টাঙ্গাইলঃ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গলদগর্ম অবস্থার মধ্যে এবার যুক্ত হচ্ছে বন্যার চ্যালেঞ্জ। পদ্মা, যমুনা, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার হুমকি নিয়ে ধেয়ে আসা বন্যার স্থায়িত্ব দীর্ঘ হতে পারে। পরিস্থিতির অবনতি হয়ে কয়েকটি জেলা বিপর্যস্ত হতে পারে। এ জন্য ২৩টি জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য বন্যাদুর্গত এলাকার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি খাদ্য।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ ভারতের আসাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে সংশ্নিষ্ট নদনদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন জেলা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ দফায় রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ জেলা নতুন করে বন্যাদুর্গত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এ তথ্য জানান। এ জন্য জেলাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশ এখন কঠিন সময় মোকাবিলা করছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলা করতে হয়েছে। এরপর ২৬ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি বন্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে। এ মুহূর্তে অন্তত ১২টি জেলায় বন্যা অনেকটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে চলে এসেছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, শুক্র থেকে শনিবারের মধ্যে পানি আবার বাড়বে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা নদীর পানি বাড়ায় ২০ থেকে ২৪টি জেলা প্লাবিত হবে। এবার বন্যার স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এ জন্য বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার পরিকল্পনার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, করোনার কারণে প্রয়োজনের বেশি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। ২৩টি জেলায় পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ২০০ টন করে চাল, দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং শিশু খাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা, গো-খাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা এবং নগদ তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের গাণিতিক আবহাওয়া মডেলের তথ্য বিশ্নেষণ করে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র ও যুমনার পানি এ মুহূর্তে স্থিতিশীল। মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানিও সমতল রয়েছে। তবে শুক্রবার থেকে এসব নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করবে।
সংস্থাটির দীর্ঘমেয়াদি বুলেটিনে বলা হয়েছে, ১৩ জুলাইয়ের পর কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। গঙ্গা ও পদ্মায় পানি আপাতত কমতে থাকলেও মধ্য জুলাইয়ে গিয়ে পানি দ্রুত বাড়তে থাকবে। এর প্রভাবে রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ এবং শরীয়তপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোতে পানি বাড়তে পারে। তবে এসব নদীতে বিপদসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply