এইচ এম আমন কক্সবাজার : কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আবারও শুরু হয়েছে সাগরপথে মানবপাচার। মূলত রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে সক্রিয় দালাল চক্র। গত একমাসে উখিয়া ও টেকনাফ উপকূল থেকে শতাধিক রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে আইন-শৃংখলা বাহিনী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানবপাচার বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে কঠোর হতে হবে। অবশ্য পুলিশের দাবি, দালাল চক্রকে চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়া এবং ট্রলার ডুবিতে নিহতের ঘটনা বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোড়ন তোলে ২০১৪-১৫ সালে। উঠে আসে দালালদের নির্যাতনের নির্মম চিত্র। একই সময় থাইল্যান্ডের বিভিন্ন জঙ্গলে সন্ধান মেলে অসংখ্য গণকবরের। এরপর সেই পথে বাংলাদেশিদের যাওয়া থামলেও থামেনি রোহিঙ্গা পাচার। মানবপাচার রোধে তখন প্রশাসনের অভিযান শুরু হলেও কিছুদিনের মধ্যে তা ঝিমিয়ে পড়ে। ৩ বছর বন্ধ থাকার পর আবারও কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল দিয়ে শুরু হয়েছে সাগরপথে মানবপাচার।
স্থানীয়রা বলছেন, মানাবপাচারকারীরা আগের মতোই সব কাজ শুরু করেছেন। অভিযান শুরু না হলে এটা থামবে না। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বের হওয়া বন্ধ করতে হবে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি আত্মগোপনে থাকা চিহ্নিত দালাল ও মানবপাচারকারীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে তারা মাঠে নেমেছেন। তবে জেলা পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তা জানালেন, মানবপাচারে জড়িত দালাল চক্রকে চিহ্নিত করাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
জানাগেছে, ২২ নভেম্বর টেকনাফের উপকূলীয় বাহারছড়া এলাকার চিহ্নিত পাচারকারি নবী হোসেন ও ইমাম হোসেন মিলে মানবপাচার করছিলো। ওই সময় ঘাট মালিক আব্দুল আলী বাঁধা প্রদান করলে তাকে ব্যাপক মারধর করে। পরে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওই মানবপাচারকারীদের আতংকে ভুগছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় চিহ্নিত পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগি আব্দুল আলী।
সূত্রে জানাগেছে, প্রতি বছর শীত মৌসুমে মানবপাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেন। এর মধ্যে কয়েকটি ফিশিং বোট যোগে সাগরে অপেক্ষামান বড় ট্রলারে শতাধিক মালয়েশিয়াগামী যাত্রীকে পৌঁছে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই উপকূল দিয়ে মানবপাচারের ফলে এলাকার সাধারণ মানুষ হয়রানীর শিকার হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা জানান, ওইসব মানবপাচারকারীদের কারনে এলাকাবাসীর ঘুম নেই। টেকনাফের উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়ার বিভিন্ন নৌ-ঘাটে সক্রিয় রয়েছে এসব পাচারকারী।
এ অবৈধ মানব পাচার ব্যবসা করে এলাকায় কোটিপতি হয়েছেন অনেকেই। বনে গেছেন রাতারাতি সহায় সম্পত্তির মালিক। মানবপাচারকারীরা অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়া মানব পাচার করতে গিয়ে সমূদ্রে ডুবে অনেকের সলিল সমাধি হয়েছেন। এছাড়া মালয়েশিয়া পৌঁছে মুক্তিপণ আদায় করতে না পারায়ও প্রাণ দিতে হয়েছে অনেকের। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা ও কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়ায় মানব পাচার চক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
সূত্রে আরও জানায়, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের খোঁজে আইনশৃংখলা বাহিনী তল্লাশী অভিযানের পর থেকে চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মানব পাচারকারী দালালরাও গা ঢাকা দিয়েছিলো। অনেক দালাল সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। যাওয়ার আগে পাচারকারী দালাল সিন্ডিকেট তাদের উত্তরসূরী হিসেবে নতুন পাচারকারী সৃষ্টি করেছেন। বর্তমানে এরা কৌশলে সাগর পথে মালয়েশিয়া আদম পাচার অব্যাহত রেখেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাহারছড়া ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া এলাকার কয়েকজন যুবক জানান, আগে যারা মানব পাচার কাজে জড়িত ছিল তাদের অনেকেই মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছেন। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে নতুন কিছু মানব পাচারকারী আইন শৃংখলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, নতুন কৌশলে যারা মানব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা হলেন, বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী কোনার পাড়ার নবী হোসেন, ইমাম হোসেন, মো. ইলিয়াস মেম্বার, আজিজুর রহমান, রোহিঙ্গা ফয়েজ, জহির আহমেদ, রাজারছড়া এলাকার মোক্তার আহমদ, আব্দুল হামিদসহ আরও ১০/১৫জন সহযোগি।
এই মানবপাচার দালালদের মাধ্যমে উপজেলার বাহারছড়া উপকূল দিয়ে প্রতিনিয়ত শত শত নারী-পুরুষ পাচার করছেন বলে সূত্রের দাবী। এলাকায় মানবপাচার দালালদের বিরুদ্ধে পাচার কাজে বাধা দিতে এলে মারধর, বিভিন্ন মামলার হুমকি ধমকি দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতিতে রেখেছেন ওই সিন্ডিকেটটি।
এ নিয়ে বাহারছড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. ইলিয়াছ জানান, প্রতিনিয়ত মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে সাগর পথে মানবপাচার করে যাচ্ছেন কয়েকজন দালাল। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) এবিএমএস দোহা জানান, এবিষয়ে কেউ অবগত করেনি। তবে মানবপাচারকারী যেই হোক না কেন আইনের আওতায় আনা হবে।
এ নিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে দালাল চক্র। মূল পাচারকারী হিসেবে আমরা যাদের পাবো তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply