ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে জিআরপি ফাঁড়িতে লোকবল সংকটে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। এক প্ল্যাটফরমে যাত্রী নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে মাত্র একজন কনস্টেবল। তাছাড়া অচল রয়েছে স্টেশনের সিসি ক্যামেরা। প্ল্যাটফরমে নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। ১৫-২০টি আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনে বিভিন্ন দিকে এই স্টেশন থেকে যাতায়ত করে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার যাত্রী।
প্রতিদিন বিভিন্ন পথে চলাচলকারী আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন যাত্রাবিরতী করে এই স্টেশনে। প্রতিটি ট্রেনেই ঠাসাঠাসি ভিড় ঠেলে যাত্রীদের উঠতে হয়। আর এই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। পকেট হাতড়ে বের করে নিচ্ছে মোবাইল-ম্যানিবেগ। ব্যাগ কেটে নিয়ে যাচ্ছে নানা মালামাল। টাকা-পয়সা, মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার খোয়ানো যাত্রীদের হায়-আফসোস, কখনো কখনো কান্নার শব্দে ষ্টেশনের পরিবেশ বিষাদময় ওঠে। এ জন্য স্টেশনের বেহাল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই দায়ী করেন যাত্রীরা।
তবে নিরাপত্তা দেখবালের দায়িত্ব যাদের তাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফরমে জিআরপি পুলিশ ফাঁড়ি। নিয়মানুযায়ী এখানে থাকার কথা ইনচার্জ হিসেবে একজন এসআই, একজন এএসআই, একজন এটিএসআই ও ১৪ কনস্টেবল। কিন্তু সেখানে এখন সব মিলিয়ে লোকবল আছে ১১জন। ৩ বছর আগে এই ফাঁড়িতে কর্মরত ছিল ২২ কনস্টেবল। এখন এই সংখ্যা ৯ জনে দাঁড়িয়েছে। ক’দিন আগে ১০ জন থাকলেও সম্প্রতি একজন বদলি হয়ে গেছেন রাজশাহীতে। এটিএসআই পদও শূন্য হয়েছে সম্প্রতি।
বর্তমানে থাকা ১১ লোকবলের মধ্যে ২ কনষ্টেবলের ডিউটি রয়েছে আবার আশুগঞ্জে। বাকি সাতজনের মধ্যে ৪ কনস্টেবল পালাক্রমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনের দুই প্ল্যাটফরমে ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করেন। সেই হিসেবে এক প্ল্যাটফরমের নিরাপত্তা দায়িত্ব এক কনস্টেবলের ওপর। ফাঁড়ির এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেনে যদি ২০ কামড়া হয় তাহলে ৮০ দরজা। ৮০ দরজায় নজর রাখা এক কনস্টেবলের পক্ষে কঠিন। পুরো গাড়ির এমাথা-ওমাথা কাভার করা তার পক্ষে কতোটুকু সম্ভব। মেস ম্যানেজার, অফিসের দায়িত্ব পালন, ডাক নিয়ে যাওয়া, কোথাও কোন ঘটনা ঘটলে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হয় বাদবাকী ৫/৭ জনকে। এছাড়া ছুটিছাটা ও শারীরিক অসুস্থতায় নিয়মিতই ২/১ জন থাকছেন ডিউটির বাইরে। একজন কনস্টেবল ডিউটি শেষে ৬ ঘণ্টা সময় পাচ্ছে শুধু বিশ্রামের।
ফাঁড়ি ইনচার্জ মো. মোজাম্মেল খান বলেন-সীমিত লোকবল দিয়ে যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানের চেষ্টা করছেন তারা। ডিউটি না থাকলেও তারা সবাই ডিউটি করছেন। ট্রেন আসলে প্ল্যাটফরমে গিয়ে ট্রেনের দরজার পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আসামি ধরছেন, চালান দিচ্ছেন। মালামাল উদ্ধার করছেন। সব কাজই করছেন তারা। এদিকে স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফরমের সবকটি সিসি টিভি ক্যামেরায় অচল। ঢাকার পথে এই প্ল্যাটফরম থেকেই উঠতে হয় যাত্রীদের। আর এখান থেকে ঢাকা গন্তব্যেই যাত্রী হয় সবচেয়ে বেশি। প্ল্যাটফরমটিতে আলোর ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নয়। আর এসব সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত মাস্টার মো. শোয়েব জানান, তাদের ৯টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে সচল আছে ৭টি। ২ নম্বর প্ল্যাটফরমের দুটি ক্যামেরায় অচল।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply