নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য মোটরসাইকেল দায়ী। তারা নিজেদের পথের রাজা মনে করেন । এটা একটা উপদ্রব। আমরা যে পারি না, তা নয়। এখন ঢাকা শহরে কোথাও হেলমেটছাড়া চালক-যাত্রী পাবেন না। আর যারা বাইকে হেলমেট পরে না, তারা হলো রাজনৈতিক কর্মী। এখন আগের চেয়ে উল্টো পথে চলার অভ্যাস অনেক কমেছে আরো কমে যাবে। ভিআইপি বিড়ম্বনাও অনেক কমেছে। নতুন সড়ক আইনে বেশি জরিমানা মানে বেশি অর্থ নেওয়া নয়। বেশি জরিমানা দিলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।’- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেছেন।
মন্ত্রী বলেছেন, সড়কে শৃঙ্খলার জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। কিছু গাড়ি আছে, তারা সিটিং সার্ভিস লিখে রাখে। আসলে তারা সিটিং সার্ভিস না, চিটিং সার্ভিস। নতুন আইন বাস্তবায়ন করা হবে। কিছুদিন শিথিল করেছিলাম সচেতনতা বাড়াতে। দু’সপ্তাহ সময় দিয়েছিলাম, সেটা শেষ হয়েছে। আজ থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হবে। যত বাধাই আসুক, আমি এগিয়ে যাবো।
আজ রবিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের (এআইইউবি) অডিটোরিয়ামে সড়ক নিরাপত্তা ও সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বিষয়ক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এসময় নিজেকে মন্ত্রী নয়, দেশের একজন কর্মী মনে করেন বলে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি কখনোই নিজেকে দেশের মন্ত্রী ভাবি না, একজন কর্মী মনে করি। আমি আমার কাজকে ভালোবাসি। এজন্য কঠিন পরিশ্রম করি।
কাদের বলেন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলাম। মৃত্যুর কাছাকাছি থেকে ফিরে এসেছি। সেই কঠিন মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মমতাময়ী মায়ের মতো পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমার প্রাণরক্ষায় দেবী শেঠি ভূমিকা রেখেছেন।
তিনি বলেন, আমি ছাত্র হিসেবে ভালো ছিলাম। স্কলারশিপের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মওদুদ আহমেদ। মা বললেন, বাবা, তুমি আর নির্বাচন করো না। সেটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ১৯৯৬ সালে বিপুল ভোটে জয়লাভ করি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সেই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিলেন। আমি কাজ-পাগল মানুষ। আমার সময়েই বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
কাদের বলেন, রোড সেক্টর খুব চ্যালেঞ্জিং। আমরা সড়ক যোগাযোগ ক্ষেত্রে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর ডায়নামিক নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মাসেতু থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বললেন, তারা সরে গেছে, তাতে কী। বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু হবে। পদ্মাসেতু এখন দাঁড়িয়ে গেছে। আমি ১৭৯ বার সেই সেতু পরিদর্শন করেছি। ২০২১ সালেই পদ্মাসেতু খুলে দেওয়া হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী টানেল হচ্ছে। মেট্রোরেলের কাজও চলছে। মোট ছয়টি মেট্রোরেল তৈরি করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে সেটা চালু হবে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল করার চিন্তাভাবনা করছি। ঢাকার বাইরে ১০টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছি, আরও ১০টি নির্মাণাধীন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেন করা হবে। এ মহাসড়কে এডিবি অর্থায়ন করবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কও চার লেন হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব মহাসড়ক চার লেন করা হবে। সেনাবাহিনী এত সুন্দরভাবে তৈরি করেছে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা সড়ক ইউরোপের রাস্তাকেও হার মানাবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের কমতি নেই। কিন্তু, আমাদের সংকট হচ্ছে সড়কে শৃঙ্খলা। এই শৃঙ্খলা ফেরাতে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে যাচ্ছি। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে স্থানীয় জনগণ রাস্তায় নেমে আসে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি। যে দেশ পাকিস্তানকে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছে, সেই বাংলাদেশ এখন সব সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। এখন পাকিস্তানের টিভির টকশোতে আলোচনা হয়, মুঝে বাংলাদেশ বানাদো।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এআইইউবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান নাদিয়া আনোয়ার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল হোসেন, ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.চার্লস সি ভিনালুয়েভা প্রমুখ।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply