নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নারায়ণগঞ্জে গত এক সপ্তাহে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু এবং আরো নয়জনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্তের পর নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। করোনা মোকাবেলায় অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সদর উপজেলার তিনটি থানা এলাকাকে এক প্রকার অঘোষিত লকডাউন করতে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসন। রোববার (৫ এপ্রিল) রাতে জেলা প্রশাসনের এক জরুরি সভায় এমনই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে প্রথমেই সদর উপজেলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এখানকার বাসিন্দাদের ঝুঁকিমুক্ত করতে চাইছেন তারা। এর পাশাপাশি করোনাভাইরাস যাতে এখান থেকে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে তারা দেখছেন।
তবে কোনো কোনো গণমাধ্যমে জেলা প্রশাসন সদর উপজেলার তিন থানায় কারফিউ জারি করেছে বলে সংবাদ প্রচার হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাড়ে এগারোটায় মুঠোফোনে জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের সাথে যোগাযোগ করলে কারফিউ জারির বিষয়টি অস্বীকার করেন তারা দুজনই।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে রাত আটটা থেকে সোয়া দশটা পর্যন্ত এই জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই জরুরি সভায় সেনা কর্মকর্তারাসহ উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, র্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার এবং জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ।
সভায় করোনা পরিস্থিতির বর্তমান ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরে বিস্তারিত আলোচনা করেন সংশ্লিষ্টরা। সভা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠক করে সবার সম্মতিক্রমে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নারায়ণগঞ্জ শহরের সদর উপজেলাধীন তিনটি থানা অর্থাৎ সিদ্ধিরগঞ্জ, সদর থানা ও ফতুল্লা থানা এলাকার কাউকে বাইরে যেতে দেওয়া হবে না এবং বাহির থেকে কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয় হবে না।
জেলা প্রশাসক বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে আইইডিসিআর ‘র নির্দেশনা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি নারায়ণগঞ্জ শহরের সদর উপজেলাধীন তিনটি থানা অর্থাৎ সিদ্ধিরগঞ্জ, সদর থানা ও ফতুল্লা থানা এলাকার কাউকে বিনা প্রয়োজনে বাইরে যেতে দেওয়া হবে না এবং এই এলাকার বাইরে থেকেও বিনা কারণে কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
তিনি আরো বলেন, এসব এলাকায় বিনা প্রয়োজনে রিকশা, অটো রিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস আরোহী ও মোটরসাইকেলসহ যাত্রী বহনকারী ছোট বড় কোনো যানবাহনকে বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় চলাচল করতে দেয়া হবে না।
আরোহী যে কাজেই বাইরে বের হোক তাদেরকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে এবং বের হওয়ার প্রয়োজনীয়তা প্রশাসন নির্ণয় করবে। যদি অহেতুক কেউ বাইরে বের হন তবে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে কিনা তা কঠোরভাবে নির্ণয় করা হবে।
কারফিউর বিষয়টি তুললে জেলা প্রশাসক বলেন, কারফিউ মানে হচ্ছে বাইরে একটা লোকও বের হতে পারবে না। কিন্তু মানুষকে প্রয়োজনে বের হতে হবে। যারা অপ্রয়োজনে বের হবে এবং সামাজিক দূরত্বে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতেই আমাদেরই এই কঠোর অবস্থান। তাই আমরা কারফিউ বলতে পারি না।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, সদর উপজেলার এই তিনটি থানা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হবে। পুরো নিরাপত্তা বিষয়টির দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ প্রশাসন। তাদেরকে সহায়তা করবে সেনাবাহিনী ও র্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য সংস্থাগুলো।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম সময় নিউজকে বলেন, আমরা সবদিক বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোকে চিহ্নিত করেছি। সার্বক্ষণিক মোট ৩২টি চেকপোস্ট বসানো হবে। এসব চেকপোস্ট থাকবে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র্যাব টহলের মাধ্যমে এসব চেকপোস্ট নজরদারিসহ পুলিশকেও সহযোগিতা করবে। সোমবার ভোর থেকেই চেকপোস্টের কার্যক্রম শুরু হবে। কাউকে কোনোভাবে ছাড় দেয়া হবে না।
এই পরিস্থিতি কারফিউ কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, আমরা কারফিউ বলছি না। তবে অঘোষিত লকডাউন বলা যায়।
নারায়ণগঞ্জে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে ১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ হোশিয়ারী ব্যবসায়ী ও একজন বৃদ্ধা নারী মারা গেছেন। এছাড়া করোনা আক্রান্ত ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ জানিয়েছে। করোনায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে থাকায় জেলার বন্দর উপজেলার রসুলবাগ, শহরের পাইকপাড়া ও ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকার ৬শ’ পরিবারকে লকডাউন এর আওতায় আনা হয়েছে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply