নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পাঁচ দিন বাদেই ঈদ। অথচ শপিংমলে নেই ভিড়। রাস্তাঘাট ফাঁকা। বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে নেই বাড়ি ফেরার মানুষের ভিড়। আগে বাড়ি যাওয়া ছিল আনন্দের। আর এখন বাড়ি ফেরা আটকাতে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ফেরিঘাট। এই করোনাকাল মানুষের চালচিত্র বদলে দিয়েছে পুরোপুরি।
যেখানে রোজার সময় মসজিদে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারাবির নামাজ পড়ার জন্য মুসল্লিদের ভিড় দেখা যেত। এখন স্পর্শ বাঁচাতে সবাই দূরে দূরে। মানুষের স্পর্শ থেকে বাঁচতেই শপিংমলগুলোতে নেই ক্রেতাদের ভিড়। মানুষের জীবনযাত্রা একেবারেই ওলটপালট করে দিয়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়।
স্কুলগুলো অনলাইনে ক্লাস চালু করায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় কিছুটা ব্যস্ত হতে পারলেও মূল সমস্যা মধ্য বয়সি ও বয়স্কদের। গৃহবন্দিত্বকালে অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে তারা। সদা ব্যস্ত থাকা পৃথিবীর মানুষ যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। চেনা পৃথিবী আজ কত অচেনা! বদলে যাওয়া এক ভিন্ন পৃথিবী আজ ধরা দিয়েছে সবার সামনে। এমন বিশ্ব, এমন বাংলাদেশ, এমন ঢাকা শহর আগে কেউ কখনো দেখেনি!
চারদিকে এত সতর্কতার পরও গরিবের পেট কোনো বাধা মানে না! রিকশা-ভ্যানচালক, বস্তিবাসী, পোশাকশ্রমিক, গরিব দিনমজুর, দিন আনে দিন খাওয়া মানুষ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করেই বাইরে বেরিয়ে এসেছে। শপিংমলে মানুষ নেই কিন্তু রিকশা, সিনএনজি অটোরিকশা নিয়ে অসহায় দরিদ্র মানুষ রাস্তায় ঘুরছে। শপিংমল বন্ধ থাকলেও ভ্যান গাড়িতে কাপড় নিয়ে বন্ধ শপিংমলের সামনে দিনভর অপেক্ষা করছে দরিদ্র পোশাক ব্যবসায়ীরা।
কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ীদের পুঁজি হারিয়ে পথে বসার অবস্থা
দেশীয় পোশাকের প্রায় ৭০ শতাংশ চাহিদার জোগান দেয় ঢাকার কেরানীগঞ্জ পোশাকপল্লি। এখানে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কারখানা ও ১০ হাজার শোরুম রয়েছে। যারা মূলত ঈদ ঘিরে সারা বছরের ব্যবসা করে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের পুঁজিতে টান পড়েছে। এখন মার্কেট খুললেও পোশাক বিক্রির চাপ নেই। ফলে পল্লির ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে পুঁজি হারিয়ে তাদের পথে বসতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন কেরানীগঞ্জের আগানগরের পোশাকপল্লির শোরুম ও কারখানায় ৮ লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করে। এখানকার ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ী নিজে পোশাক উত্পাদন করেন দেশীয় বাজারে বিক্রি করে। দেশে তৈরি পোশাকের বিপুল চাহিদা মেটায় এ পল্লি। আর বাকি ৩০ শতাংশের মতো পোশাক চীন, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে বিক্রি করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
পল্লির একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, রোজার ঈদকে তারা সারা বছরের ব্যবসার মৌসুম ধরে। অন্যান্য সময়ে যে বেচাকেনা হয়, তার ৯০ শতাংশ হয় ঈদ ঘিরে। এ জন্য সারা বছরই শোরুম ভাড়া ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা টানে তারা। ঈদের ব্যবসা ধরার জন্য ব্যাংক ঋণ ও ধারদেনা করে প্রস্তুতি নেন। এক মৌসুমে যা লাভ হয়, তাতেই পুষিয়ে যায়। কিন্তু এবার সব বিনিয়োগ করার পর করোনার কারণে সব ব্যবসা মাটি হয়ে গেছে। ঈদের মধ্যে আর বিক্রির কোনো সম্ভাবনা দেখে না তারা। এ পরিস্থিতিতে ধারদেনা শোধ করে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন, তা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে তারা।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply