এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সরকারী বনাঞ্চলে বনের ভিতরে অসাধু বনদস্যুদের কাঠ পুড়িয়ে অবৈধ কয়লা তৈরীর ১৪টি চুল্লি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে বন বিভাগ।
এ সময় চুল্লি স্পট থেকে বিপুল পরিমান গ্রামীন জালানি ও কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রববার ২১ আগন্ট মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ এ কয়লার চুল্লি ধ্বংস এবং বিপুল পরিমান গ্রামীন জালানি ও কাঠ উদ্ধার করা হয় বলে সদর বিট কর্মকর্তা মো. জাহেদ হোসেন জানিয়েছেন।
বাঁশতৈল সদর রেঞ্জ অফিসের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার রহমান জানান, একটি অসাধু চক্র দীর্ঘ দিন ধরে গায়রাবেতিল, নয়াপাড়া, বাঁশতৈল, বংশীনগর, আজগানা, কুড়িপাড়া, পাথরঘাটা, তরফপুর ও খাটিয়ারহাটসহ বেশ কিছু এলাকায় বনের আশপাশে অবৈধ ভাবে চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরী করে আসছে। ফলে বনজ সম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে এসেছে। আশপাশের গ্রামের গাছপালা ও ফসলি জমি নষ্ট হয়ে লোকজনের মধ্যে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
টাঙ্গাইলের বন সংরক্ষক ড. জহিরুল ইসলাম ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. জামাল হোসেন তালুকদারের নির্দেশে শুক্রবার বাঁশতৈল এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের সময় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর ১৪টি চুল্লি ধ্বংস করা হয়। এসময় বিপুল পরিমান গ্রামীন জালানি ও কাঠ উদ্ধার করা হয়। এর আগেও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গায়রাবেতিল, নয়াপাড়া, বাঁশতৈল, বংশীনগর, আজগানা, কুড়িপাড়া, পাথরঘাটা, তরফপুর ও খাটিয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শতাধিক অবৈধ কয়লার চুল্লি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে বাঁশতৈল সদর অফিসের বিট কর্মকর্তা মো. জাহেদ হোসেন ও হাটুভাঙ্গা বিটের কর্মকর্তা জানান, সরকারী গজারি বনের গাছ চুরি ঠেকাতে বন বিভাগ কর্তৃক সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অভিযানের সময় চোরাই পথে আসা বন বিভাগের গজারি গাছসহ বিপুল পরিমান চোরাই কাঠ আটক করা হয়েছে।
জব্দ করা হয়েছে বনের ভিতরে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা করাত কল ও যন্ত্রপাতি।
হাটুভাঙ্গা অফিসের বিট কর্মকর্তা জানান, মির্জাপুরে ১৫ হাজার ৮০০শ হেক্টর সরকারী বন ভুমি রয়েছে। বিশাল এই বন ভুমিতে গজারি, গর্জন, সেগুন, আকাশমনি, পিকরাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মুল্যবান গাছ রয়েছে। এছাড়া সমাজিক বনায়ন কর্মসুচীর আওতায় প্রচুর বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে। এলাকার উপকার ভোগিদের মধ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকা বিতরন করা হয়েছে।
বাঁশতৈল রেঞ্জ অফিসের অধিনে পাথরঘাটা, কুড়িপাড়া, হাটুভাঙ্গা, বংশীনগরসহ বিভিন্ন বিট অফিসের বিট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বনজ সম্পদ রক্ষার জন্য গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বিপুল পরিমান গজারি চোরাই কাঠ উদ্ধার ও বনাঞ্চলের ভিতরে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা করাত কল উচ্ছেদসহ কাঠ চিড়াইয়ের সরঞ্জাম উদ্ধার করে বেশ কিছু মামলা দেওয়া হয়েছে। বন রক্ষার জন্য তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে বলে ঐ কর্মকর্তাগন জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন সংরক্ষক ড. জহিরুল ইসলাম এবং সহকারী বন রক্ষক মো. জামাল হোসেন তালুকদার বলেন, শুক্রবার বাঁশতৈল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৪ টি অবৈধ কয়লার চুল্লি ধ্বংস এবং গ্রামীন জালানিসহ বিপুল পরিমান কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে বনের ভিতরে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা করাত কল উচ্ছেদ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে কাঠ চোরদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। সরকারী বনজ সম্পদ রক্ষার জন্য টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে বলে এই দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply