নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অতি দ্রুত ধনী হওয়ার গতি বাংলাদেশে বেশি। এ দেশে ১০ শতাংশ মানুষের হাতে মোট সম্পদের ৩৮ শতাংশ রয়েছে। আয়বৈষম্য বাড়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাউথ এশিয়ান অ্যালায়েন্স ফর পোভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেছেন। তারা বৈষম্য নিরসনে ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানির প্রতি অন্যায্য কর ছাড় বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে ব্যবধান কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াসহ ৮ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
‘বৈষম্যহীন দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বিএমএ’র সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ, আইইডি’র নির্বাহী পরিচালক নূমান আহম্মেদ খান, ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মুশতাক আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিম উদ্দীন খান, অক্সফামের ম্যানেজার মঞ্জুর রশিদ, শিশু সংগঠক ডা. লেলিন চৌধুরী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়াসহ বাংলাদেশের বৈষম্য ও অসমতার পরিস্থিতি তুলে ধরে অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ বলেছেন পৃথিবীর সব দেশের মধ্যে বাংলাদেশেই অতি দ্রুত ধনী হওয়ার গতি সবচেয়ে বেশি। ১০ শতাংশ মানুষের হাতে মোট সম্পদের ৩৮ ভাগ রয়েছে। ১৯৮২ সালের আগ পর্যন্ত জাতীয় সংসদে আইনজীবী, শিক্ষক ও মধ্যবিত্ত ব্যক্তিদের দেখা যেত। এখন ৬০ শতাংশই ব্যবসায়ী। জাতীয় সংসদ ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্যই বেশি। এ অবস্থার পরিবর্তনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেছেন ,সামাজিক অসমতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আদিবাসী, দরিদ্র কৃষক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অধিকারহীন করে রাখা হয়েছে। তারা নানাভাবে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। যে কারণে তারা কথা বলতেও ভয় পান। দেশে শোষণ-বঞ্চনা বাড়ছে। আগে যারা এমন বঞ্চনার বিরুদ্ধে কথা বলতেন, তারাও নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন। যেটা আরও ভয়াবহ। কারণ এসব বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।
সূচনা বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিশ্বের মনীষীরা দারিদ্র্য ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও বৈষম্যের বিরুদ্ধে হয়েছিল। তাই রাষ্ট্র-সরকার ও নাগরিক সমাজ সবাইকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বৈষম্য ও দারিদ্র্য নিরসনে স্যাপির সুপারিশে বলা হয়, নারীদের জন্য বৈষম্য ও শোষণমূলক নয় এমন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, ন্যূনতম মজুরি আইন বাস্তবায়ন এবং লিঙ্গ বৈষম্যমূলক বেতন পরিহার করতে হবে। জলবায়ু বিপর্যয় রোধ ও জীবাশ্ম জ্বালানির অযৌক্তিক প্রভাব দূর করতে হবে। নারী ও ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বিগত ৩০ বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় বৈষম্য চরমভাবে বেড়েই চলেছে। কিন্তু এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীরা এমন ধরনের অর্থনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। যেখানে বাজার ও অর্থের একচ্ছত্র আধিপত্য। বৈষম্য নিরসনে আধিপত্য প্রতিহত করতে হবে। দুসস
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply