ঠাকুরগাঁও সুগারমিলকে আধুনিকরণ করতে বর্তমান সরকার প্রায় পাঁচশত কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিলেও নানা জটিলতায় তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। শিল্প মন্ত্রণালয় একাধিকবার দরপত্র আহবান করলেও ঠিকাদার না পাওয়ায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। ফলে দিন দিন প্রকল্পের ব্যয় মূল্য বেড়েছে দ্বিগুণ।
এদিকে সুগারমিলের ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে যে ৮টি গাড়ির ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে। যার বাজারমূল্য চার কোটি টাকা বলে জানা গেছে। মিল কতৃপক্ষের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির কারণে প্রকল্পকাজে অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।
জানা যায়, ১৯৫৬ সালে স্থাপিত ঠাকুরগাঁও সুগার মিলটি ১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে আনুষ্ঠানিকভাবে আখমাড়াই কার্যক্রম শুরু করে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত লাভ তো দূরের কথা উল্টো প্রায় ১৬০ কোটি টাকা লোকাসান গুনতে হয়েছে মিলটিকে। প্রতি মাড়াই মৌসুমে দেড় থেকে দুই মাস চালু থাকে। এ ছাড়া বছরধরে বন্ধ থাকে মিলটি । এসময় মিলের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের বিনা পারিশ্রমিকেই বেতন দিতে হয় সরকারকে। আর এভাবেই ক্রমাগত লোকসান গুনতে হয়েছে মিলটিকে। তাই পুরাতন এই মিলটিকে আধুনিকীকরণ করে লাভজনক করতে বর্তমান সরকার শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গত তিনবছর পূর্বে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।
মিল শ্রমিকদের অভিযোগ, বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় করা হয়েছে এবং অসাধু কিছু কর্মকর্তা তা থেকে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বিভিন্ন কাজে ব্যয় করলেও মিলটির অধুনিকরণ প্রকল্প কাজ হয়নি কিছুই। এই ৯০ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে গাড়ি ক্রয় বাবদ। এতে মিলের শ্রমিক ও কর্মচারিদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিলের একজন কর্মকর্তা ও গাড়ি চালক জানান, এখানে ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে যে ৮টি গাড়ির ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে তা বড় ধরণের দুর্নীতি। এই গাড়িগুলোর বাজারে গড় মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা। যেমন ১টি প্যাজারো জিপগাড়ি যার সর্বোচ্চ বাজার মূল্য ৩৬ লক্ষ টাকা যে গাড়িটি মিলের জিএম ব্যাবহার করেন, ২টি (ট্রাক) কাভার্ডভেন যার সর্বোচ্চ বাজার মূল্য ৬০ লক্ষ টাকা আর ৫টি ট্যাঙ্কলরি যার সর্বোচ্চ বাজার মূল্য ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। এসব গাড়ি বাজারে সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে ক্রয় করা হলেও ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার উপর খরচ হবার কথা নয়। অথচ গাড়ি কেনা হয়েছে ৯০ কোটি টাকার, জবাবদীহিতা না থাকার কারণে কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা এমন দূর্নীতি করে এই মিলের ক্ষতি করে দিয়েছেন।
মিল শ্রমিক খালেদুজ্জামান রেজা বলেন, বর্তমান সরকার মিলটি আধুনিকরণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সে টাকা থেকে মিলের মূল কাজ না করে গাড়ি ক্রয় করে কিছু অসাধু কর্মকর্তা অনেক বড় দূর্নীতি করেছে, যা খুবই কষ্টকর।
ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের কর্মচারি ও শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সাধারন সম্পাদক ওবায়দুর রহমান জানান, কোন মতো জোড়া তালি দিয়ে মাড়াই মৌসুমে মিলটি চালাতে হচ্ছে। বছরে বারো মাসের মধ্যে দশ মাসই মিলটি বন্ধ থাকায় মিল কর্তৃপক্ষের ক্ষতির পাশাপাশি শ্রমিক ও চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: সাখওয়াত হোসেন জানান, তিনি এই মিলে সদ্য যোগদান করেছেন। মিলের বিষয়ে খুব বেশি কিছু এখনো অবগত হতে পারেন নাই। তবে কিছু কাগজপত্র দেখেছেন তিনি । তা থেকে জানতে পেরেছেন এই সুগারমিল আধুনিকরণ প্রকল্পের নিদ্দিষ্ট মেয়াদ (২০১৭-১৮ অর্থ বছরের) অনেক আগেই অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগসহ অন্যান্য কাজ শুরু হয়নি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply