জাতীয় সংসদে ৮ হাজার ২৩৮টি ঋণ খেলাপি কম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ওই সকল প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৬ লাখ ৯৮ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। দেশের সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে প্রাপ্ত সিআইবি ডাটাবেইজের ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য থেকে এই তালিকা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে লিখিত প্রশ্নোত্তরে তিনি এতথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এসংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু। ওই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরো জানান, গত নভেম্বর পর্যন্ত পরিশোধিত ঋণের পরিমাণ ২৫ লাখ ৮৩ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা।
এরআগে গত বছরের ২২ জুন অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ৩০০ ঋণ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করেন। ওই ৩০০ ঋণ খেলাপির কাছে তখন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা ছিলো ৭০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। এছাড়া ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও লিজিং কম্পানির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন এমন ১৪ হাজার ৬১৭ জনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেন মন্ত্রী।
সর্বশেষ সংসদে দেওয়া ১০৭ পৃষ্ঠা তালিকানুযায়ী এসব ঋণ খেলাপি কম্পানির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে রিমেক্স ফুটওয়্যার। যার খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টসের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৩শ’ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা রূপালী কমপোজিট লেদার ওয়ার লিমিটেডের ঋণের পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৩শ’ কোটি টাকা। সব চেয়ে কম এক কোটি টাকা ঋণ আছে এ আই ইন্ডাট্রিজের। যদিও অন্যান্য কোম্পানীগুলোর খেলাপি ঋণের টাকার অঙ্কের পরিমাণ ছাপার অস্পষ্টতা থাকায় তালিকা সংসদে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।
সংসদে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী তালিকায় প্রথম ৫০টি কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- রিমেক্স ফুটওয়্যার লি, ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টস, রূপালী কম্পজিট লেদারওয়্যার লিমিটেড, রাইজিং স্টিল লিমিটেড, মোহাম্মদ ইলিয়াম ব্রাদার্স (পিভিটি) লিমিটেড, এস এ ওয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, সামনাজ সুপার ওয়েল লিমিটেড, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম লিমিটেড, অ্যালোকোট লিমিটেড, গ্যালাক্সি সোয়েটার এন্ড ইয়ার্ন ডাইং, বুলট্রেড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, বেনট্রেক্স ইনন্ডাট্রিজ, কমপিউটার সোর্স লিমিটেড, রুবাইয়া ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেড, বাংলাদেশ কমিউনিকেশনস লিমিটেড, লেক্সো লিমিটেড ও আলফা কমপোজিট টাওয়েলস প্রভৃতি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদে জানান, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের অনুযায়ী ২৫টি ব্যাংকের পরিচালকরা নিজ ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ করেছেন। তাদের গৃহীত ঋণের বকেয়া স্থিতির পরিমাণ এক হাজার ৬১৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা। যা মোট ঋণের দশমিক ১৬৬৬ শতাংশ। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালকবৃন্দ নিজ ব্যাংক ব্যতিত অন্য ৫৫টি ব্যাংক হতে ঋণ নিয়েছেন। তাদের গৃহীত ঋণের উপস্থিতির পরিমাণ এক লাখ ৭১ হাজার ৬১৬ কোটি ১২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। যা ব্যাংকসমুহের মোট প্রদেয় ঋণের ১১ দশমিক ২১ শতাংশ।
সরকারি দলের সদস্য নাছিমুল আলমের প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল জানান, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করদাতার সংখ্যা ৮ লাখ ২৩ হাজার ২৩১ জনে বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার ৯৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আগের বছর ছিলো ৩৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৪৭ জন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোট কর আদায় হয়েছে ৭২ হাজার ৮৯৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
সরকারি দলের সদস্য বেগম শামসুন নাহারের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, গাজীপুরের ২ লাখ ৪০ হাজার ২৩৯ জন করদাতার মধ্যে ৭৮ হাজার ৩৪০ জন রিটার্ণ দাখিল করেছেন। যারা রিটার্ন দাখিল করেননি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply