December 21, 2024, 5:02 pm

তথ্য ও সংবাদ শিরোনামঃ
চাঁদাবাজির কারণে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ঢাকা শহরে চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরির কাজ চলমান, দু-তিনদিনের মধ্যে তালিকা ধরে অভিযান শুরু হবে। নাটোরে সদর উপজেলার বড়হরিশপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে ডাকাতি। স্বৈরশাসক ও ফ্যাসিবাদের দোসর অস্ত্র ব্যবসায়ী দেলু নাঃগঞ্জ মহানগর তরুন দলের সদস্য সচিব ৫ আগস্টের পরে হচ্ছে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা, চলছে দেদার অর্থ উপার্জন, মামলার বাদীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে! মুচলেকা দিয়ে যশোরের মাদ্রাসায় ‘জঙ্গি নাটকের’ অবসান। মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে সাদপন্থিদের নিষিদ্ধকরণ ও শাস্তির ‎‎দাবীতে মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল। ব্যাংক ডাকাতির মত ঘটনা যেন আর না ঘটে : মোমিন মেহেদী ভালুকায় ছিন্নমূল ও শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ ব্যাংক ডাকাতির মত ঘটনা যেন আর না ঘটে: মোমিন মেহেদী ইজতেমার ময়দানে হামলার বিচারের দাবিতে ভালুকায় মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত। একটি সেতুর অভাবে, লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি। বিএসএমএমইউর সাথে বারডেম একাডেমি ও টিচার্স এসোসিয়েশনের সভা অনুষ্ঠিত। বিজ্ঞান আশীর্বাদ ও অভিশাপ প্রথম এরোপ্লেন আবিষ্কারের কাহিনী রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের অসাধ্য সাধন। নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির তীব্র প্রতিবাদ বিএসএমএমইউতে মহান বিজয় দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আলোচনা সভা সাউন্ডবাংলা-বিজয়ের কবিতা-ছড়া পাঠে ৫ বিজয়ী ভালুকায় নতুন ইউএনও’র যোগদান ভালুকায় বিএনপির বিজয় র‍্যালি অনুষ্ঠিত নতুনধারার ৪ দিনব্যাপী বিজয়শ্রদ্ধা কর্মসূচি সমাপ্ত আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন সাংবাদিক নুরুদ্দীন আহমেদ ভালুকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে মহান বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের ৭ নেতাকর্মী আটক টঙ্গীবাড়ী প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ৭১ এর বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন। স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শহীদ জিয়ার মাজারে নাগরিক দলের শ্রদ্ধা সাদপন্থী শীর্ষ নেতাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা টঙ্গিবাড়ীতে শীতকালীন ক্রিকেট টুনামেন্টের উদ্ধোধন অধ্যাপক ড. মু. নজরুল ইসলাম তামিজী কবি সংসদ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান নির্বাচিত। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসী শুভেচ্ছা জানিয়েছে এনডিপি। তারেক রহমান বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলে লক্ষ জনতার স্রোত নামবে।

৫ আগস্টের পরে হচ্ছে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা, চলছে দেদার অর্থ উপার্জন, মামলার বাদীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে!

৫ আগস্টের পরে হচ্ছে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা, চলছে দেদার অর্থ উপার্জন, মামলার বাদীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে!

দুসস ডেস্কঃ হত্যা মামলা যার-তার নামে৷ অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত বাদীও জানেন না, কোথায় কে তাঁর আপনজন হত্যার বিচার চেয়ে মামলা ঠুকেছে৷ জীবিত ব্যক্তি হঠাৎ জানতে পারেন তাকে মৃত দেখিয়ে হয়ে গেছে মামলা, চলছে দেদার অর্থ উপার্জন!

স্বামীকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন এক নারী৷ মামলা দায়েরের তিন মাস পর ওই নারীর স্বামী থানায় হাজির হয়ে জানান তিনি জীবিত৷

ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার আশুলিয়ায়৷
এমন অনেক মামলার খবরও জানা যাচ্ছে, যেখানে একটি হত্যার ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে৷ অনেক জায়গায় মামলা নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে৷

টাকা নিয়ে জেলে ঢুকায়, বের করে!
গত ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ পৌর শহরে গুলিবিদ্ধ হন মো. জহুর আলী৷ ঘটনার এক মাস পর তার বড় ভাই হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিলেন৷ সেই মামলায় আসামি ধরা ও ছাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন গুলিবিদ্ধ জহুর আলী৷ নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ আমারে গুলি করছে৷ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করবো৷ কিন্তু পরে দেখি মাসুম হেলাল সবাইরে মামলায় ঢুকাইয়া দিছে৷ এই মামলা নিয়া এখন ব্যবসা শুরু হইছে৷ সে (মাসুম হেলাল) কোটি টাকা নিছে৷ শুনছি সে এখন ক্যানাডা চইলা যাইবো৷ টাকা নিয়ে জেলে ঢুকায়, বের করে৷ মামলায় যারার নাম নাই তারারে পুলিশ ধরে বেশি৷ লোকজন বলে, আমরা টাকা নিচ্ছি৷ এটা মিথ্যা৷ আমরা কোনো টাকা পাই নাই৷ আমরা গরিব মানুষ৷ এখন আমরা পড়ছি মহাবিপদে৷” গুলিতে আহত মো. জহুর আলী এখন ঢাকা পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) আছেন৷

সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না গণমাধ্যমে বলেন, ‘‘মামলা হলেই সেখানে বাণিজ্য থাকবে৷ আমাদের কাছেও এমন বহু অভিযোগ আসছে৷ এখন সমস্যা হচ্ছে, কোর্ট চত্ত্বর থেকে আইনজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ আসলে এই সরকার সংস্কারের নামে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ এই সরকারের উচিত হবে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা৷ তাছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো পথ আমি দেখি না৷”

বাবার আগে অচেনা লোকের মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ অক্টোবর রাজধানীর ঝিগাতলা মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মোবাশ্বর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মোতালিব (১৪)৷ সেই ঘটনায় গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মোতালিবের বাবা আব্দুল মতিন৷ এই ঘটনায় ৩০ অক্টোবর আদালতে একটি মামলার অভিযোগ দেন শেখ মুহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ নামের এক ব্যক্তি৷ মামলাটি হাজারীবাগ থানায় হত্যা মামলা হিসেবে দায়ের করার নির্দেশ দেন আদালত৷ মাছুম বিল্লাহ ভিক্টিমের নাম উল্লেখ করেন আব্দুল মোতালেব মুন্না৷ তার বয়স উল্লেখ করেন ১২ বছর৷ বাদীর সঙ্গে ভিক্টিমের কোনো সম্পর্ক নেই৷ শিক্ষার্থী মোতালিবের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায়৷ মাছুম বিল্লাহর বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুরে৷

আব্দুল মতিন এজাহারে ১৭৭ জন আসামির নাম উল্লেখ করেছেন৷ এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷ অন্যদিকে মাছুম বিল্লাহ যে অভিযোগ দিয়েছেন, সেখানে আসামি করেছেন ২০ জনকে৷ তাদের কারো বাসা ওই এলাকায় নয়, অধিকাংশ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তও নয়৷ আসামিদের মধ্যে পুলিশ ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডেও নিয়েছে৷ একটি প্রতিষ্ঠান দখলে নেওয়ার জন্য এই মামলা বলে আসামিদের অভিযোগ৷

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক প্রচার সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা এম এ রাজ্জাক গণমাধ্যমে বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটি দখলে নেওয়ার জন্য মাছুম বিল্লাহ এই মামলা করেছেন৷ ওই মামলার পর ডিবির একজন এসআই এসে আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে দুইজনকে ধরে নিয়ে গেছে৷ প্রতিষ্ঠানটি মাছুম বিল্লার হাতে তুলে দিয়েছে৷ এখন এদের অন্য মামলায়ও ফাঁসানো হবে বলে টাকা চাচ্ছে৷ বিষয়টি জানিয়ে আমি পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ করেছি৷’’

নিহত শিক্ষার্থীর বাবা আব্দুল মতিন গণমাধ্যমে বলেন, ‘‘ছেলে হত্যার ঘটনায় আমি নিজে মামলা করেছি৷ অন্য কেউ কেন মামলা করবে? আমি ওই ব্যক্তিকে চিনি না৷ তিনি নিশ্চয় ভালো উদ্দেশ্যে এই মামলা করেননি৷ হাজারীবাগ থানার ওসি ফোন করে আমাকে জানিয়েছেন মামলার কথা৷ আমি নিজেও যে মামলাটি করেছি, সেখানে ছাত্ররাই আসামিদের নাম উল্লেখ করেছে৷ আমি এদের কাউকে চিনি না৷ তারপরও এই মামলা বাদি আমি৷’’

আসামি আসলে ৪, নাকি ২০৮৭ জন?
যাত্রাবাড়ি থানার সামনে গত ৫ আগস্ট নিহত হন পিকআপ চালক মো. শাহীন৷ ওই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম৷ মামলায় ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে৷ অথচ স্বপ্না বেগম বলেন, ‘‘আমি মামলায় মাত্র ৪ জনকে আসামি করেছিলাম৷ কিন্তু এত মানুষের নাম কিভাবে মামলায় যুক্ত হলো সেটা আমি জানি না৷ পুলিশ আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেনি৷”

ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘‘এসব মামলায় কাউকে হয়রানির সুযোগ নেই৷ তদন্ত না করে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না৷ এমনকি কেউ যদি ভুয়া বা হয়রানি করতে মামলা করেন, তাহলে বাদীর বিরুদ্ধেও আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে৷ আর কেউ যদি অনৈতিক সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে, অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো৷’’

‘মৃত’ ব্যক্তির প্রতিবাদ
আশুলিয়া থানা পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৪ অক্টোবর কুলসুম বেগম (২১) নামের এক নারী তার স্বামীকে হত্যার অভিযোগ এনে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন৷ এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করা হয়৷ ৮ নভেম্বর মামলাটি ঢাকার আশুলিয়া থানায় এজাহারভুক্ত হয়৷ মামলার বাদী কুলসুম বেগম এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট সকালে তার স্বামী মো. আল আমিন মিয়া (৩৪) মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন৷ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকেল ৪টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় বিজয়মিছিলে তিনিও ছিলেন৷ তবে পরাজয় মেনে না নিতে পেরে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়৷ এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার স্বামী নিহত হন৷

তিন মাস পরে থানায় হাজির হন আল আমিন৷ সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘৫ আগস্ট সে (স্ত্রী) আমার সঙ্গে সিলেটেই ছিল৷ এর তিন-চার দিন পর ঝগড়া করে মানিকগঞ্জে বাবার বাড়ি চলে যায়৷ এরপর আর তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি৷ তিন-চার দিন আগে একজনের কাছ থেকে জানতে পারি, আমি ৫ তারিখের (৫ আগস্ট) আন্দোলনে মারা গেছি উল্লেখ করে সে একটা মামলা করেছে৷ ওই মামলার একজন আসামি আমাকে ফোন দিয়া ঘটনাটি বলছে৷ এরপরই আমি পুলিশের কাছে যাই৷ আমি জীবিত আছি৷ আমার স্ত্রী মিথ্যা মামলা করেছে৷ আমি এখনো মারা যাইনি৷ আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি৷’’

জীবিত কিশোরকে মৃত দেখিয়ে মামলা, পরিবার আত্মগোপনে
সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু গণমাধ্যমে বলেন, ‘‘শত শত মিথ্যা মামলায় তো আদালত শুনানিই করছে না৷ হাইকোর্টে একটা বেঞ্চ করেছে, সেখানে একদিন ৯ হাজার আবেদন নিল৷ পরে একদিন দেড় হাজার আবেদন নিয়েছে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত ৩০০ আবেদনেরও শুনানি হয়নি৷ আদালত বলছে, আরেকটু অপেক্ষা করতে৷ এদিকে আজকেই আমি একটা ঘটনা জানলাম৷ কেরানীগঞ্জে ১২ বছরের এক কিশোর মারা গেছে বলে শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামী করে একটা মামলা হয়েছে৷ আসলে ওই কিশোর মারা যায়নি৷ তার পরিবারকে পালিয়ে থাকতে বলেছে৷ ছেলেকে নিয়ে তার বাবা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন৷ বনশ্রীতে ৬২ জন সাবেক সচিবের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে৷ ওই মামলায় বনশ্রী ও আফতাবনগর সোসাইটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও আসামি করা হয়েছে৷ ওই মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য ৫-১০ লাখ টাকা করে চাচ্ছে৷ ফলে মানুষ এখন কোথায় ন্যায় বিচার পাবে?’’

কার মামলা কে করে, কতবার করে!
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৫ আগস্ট ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় কিশোর মাহমুদুল হাসান৷ মাসখানেক পর ১২ সেপ্টেম্বর তার বাবা রিকশাচালক মিজানুর রহমান ঢাকার আদালতে যান ছেলে হত্যার ঘটনায় মামলা করতে৷ আদালত তার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন৷ পরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ আদালতকে জানায়, ওই ঘটনায় আগেই একজন মামলা করেছেন৷ ফলে বাবার আবেদন খারিজ হয়ে যায়৷ এরপর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, মাহমুদুল (১৫) হত্যায় একটি নয়, দুটি মামলা হয়েছে৷ এর একটি ডেমরা থানায়, তাতে আসামি করা হয় ৯৩ জনকে৷ এতে বলা হয়, মাহমুদুলকে ডেমরা এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়৷ অপর মামলাটি যাত্রাবাড়ী থানায়, তাতে আসামি করা হয় ৩৭ জনকে৷ এই মামলায় বলা হয়, মাহমুদুলকে হত্যা করা হয়েছে যাত্রাবাড়ী৷ দুই মামলায় দুই থানার পুলিশ ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে৷

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, ‘‘অনেকগুলো ঘটনায় এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে৷ কারণ, ৫ আগস্টের আগের প্রত্যেকটি ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটা মামলা করেছে৷ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পরিবার মামলা করতে গিয়ে দেখে পুলিশ মামলা করেছে৷ সেখানে আসামি করা হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের৷ ফলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে৷ সরকার ট্রাইব্যুনাল করেছে৷ সেখানেই এই মামলাগুলো একত্রিত করে তদন্ত করা হবে, যাতে সঠিক বিচার হয়৷”

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক বিভিন্ন মামলায় ঢালাওভাবে আসামি করার অভিযোগ সামনে আসছে৷ এ নিয়ে বিভিন্ন সময় অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা কথা বলেছেন৷ আইনজ্ঞরা বলছেন, যার বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ আনা হচ্ছে, রায়ে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হলে মামলাকারীর সমান শাস্তি হতে পারে৷ অর্থাৎ দোষী প্রমাণ হলে আসামির যে শাস্তি হতো, নির্দোষ প্রমাণ হলে মামলাকারীকে একই শাস্তি দেওয়া হতে পারে৷

সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা গণমাধ্যমে বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগকারী কিংবা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ২১১ ধারা অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়৷ তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো, ওই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে হবে৷ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের যদি মনে হয়, আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন, তুচ্ছ, বিরক্তিকর বা হয়রানিমূলক এবং আসামির প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে মামলাটি করা হয়েছে, তাহলে এ ধরনের মামলা মিথ্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে৷ মামলা মিথ্যা বা ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগকারী বা মামলা দায়েরকারীকে দন্ড দিতে পারেন৷ এ ছাড়া সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বাদী হয়ে পৃথক মামলা দায়ের করতে পারেন৷”

মামলা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন৷ এমনকি আদালত মিথ্যা অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে দন্ডমূলক ব্যবস্থাও নিতে পারেন৷ আমলযোগ্য নয়- এ রকম কোনো মামলায় কোনো পুলিশ কর্মকর্তা মিথ্যা প্রতিবেদন দিলে তার বিরুদ্ধেও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দিতে পারেন৷

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মামলা করে যাতে কাউকে হয়রানি করা না যায়, সেজন্য ডিসি, এসপি, জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে জেলা পর্যায়ে কমিটি করার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল৷ তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় মামলা করে যাতে কেউ সুযোগ নিতে না পারে, সেজন্য এই কমিটি মামলার এজাহার বা এফআইআর করার আগে যাচাই করে দেখবে৷ কারণ, হয়রানিমূলক মামলা নিয়ে তারাও বিব্রত৷ এ নিয়ে কী করা যায় সেটা নিয়ে তারা ভাবছেন৷ গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন৷

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আজ যারা হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলা করছেন, কাউকে কাউকে নাকি হুমকিও দেওয়া হচ্ছে যে টাকা না দিলে মামলা করা হবে৷” হয়রানিমূলক মামলাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা মনে রাখেন, আমি যদি এই মন্ত্রণালয়ে থাকি, আপনাদের কীভাবে শাস্তির আওতায় আনা যায়, সেই আইন খুঁজে বের করবো৷’’

আমাদের প্রকাশিত তথ্য ও সংবাদ আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)

Design by Raytahost.com