এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ সাত্তার ও রেজাউল ডাক্তার আমার পোলাডারে মাইরা ফালাইছে। আমার সোনারচান কলিজার টুকরা জলোজ্যান্ত ছেলেডারে ওরা কেমনে কইরা মাইরা ফেলাইলো। আমার বুকের ধন ছাড়া আমি কেমনে বাচুম। আমার পোলারে ইঞ্জিনিয়ার বানামু ওর বাপের কত স্বপ্ন ওকে নিয়া। এহন কে আমারে মা কইব। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া উপজেলার দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের দেওবাড়ি গ্রামের সৌরভের মা লুপা বেগম (৪০) ছেলের লাশের পাশে আহাজারি করে বুঁক চাপড়িয়ে এসব কথা বলছিলেন।
তার গগণ বিদারি কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে এলাকার বাতাস। আশপাশে থাকা প্রতিবেশীরাও হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। সৌরভের অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে তারই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাঙ্গুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সহপাঠিদের মাঝেও।
বাবা শাহাদত হোসেন প্রবাস থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাকরুদ্ধ। প্রতিবেশীরাও হতভাগ সুস্থ্য সবল ছেলেটাকে ভুল চিকিৎসায় অকালে মৃত্যু বরণ করতে হলো।
সৌরভ আহমেদ (১৬)। লাঙ্গুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র। বাবা শাহাদত হোসেন পরিবারের খরচ যোগাতে পারি জমান প্রবাসে। ৪ জুলাই শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সামান্য জ্বর আর বমির ভাব নিয়ে ভর্তি হন সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে। পরদিন ৫ জুলাই দুপুর ১টার দিকে সৌরভের অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে ছুটি নিয়ে হাসপাতালের বাহিরে বেড় হলেই তারা লাইফ কেয়ার ক্লিনিকের দালাল রিনা আক্তারের খপ্পরে পড়েন। একরকম টেনে হিচড়ে ভালো চিকিৎসার কথা বলে লাইফ কেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি করান। খবর পেয়ে ছুটে আসেন ওই ক্লিনিকে কর্মরত চিকিৎসক আবদুস সাত্তার ও ডি আই রেজাউল করিম। এসেই সৌরভের এপেন্টিসাইড হয়েছে । জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন না করালে তাকে বাঁচানো যাবেনা। রক্তের গ্রুপ ছাড়া আর কোন টেস্ট না করিয়েই ওই দুই ডাক্তার দুপুর ২টায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান সৌরভকে। চার ঘন্টা পর সন্ধ্যা ৬টায় অপারেশন শেষ করেন। পরিবারকে জানানো হয় দ্রুত চার ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করেন। ওর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে রক্ত না দিলে বাঁচানো যাবেনা। ৭ জুলাই পর্যন্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পেরে লাইফ কেয়ার নিজ দায়িত্বে সৌরভকে টাঙ্গাইলের মুক্তা ক্লিনিকে নিয়ে যান। ভুল চিকিৎসা করা হয়েছে বুঝেই মুক্তা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সৌরভকে ফেরত পাঠান। পরে মির্জাপুর কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন ভুল চিকিৎসার কারনে সৌরভের এ অবস্থা হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে সঙ্গে থাকা লাইফ কেয়ারে কর্মরত ব্রাদার নজরুল ইসলাম প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পালিয়ে যান।
দীর্ঘ ১৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২২ জুলাই রাতে মারা যায় সৌরভ।
নিহত সৌরভের মা লুপা বেগম আহাজারির সুরে খুনি ডাক্তার সাত্তার ও রেজাউল করিমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, মেধাবী ছাত্র সৌরভে ভুল চিকিৎসা করে যারা মেরে ফেলছেন অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
অভিযুক্ত চিকিৎসক ডিআই রেজাউল করিম ও আবদুস সাত্তার একই সুরে বলেন, সৌরভের এপেন্টিসাইডের অপারেশন করার পরই বুঝতে পেরেছি তার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। পরে আমাদের নিজ খরচে তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলাম। তবে তারা ভুল চিকিৎসার কারনে সৌরভের মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিনুর আলম বলেন, সৌরভ ৪ জুলাই জ্বর ও বমির ভাব নিয়ে ভর্তি হয়ে ৫ জুলাই নিজেরাই ছুটি নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যান।
সখীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বদিউজ্জামান বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে জানলেও লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply