নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে ৪৭টি সাজানো মামলার আসামী হয়ে জেলের ঘানি টানছেন ঢাকা শান্তিবাগের বাসিন্দা আকরামুল আহসান কাঞ্চন (৪৮)। কিন্তু সেসব মামলার বাদীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এবার মিথ্যে ও সাজানো একটি মামলায় তাকে হাজিরা দিতে হচ্ছে চাঁদপুরের আদালতে।
এর আগে ২০১০ সাল থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিপুলসংখ্যক মামলা থেকে আকরামুল নিষ্পত্তি পেয়েছেন।
বাকি মামলাগুলোতে তিনি জামিনে রয়েছেন। অনেক মামলা মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় একেবারেই খালাস পেয়েছেন।
সংঘবদ্ধ চক্রটি তাকে কখনো মাদক বিক্রেতা, চোর-ডাকাত, কখনো আদম ব্যবসায়ী বলে মামলাগুলো করছে তার বিরুদ্বে।
হয়রানির শিকার এই কাঞ্চনকে আরেকটি মিথ্যে মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে যশোরে আটক করা হন।
ওই মামলায় তিনি আগে জামিনে থাকলেও সেখানে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে কাঞ্চনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
কাঞ্চনকে জানানো হয় গত বছর তথা ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ চাঁদপুরের আদালতে হাজীগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা জনৈক মো. সোহেল (পিতা-নুরুল হক, মাতা-ছালেহা বেগম, গ্রাম- রাজারগাঁও) এই নামীয় একজন তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ও মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে চাঁদপুরে একটি মামলা করেছে। মামলা নং- (০৩/২০১৯)।
যার বর্তমান ঠিকানা দেখানো হয়েছে কক্সবাজারের রামু উপজেলার সওদাগর পাড়া কাওয়াখোপ এলাকা। যে মামলায় তার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কাঞ্চন কখনও চাঁদপুরে আসেননি এবং তার বাড়িঘরও চাঁদপুরে না। মামলায় তার ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় প্রফেসর পাড়া, বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকার শান্তিবাগে।
মামলার বাদী সোহেলের ঠিকানার খোঁজে গেলে রাজারগাঁও গ্রামে তার কোন অস্তিস্তই মিলেনি। যে বাড়ির কথা বলা হয়েছে সে নামে কোনো বাড়িই নেই।
ওই এলাকার চেয়ারম্যান আবদুল হাদী মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানিয়েছেন মামলায় উল্লেখিত সোহেল নামে কোন ব্যক্তি ওই ইউনিয়নেই নেই।
তাছাড়া সেই ইউনিয়নের কোন সোহেল বা তার বাবা কক্সবাজারে অবস্থান করেন না।
এদিকে মামলার বিবাদীর খোঁজে একই উপজেলার পৌরসভাধীন প্রফেসর পাড়া এলাকায় গিয়েও আকরামুল আহসানের স্থায়ী ঠিকানার কোনো খোঁজ মিলেনি।
প্রফেসর পাড়া এলাকা যার নামে তথা হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের (অব.) সহকারী অধ্যাপক আবুল কালামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ১৯৯০ সাল থেকে তিনি ওই এলাকায় বসবাস করছেন।
কিন্তু গত ৩০ বছরে তিনি আকরামুল আহসান ও তার পিতা আনোয়ার উলাহ নামে কাউকে চেনেন না।
এদিকে মামলার এজাহারে বাদী ঘটনাস্থল উল্লেখ করে হাজীগঞ্জ রাজারগাঁও বেপারী বাড়ি।
ঘটনার বিবরণে জানায়, আসামী তার বাড়ি রাজারগাঁও এসে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রলোভন দেখায়।
পরবর্তীতে একরামুল তার অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে ২০১৬ সালের ২১ অক্টোবর মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে টেকনাফে জনৈক শামসুর বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখানে ১০/১২ জনও উপস্থিত ছিল।
তাদেরকে বলা হয় মালয়েশিয়া যেতে এখন টাকা লাগবে না। পরবর্তীতে একটি নৌকায় তুলে সমুদ্রে বড় জাহাজে অন্যদের কাছে তুলে দিয়ে চলে আসে।
১০/১৫ দিন চলার পর অজ্ঞাত আসামীরা থাইল্যান্ডে জঙ্গলে নিয়ে তাদের হাত-পা বেঁধে মারধর করে।
এ অবস্থায় আসামী সোহেল পরিবারের মোবাইল নম্বর নিয়ে ২ লাখ টাকা দিতে বলে। তা না মানলে তাকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।
পরবর্তীতে তারা ২ লাখ টাকা দেয়। জঙ্গলে ৩ মাস কাটানোর পর আসামী তাদেরকে আলাসট্রা শহরে একটি কারখানায় আটক করে রাখে।
এরপর ৯ মাস এখানে কাজের পর বিবাদী আকরামসহ তারা ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে।
পরে জেল খেটে তারা বাড়িতে আসে এবং এ বিষয়ে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল চাঁদপুরে মামলা দায়ের করেন।
এই মামলার বাদী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী আলহাজ্ব এ কে এম লোকমান হোসেনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, গত বছর ২৫ মার্চ জনৈক ব্যক্তি ঢাকা থেকে টাইপ করে মামলাটি লিখে আনেন। পরবর্তীতে আমি সরল বিশ্বাসে আমার মক্কেল হিসেবে এটিতে স্বাক্ষর করি। এরপর গত ১ বছরে এই মামলার বিষয়ে আমার কাছে কেউই আসেনি।
তিনি বলেন, আমাদের অন্যসব মামলায় বাদীর যোগাযোগ অবশ্যই তার আইনজীবীর সঙ্গে থাকে। আজ ২২ জানুয়ারি এই মামলার শুনানীর কথাও তিনি জানেন না বলে জানান।
এদিকে মামলার আসামীর স্ত্রী তামান্না আক্তার ঢাকা শেওয়াপাড়ায় বসবাসরত।
তিনি জানান, আমার স্বামী আকরামুলের বিরুদ্ধে সকল মামলাই ভুয়া। চাঁদপুরেরও মামলাটি ভুয়া। কারণ আকরামুল কখনো চাঁদপুরে যায়নি, এমনকি তার বাড়ি চাঁদপুরেও না।
কেন এই মামলাগুলো হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন , একটি সংঘবদ্ধ চক্র নারায়ণগঞ্জে আমাদের সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার জন্য এসব ভুয়া মামলা করছে।
তিনি বলেছেন আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। সন্তানরা ছোটবেলা থেকে তাদের পিতাকে জেল খাটতে দেখছে। এসব সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের বিচার দাবি করছি এবং আমার নিরপরাধ স্বামীর মুক্তি দাবি করছি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply