দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ফুটপাতে কীসের ভিড়। কাছে গেলেই চোখে পড়ে, পসরা সাজিয়ে বসা সারি সারি মোবাইল ফোনের দোকান। আরেকটু বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এগুলো সব চোরাই মোবাইল। আর তাই নিয়ে রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরের লালমাটিয়া এলাকার সড়ক-ফুটপাত দখল করে বসেছে দোকানিরা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলোর একটা অংশ বিক্রি হয় এখানে। আর এসব দোকানে বেশি দামের মোবাইল অল্প দামে কিনতে এসে উটকো ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অনেক মানুষ। হতে হচ্ছে প্রতারণার শিকার।
জানা যায়, আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বর বদলে দামি ব্র্যান্ডের মোবাইল অর্ধেক দামে বিক্রি হয় এসব বাজারে। আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনে তাদের রয়েছে নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ার ও সফটওয়্যার। আইএমইআই বদলে ফেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও মোবাইল চোরকে শনাক্ত করতে পারছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পল্লবী থানার আওতাধীন পলাশ নগর এলাকার গেটের সামনে বসছে চোরাই মোবাইলের মার্কেট। এখানে মোবাইল ছাড়াও বিক্রি হয় ল্যাপটপ, চার্জার লাইট, মোবাইল চার্জার, হেডফোনসহ বিভিন্ন জিনিস। লালমাইটা টেম্পুস্ট্যান্ডের চারপাশে মূল সড়কের ৭০ ভাগ ও ফুটপাত দখল করে বসেছে এ মার্কেট। এসব দোকান ছাড়াও এখানে প্রতিদিন শার্ট, গেঞ্জি, জুতা, স্যান্ডেল, চুড়ি, নারীদের প্রসাধনী, কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে হরেক রকমের আরও ২শ’ দোকান বসে।
সড়ক দখল করে বসা এই বাজারের কারণে এলাকাবাসীর ভোগান্তির কথা তুলে ধরে লালমাটিয়া এলাকার মো. শামীম সাংবাদিকদের বলেন, এ বাজারের কারণে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। পথচারীদের হাঁটা-চলায় বিঘ্ন ঘটে। প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা হয়। দেশে করোনা সংক্রমণের মধ্যেও স্থানীয় নেতা ও প্রভাবশালী মহলের লোকজনেরা এ বাজার বসিয়েছে। প্রশাসন চাইলে যে কোনো সময় এই বাজার উচ্ছেদ করতে পারে, কিন্তু করছে না।
চোরাই মোবাইল বিক্রি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. নাছির নামের এক দোকানদার বলেন, আমি এখানে বেশিদিন ধইরা দোকানদারি করি না। এখানে অনেক পুরাতন দোকানদার আছে। করোনা ভাইরাসের আগে এখানে অনেক দোকান বসতো, এখন কম বসে। এখন তেমন বেচা-কেনা নাই। কেনার থাইকা দেখতেই আসে বেশি মানুষ। এখানের সব মোবাইল চোরাই না। কিছু আছে পুরাতন, ভালো ব্রান্ডের মোবাইল। ভালো-খারাপ মিলায়া বিক্রি হয়।
এক পর্যায়ে এই দোকানি প্রতিবেদককেই উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘আপনে এত কিছু জানতে চাইতাছেন ক্যান? এত জানিনা কী করবেন?’
আরেক দোকানি মো. গুল্লু (ছদ্মনাম) বলেন, এই মার্কেট প্রতিদিন বিকাল ৪টা থাইকা রাত ১০টা পর্যন্ত বসে। এখানে অনেক আগের থাইকাই চোরাই মোবাইল বেচা-কেনা হয়। প্রায়ই পুলিশ রেট মারে (অভিযান চালায়)। দোকানদার আর মোবাইল ধইরা থানায় নিয়া যায়। অভিযানের পরে কয়েক দিন দোকান বসে না। পরে আবার আগের দোকান নিয়া বসতে শুরু করে সবাই। এইভাবেই চলতাছে আমাদের ব্যবসা।
এদিকে সড়ক দখল করে বসা অবৈধ এ বাজার সম্পর্কে জানতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রউফ নান্নুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পল্লবী থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবদুল মাবুদ সাংবাদিকদের বলেন, চোরাই মোবাইলের বিষয়ে আমাদের অভিযান চলমান আছে। ইতোমধ্যে পল্লবী থানায় এ সংক্রান্ত চার থেকে পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখনো যে এই চোরাই মোবাইল মার্কেট বসছে আমি জানতাম না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। দ্রুত অভিযান পরিচালনা করবো। প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনবো। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। মোবাইল কোর্টও চলমান। আগামীকাল থেকে এই চোরাই মার্কেট আর থাকবে না।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply