়েছে এবং পরবর্তীকালে বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি উপজেলায় সোনালী ও কৃষি ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে এবং অনেক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গেছে। জাতি এর বিচার চায়।
এদিকে বান্দরবান জেলা সদরে কতিপয় উপজাতীয় আওয়ামী লীগ নেতার ইন্ধনে পিসিএনপির নেতা কাজী মজিবুর রহমানকে হত্যার চক্রান্ত করায় নেতৃবৃন্দ এর তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, রুমা, থানচি, আলীকদম, লামায় কেএনএ’র সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজী, লুটপাট ও বাঙালিদের উপর নির্যাতনে পিসিএনপি গভীর উদ্বিগ্ন। ২০২২ সালে সেনা অভিযান চূড়ান্ত সাফল্যের মুখে বান্দরবানের কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার শান্তি আলোচনার ফাঁদে পড়ে মৃত প্রায় কেএনএকে নতুন জীবন দান করা হয়েছে। তাছাড়া বান্দরবানে ইকো পার্কসহ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনেও জেলা পরিষদের শীর্ষ নেতা বাধা দিয়েছেন। ফলে বিরাট একটি ইকো প্রকল্প মাঝপথে ব্যহত হয়েছে।
২০২২ সালে দুর্গম পাহাড়ে অভিযানে গিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী খাদ্য এবং রসদ সামগ্রীর অভাবে অবরুদ্ধ হয়েছিলেন। তাদেরকে উদ্ধারের জন্য মুরং স্বেচ্ছাসেবক দলকে পাঠানো হয়েছিল। এমনকি উক্ত এলাকায় হেলিকপ্টর দেখা গেলে কেএনএফ’র পক্ষ থেকে গুলি করার হুমকি দিয়েছিল। তখন কিন্তু আওয়ামী লীগের উপজাতীয় নেতারা মোটেও প্রতিবাদ করেন নাই। পিসিএনপি বলেছে, বর্তমানে যে যৌথ অভিযান চলছে তা সফল করার জন্য দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে এবং তিন পার্বত্য জেলার জেএসএস, ইউপিডিএফ, কেএনএফ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, হিল উইম্যান ফেডারেশনসহ রাষ্ট্রদ্রোহী সশস্ত্র সন্ত্রাসে লিপ্ত সংগঠনগুলোকে কমবিং অপারেশনের মাধ্যমে নিরস্ত্র করতে হবে।
শান্তিচুক্তির যেসকল শর্ত উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা লঙ্ঘন করেছে তা পালন করার জন্য নতুন করে সেনাক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব এদেশের ১৮ কোটি মানুষের। পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের কাছে আমরা আর মাথা নত করতে রাজি নই।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply