ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায় কোলকাতা প্রতিনিধি: রেখা শুধু ভারতের নন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ব্রিটেন, আমেরিকা সহ গোটা বিশ্বের হৃদস্পন্দন।কিন্তু তার জীবনের শুরু থেকেই বাবার অবহেলা,পারিবারিক বঞ্চনার মধ্যে থেকে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যেতে হয়েছিল। অজস্র কাঁটা বিছানো পথে তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠতে হয়েছে। আসল নাম ভানুরেখা গণেশন। পিতা শিবাজী গণেশনও ছিলেন নামী অভিনেতা।
বলিউডের সবচেয়ে সুন্দরী, প্রতিভাবান এবং অভিজ্ঞ অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন রেখা। বলিউড তথা বি-টাউনের এত বড় নাম থাকা সত্বেও ব্যক্তিগত জীবনে এখনও রহস্য রয়ে গেছে। বিনোদন জগতে শোনা যায়, রেখা তাঁর কেরিয়ারে যতটা খ্যাতি পেয়েছেন, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সমান কষ্ট পেয়েছেন।
১৯৫৪ সালের ১০ অক্টোবর, চেন্নাইয়ে জন্ম হয় রেখার। নায়িকার জীবন বরাবরই বিতর্কে ঘেরা। তিনি এমন জায়গায় রয়েছেন, যেখানে মানুষ পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখে। এই খ্যাতি পেতে রেখাকেও কঠোর পরিশ্রম ও বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে। ১৩ বছর বয়সে কেরিয়ার শুরু হয় রেখার। তামিল ছবির মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন এবং এরপর বলিউডে আসেন। যশ চোপড়া সহ আরও একাধিক নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করে নাম- যশ হয় তাঁর।
রেখার জীবনে বহু মানুষ এসেছেন। এমনকী খুব অল্প বয়স্ক সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথাও শোনা যায়। বহু সত্যি সামনে আসেনি। পর্দায় ভালোবাসায় তিনি সফল হলেও, বাস্তবে কখনও সম্পর্কের রূপ নিতে দেখা যায়নি। প্রেমের ক্ষেত্রে রেখা বরাবরই দুর্ভাগা ছিলেন।
রেখার জীবনে দুটি মাইলফলক ছিল যা তাঁকে বদলে দেয়। প্রথমটি ছিল অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে রেখার সাক্ষাৎ, দ্বিতীয়টি ১৯৯০ সালে মুকেশ আগরওয়ালের সঙ্গে তাঁর বিয়ে। অমিতাভের সঙ্গে রেখার সম্পর্ক নিয়ে নানা গুজব ছিল। বিয়ের এক বছর পর আত্মহত্যা করেন রেখার স্বামী মুকেশ আগরওয়াল। এরপর মুকেশের পরিবার এবং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লোকজন রেখাকে দোষ দিতে শুরু করেন। সুভাষ ঘাই এবং অনুপম খেরের মতো বড় নামও সে তালিকায় ছিল।
মুকেশের পর রেখা বিয়ে করেন বিনোদ মেহরাকে। কিন্তু এই বিয়ে মেনে নেয়নি কেউ। শোনা যায়, কলকাতায় বিয়ে সেরে দু’জনেই যখন মুম্বই ফিরে যান, তখন নববধূ রেখাকে জুতো দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। এই বিয়েতা নায়িকার শাশুড়ি কমলা সন্তুষ্ট ছিলেন না। রেখা আশীর্বাদ নিতে নীচু হতেই তাঁর শাশুড়ি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। এমনকী রেখাকে মারার জন্য তিনি চটিও বের করেন এবং নতুন বৌকে ঢুকতে দিতেও অস্বীকার করেন তিনি।
রেখার নাম অনেক তারকার সঙ্গে জড়ায়। যার কারণে তিনি বহু বিতর্কে জড়ান। অমিতাভ ছাড়াও নবীন নিসচল, বিশ্বজিৎ, জিতেন্দ্র, শত্রুঘ্ন সিনহা, বিনোদ মেহরা, সঞ্জয় দত্ত, অক্ষয় কুমারের মতো অভিনেতাদের সঙ্গেও রেখার প্রেম- সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা শোনা যায়। তবে নায়িকার জীবনে প্রেম টেকেনি। কোনও না কোনও কারণে রেখার ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে বিচ্ছেদ হত। এটা ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলেছিল।
সিঁথিতে কার নামের সিঁদুর?
রেখার সিঁথিতে সিঁদুরটি কার নামে, তা আজও গোপন। গত কয়েক বছর ধরে এ নিয়ে বিতর্ক ও প্রশ্ন অব্যাহত রয়েছে। মানুষ জানতে চায় কার নামে তিনি সিঁদুর পরেন। ঋষি কাপুর ও নীতু সিংয়ের বিয়েতে রেখা সিঁদুর লাগিয়ে মঙ্গলসূত্র পরেছিলেন।
ভারতীয় চলচ্চিত্র তারকাদের মধ্যে অন্যতম নাম রেখা। তাঁর জীবনের সঙ্গে গভীর রহস্য জড়িয়ে আছে। তাঁকে সব সময় হাসতে দেখা যায়, জীবনের কষ্ট নিয়ে খুব একটা কথা বলেননি তিনি। রেখার কেরিয়ার যতই ভাল হোক না কেন, অভিনেত্রী তাঁর জীবনে নীরবে যে কষ্ট সহ্য করেছেন তা খুব কম মানুষ জানেন।
১৯৬৬ সালে রাঙ্গুলা রত্নম নামে একটি তেলুগু ছবির মাধ্যমে এক শিশু শিল্পী হিসাবে প্রথম সিনেমায় আবির্ভাব রেখার। নায়িকা হিসাবে শাওন ভাদো। কমেডি ছবি “খুব,সুরত” ছবির জন্য তিনি প্রথম ফিল্ম ফেয়ার পুরষ্কার পেয়েছেন।।
১৯৮১ সালে পরিচালক মুজাফফর আলীর “উমরাও জান” ছবি অসামান্য অভিনয় ও মুরজা নাচ পরিবেশন করে সারা ফিল্ম জগতে হৈচৈ ফেলে দেন। ছবিটি প্রচণ্ড হিট হয়ে উঠে। তারপর থেকে রেখাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয় নি।
ষাট বছর পেরিয়ে গেলেও তার সৌন্দর্য এখনো মন কেড়ে নেয়। মাত্র কিছুদিন আগেও তিনি একটি পুরষ্কার বিতরণ মঞ্চে সকলের অনুরোধে উমরাও জান ছবির মুজরো গানটি নেচে গেয়ে মাতিয়ে দিয়েছেন সকলকে। তার অমলিন সৌন্দর্যের কারণ সম্পর্কে জানা গেছে তিনি দৈনিক নির্দিষ্ট সময় একটানা দুঘন্টা যোগব্যায়াম চর্চা করেন।
রাজনীতি না করলেও তাকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত সংরক্ষিত আসনে রাজ্যসভার সদস্য করা হয়েছিল। তিনি সংসদে খুব কমই আসতেন। আমি আমার বাবার সঙ্গে পার্লামেন্টে গেলে হঠাৎ সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম রেখার। সেদিন তিনি এসেছিলেন অত্যন্ত গোপনে। বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংসদদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় তার সঙ্গে একটিবার করমর্দন করার জন্য। কিন্তু মুখে হাল্কা হাসির ছোঁয়াচ বুলিয়ে নিঃশব্দে তিনি বেরিয়ে আসতেই সাংবাদিকেরা ঘিরে ফেলেন তাকে। শেষ পর্যন্ত তার সুরক্ষা কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে গাড়িতে বসিয়ে দেন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply