নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রায় ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে জাতীয় সংসদের ডিপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকুর ছেলে এস এম আসিফ শামস সপরিবারে গত রবিবার (৩০ জুন) বিদেশে চলে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়াযায়। তবে নির্ভরযোগ্য একটি পারিবারিক সূত্র জানায়, শামস আরও কয়েক দিন আগেই স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন।
১৯১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭১ টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ২০২২ সালের মে মাসে ওই পরোয়ানা জারি করা হয়। দুই বছরের বেশি সময় পর এই পরোয়ানা কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এমন খবর পেয়ে আসিফ দেশত্যাগ করেন। তিনি পাবনা জেলার বেড়া পৌরসভার মেয়র।
ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভিশন টেল কোম্পানির চেয়ারম্যান আসিফ শামসের নামে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। এতে উল্লেখ করা হয়, ভিওআইপির লাইসেন্স ফি বাবদ তিনি বিটিআরসিকে ১৫ কোটি টাকা অগ্রিম এবং প্রতিবছরে ৭ কোটি টাকা হিসেবে তিন বছরে ২১ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট ৩৬ কোটি টাকা দিয়েছেন। তবে ২০১৪ সালে সার্বিকভাবে ভিশন টেল-এর কাছে আরও পাওনা থেকে যায় ১৪৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আট বছর পরে ২০২২ সালে তা হয় ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭১ টাকা।
সোমবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছর। এ সপ্তাহেই পুলিশ এই পরোয়ানা কার্যকর করবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। আগাম এই তথ্য জানতে পেরে আসিফ দেশ ছাড়েন।
দুই বছরেও পরোয়ানা কার্যকর না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাশিদুল ইসলাম সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি অনেক আগের পরোয়ানা। উনি তো বেড়া পৌরসভার মেয়র। আমি জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এখানে আছি। তবে এই পরোয়ানা কার্যকর করার বিষয়ে সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আশা করি অল্প কিছুদিনের মধ্যে পরোয়ানা কার্যকর হবে।’
ঠিক কবে নাগাদ পরোয়ানা কার্যকর হবে জানতে চাইলে রাশিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছি না।’
এই পরোয়ানা তামিল করার জন্য ২০২২ সালের ২৩ মে পাবনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারিস্তা করিম নথিতে স্বাক্ষর করেন। এতে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অফিসার ইনচার্জ বেড়া থানাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো’ লিখে তিনি স্বাক্ষর করেন।
ফারিস্তা করিম এখন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাবনা ডিসি অফিসের জেনারেল সার্টিফিকেট কোর্ট এই পরোয়ানা জারি করে। জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার হিসেবে আমি এতে স্বাক্ষর করি। রাজস্ব পরিশোধের জন্য এসব ক্ষেত্রে চিঠি দেওয়া হয়। বারবার চিঠি দেওয়ার পরও সাড়া না পেলে সাধারণত পরোয়ানা জারি করা হয়। ওনার ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল, আমার তা মনে নেই।’
এতদিনেও পরোয়ানা তামিল না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে গতকাল বিকেলে তিনি বলেন, ‘এটা তো বেশ আগের পরোয়ানা। কেন তামিল হয়নি তা তো ওনারা (পুলিশ প্রশাসন) বলবেন। আমি সম্প্রতি বদলি হয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়াতে আছি।’
এদিকে ভিশন টেল লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম আসিফ শামসের রাজস্ব ফাঁকি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মিরা জানতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কমিশনার মুশফিক মান্নান চৌধুরীর সঙ্গে পর পর দুই দিন (রবি, সোমবার) যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসিতে সম্প্রতি আলাপ-আলোচনা হয়েছে।’ তবে দ্বিতীয় দিন তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ের ফাইলটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
পরোয়ানাপত্রে শামসের পরিচয় উল্লেখ করা হয়, ‘এস এম আসিফ শামস, চেয়ারম্যান, ভিশন টেল লিমিটেড’। এতে তার ঢাকার ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা উভয়ই উল্লেখ করা হয়। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল এস এম আসিফ শামসের মোবাইল ফোনে গণমাধ্যম কর্মিরা বেশ কয়েকবার ফোন করে। কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply