আনোয়ার হোসন নিজস্বপ্রতিনিধিঃ জলবায়ু পরিবর্তনের ঘাত প্রতিঘাত মোকাবিলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এলাকায় আপর সুন্দরবন রেস্টোরেশন প্রকল্প গ্রহণ করেছেন বন বিভাগ। এই আওতায় সুন্দরবনের বাগেরহাটের বলেশ্বর থেকে সাতক্ষীরার কালিন্দি নদী পর্যন্ত এলাকায় ম্যানগ্রোভ বনায়ন করা হবে।
ইতোমধ্যেই ফরাসি প্রতিনিধিদল সুন্দরবন পরিদর্শন করেছে। এ বছরেই শুরু হবে প্রকল্প। প্রথম ধাপে ব্যয় হবে ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরো। মিষ্টি আর লোনা পানির মিশ্রণে গড়ে ওঠা অনন্য বৈশিষ্ট্যের এক মাত্র ম্যানগ্রোভ বন্যঅঞ্চল সুন্দরবন। এই বনে আগে যেসব নদী ও খাল দিয়ে মিষ্টি পানি প্রবাহিত হতো তা কালের আবর্তে ও মানুষ্য সৃষ্ট কারণে আজ প্রায় বিলীন
গত বছরের ১০ এবং ১১ই সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বাংলাদেশ সফর করেন। ফরাসি সরকার জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে সহায়তা করতে চায় বলে তিনি জানিয়েছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা সুন্দরবন সহএর উপরিভাগে গ্রাম্যঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার জন্য আইইউসিএন বাংলাদেশের সহায়তায় ‘আপর সুন্দরবন রেস্টোরেশন প্রোগ্রাম’ এর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানগ্রোভ ইকোলজিস্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘ম্যানগ্রোভ বনায়ন সৃষ্টির জন্য গবেষণা করে সুন্দরবনে জল ও স্থলের অবস্থান অনুযায়ী নির্দিষ্ট প্রজাতির গাছ রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাট থেকে সাতক্ষীরার মধ্যে অবস্থিত এমন ৫২টি নদী ও খালের পাশে বিলীন হয়ে যাওয়া ম্যানগ্রোভ বনঅঞ্চল আবার সৃজন করতে চায় বন বিভাগ। এর মধ্যে দিয়ে সুন্দরবনের উপরিভাগে হারিয়ে যাওয়া অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে চায় বন বিভাগ।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, ‘বন বিভাগের নেওয়া দীর্ঘমেয়াদি এ প্রকল্পে অর্থায়ন আসবে জলবায়ু তহবিলের লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের ফ্রান্সের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অর্থ থেকে। বন বিভাগের সঙ্গে যা বাস্তবায়ন করবে ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগ সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় আপার সুন্দরবন রেস্টোরেশন প্রোগ্রাম’ নামে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদ থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কালিন্দি নদী পর্যন্ত ছোট-বড় ৫২টি নদ-নদী ও খাল শরণখোলা, মোড়লগঞ্জ, মোংলা, দাকোপ, কয়রা ও শ্যামনগর উপজেলার গ্রাম অঞ্চলের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে। যেসব নদী ও খালের মিষ্টি পানির সঙ্গে পরিবাহিত পলিমাটি ও বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের লোনা পানির মিশ্রণেই তৈরি হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন।
মাত্র এক শতাব্দী আগেও সুন্দরবনের উপরিভাগে ম্যানগ্রোভ বনে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ছিল। কিন্তু গাছপালা কেটে মানব বসতি তৈরি, নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধ দেওয়া, ঘের করা ইত্যাদি মানব সৃষ্ট কারণে এই ৫২টি নদী ও খালে পানি প্রবাহ বর্তমানে কমে গেছে। কোথাও প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে একেবারে। কোথাও সুইসগেট বসিয়ে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে এই ৫২টি নদী ও খালের তীরবর্তী ম্যানগ্রোভ বন বিলীন হয়ে গেছে আজ।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply