নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ধষর্ণসহ যৌন হয়রানির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশুদের বিচারপ্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতা চলমান। বিচার পেতে হয়রানির শিকার হতে হয় অনেক ভুক্তভোগীকেও। তারপরেও বিচারের আশায় দিন পার করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
এসব ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশুকে দ্রুত বিচার পাইয়ে দিতে হাইকোর্ট বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে একাধিক রায় ঘোষণা করেছে; কিন্তু অধস্তন আদালতের অনেক বিচারকই এসব নির্দেশনা মেনে বিচার কাজ পরিচালনা করেন না। আবার সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে বলা হলেও খুব একটা অগ্রগতি থাকে না। ফলে উচ্চ আদালতের ঐ নির্দেশনাগুলো উপেক্ষিত রয়ে যায়। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব নির্দেশনার বাস্তবায়ন করা হলে নিম্ন-আদালতে মামলার বিচারে গতি আসবে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশুর বিচার পাওয়ার পথ অনেকটাই সুগম হবে।
বরিশালের হিজলায় এক তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন
দিয়ে ২০১০ সালের ২৩ এপ্রিল ধর্ষণ করে আসামি সাইফুল। এ ঘটনায় করা মামলার রায়
হয়েছে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি। রায়ে ধর্ষককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের
পাশাপাশি ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ট্রাইব্যুনাল। নিম্ন-আদালতে মামলাটি
নিষ্পত্তি হতে লেগেছে এক দশক। যদিও নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর
ধারা ২০(৩)-এ সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, মামলা বিচারের জন্য নথিপ্রাপ্তির
তারিখ হতে ১৮০ দিনের (ছয় মাস) মধ্যে বিচারকাজ সমাপ্ত করতে হবে। এছাড়া ধারা
২০(২)-এ বলা হয়েছে, মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি
কর্মদিবসে একটানা পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের ছয় দফা নির্দেশনাসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, ব্যতিক্রম দুই-একটি ক্ষেত্র ছাড়া আইনের গুরুত্বপূর্ণ এই দুইটি ধারা অনুসরণ ও প্রতিপালন হচ্ছে না। এজন্য নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ধর্ষণ ও ধর্ষণ শেষে হত্যা মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইনে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, সে বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সাংবাদিককে বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। এই আদালতের নির্দেশনা মানা অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য বাধ্যতামূলক। তিনি বলেছেন আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম তখন মুলতবি ছাড়াই এ ধরনের মামলা নিষ্পত্তি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
চাকরি দেওয়ার নামে ঢাকায় এক নারীকে ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল ধর্ষণ করেন অপূর্ব সরকার নামে এক ব্যক্তি। ৯ বছর পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঐ মামলার বিচার শেষ হয়। বিচারের এই ধীরগতির পেছনে সময়মতো সাক্ষী হাজির না হওয়া ও সাক্ষীর নিরাপত্তাহীনতা অন্যতম কারণ বলে জানান বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এজন্য মনিটরিং কমিটি গঠনে জোর দিয়েছে হাইকোর্ট।
এ প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়েছে, ধার্য তারিখে সাক্ষীর উপস্থিতি ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতি জেলায় মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। ঐ কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), সিভিল সার্জনের এক জন প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরকে রাখতে হবে। কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেবেন। ধার্য তারিখে সমন পাওয়ার পর অফিসিয়াল সাক্ষী (ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, চিকিত্সক বা অন্যান্য বিশেষজ্ঞ) সন্তোষজনক কারণ ছাড়া সাক্ষ্য প্রদানে উপস্থিত না হলে ঐ সাক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে ট্রাইব্যুনাল। পাশপাশি সাক্ষীর নিরাপত্তায় সাক্ষী সুরক্ষা আইন করারও ওপরও জোর দেয় আদালত। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে রায়ের কপি পাঠাতে বলা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে হাইকোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. সাইফুর রহমান সাংবাদিককে বলেছেন , আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ঐ রায়ের আলোকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply