যশোরে জেলার রিয়াজুল ইসলাম রাজু এবং শম্পা রানী সাহা। দশ বছর আগে ছিলেন একটি ইনসিওরেন্স কোম্পানির সাধারণ কর্মচারী। তবে দ্রুত ধনী হওয়ার লোভে এক সময় চাকরি ছেড়ে দেন।
এরপর ২০১০ সালের ১৫ জুলাই প্রাইম মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সনদ নিয়ে শুরু করেন আমানত ব্যবসা। আমানতের টাকা চার বছরে দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে প্রলুব্ধ করতে থাকেন। মানুষও তাদের কথা বিশ্বাস করতে থাকে।
মাত্র চার বছরে (২০১৪ সালের এপ্রিল মাস) যশোর, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া জেলায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় আড়াই হাজার। আর তাদের কর্মকাণ্ডে মানুষ যাতে কোনো রকম সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য নির্ধারিত কিছু গ্রাহককে কাঙ্ক্ষিত সুদসহ টাকা পরিশোধ করে। এর পাশাপাশি গ্রাহকের ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। এভাবে তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন আড়াই হাজার দরিদ্র মানুষ।
সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া রাজু জানান, প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হলে আত্মগোপনে চলে যান। ২০১৪ সালের পর প্রায় চার বছর আত্মগোপনে থাকার পর বছর দেড়েক আগে এলাকায় ফেরেন। তবে খুব একটা প্রকাশ্যে বের হতেন না। এ সময় এলাকার বিভিন্ন প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াড সম্প্রতি যশোর জেলার কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে রাজুকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের পরপরই তাকে ফরিদপুর আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায়। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। জিজ্ঞাসাবাদে রাজু আরো জানায়, তার বিশ্বাস ছিল কারো টাকা আত্মসাত্ করলে, কিছুদিন ঝামেলা পোহাতে হলেও বিচারের মুখোমুখি হতে হয় না। এ বিশ্বাস থেকেই চাকরি ছেড়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার ও সিআইডির মিডিয়া অফিসার ফারুক হোসেন জানান, রাজুর বিরুদ্ধে চার জেলার বিভিন্ন থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে। গ্রাহকরা প্রতারিত হবার পর ২০১৫ সালের প্রথম দিকে ভুক্তভোগীদের বেশ কয়েক জন আইনের আশ্রয় নেন। এ সময় শম্পা রানী সাহা গ্রেফতার হয়। কিন্তু ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে রাজু।
এছাড়া কুষ্টিয়ার রেহানা এবং আমিরুল নামে দুই জন গ্রাহক বাদী হয়ে মামলা করেন। ঐ মামলায় দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত রাজু। কিন্তু সাজা হলেও মাত্র তিন মাস পর জেল থেকে ছাড়া পায়। এরপর থেকে রাজু আত্মগোপনে চলে যান।
এ অবস্থায় ভুক্তভোগী একজন গ্রাহকের অভিযোগ তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এরপর আত্মগোপনে চলে যান রাজু। পরবর্তী সময়ে মামলাটি তদন্তের দায়িত্বভার গ্রহণ করে সিআইডি।
সিআইডির এ কর্মকর্তা আরো জানান, সিআইডির তদন্তে জানা যায় শম্পা রানী সাহা ২০১৫ সালে গ্রেফতার হয়ে কিছুদিন জেল খেটে জামিনে মুক্ত হন। এই প্রতারক চক্রের অন্য সহযোগীরা বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় নিবন্ধন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। সিআইডি প্রতারক চক্রটির মূল উত্পাটনের লক্ষ্যে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আরো বলেন, রাজুর সম্পত্তি অনুসন্ধান চালিয়ে প্রতারণা করে আত্মসাত্ করা ৫ কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুটি বাড়ি, দুটি কাভার্ড ভ্যানসহ ১০ বিঘা জমির সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়া প্রাইম মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের নামে দুটি গাড়ি ও ছয়টি স্থানে জমির সন্ধান পেয়েছে সিআইডি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply