টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ঘাটইল উপজেলার মাদক কারবারি, ভূমিদস্যু অবৈধ বেকু দালাল ও জাল- জালিয়াতির অপর নাম খালেদ শামস ওরফে বেকু খালেদ ওরফে জাল শামস। অবৈধ যত ব্যবসা আছে সবগুলোতেই দক্ষ এই খালেদ শামস। একসময় এই খালেদ শামস ছিলেন মাদক ও জুয়া ব্যবসার সম্রাট। মাদক ব্যাপরি ও জুয়াড়ি হিসেবেই তিনি এলাকায় পরিচিত।
মাদক ও জুয়ার পাশাপাশি সম্পতি তিনি এলাকায় জাল শামসু হিসাবেও পরিচিত। জাল-জালিয়াতি করে ভূয়া কাগজ পত্র বানিয়ে অন্যের জমি নিজদখল নিয়ে বনে গিয়েছেন ভয়ংকর ভূমিদস্যু। ঘাটাইল উপজেলার খরাবর এলাকায় গড়ে তুলেছেন ভূমি দখলের এক নতুন সাম্রাজ্য। তার এই সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে কথা বলাও বারণ। আর এর নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালী মহল।
সরেজমিনে ঘাটাইলের খরাবর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় তার প্রতি এলাকার মানুষে ভয়ভীতি থাকলেও তার বিরোদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই।
এই মাদক-জোয়ার সম্রাট, ভূমিদস্যু, অবৈধ বেকু দালাল জাল-জালিয়াতি প্রতারক খালেদ শামস এর বহুমুখি তান্ডবে দিশেহারা এলাকাবাসী। এই ভয়ংকর খালেদ শামস এর হিংস্র থাবা থেকে মুক্তি চায় এলাকার ভূক্তভোগি মানুষ।
জানা যায়,খালেদ শাসস এর পিতা সোহরাব মাস্টারের বাড়ি গোপালপুর উপজেলায়। বদর উদ্দিন মৌলভীর হাত ধরে পালক সন্তান হিসেবে ঘাটাইলে আসেন সোহরাব মাস্টার। মৌলভীর বাড়িতে থেকেই লেখাপড়া করে। ঐ সময় শিক্ষিত জানাশোনা মানুষ হিসেবে পরিচিতি পায় সোহরাব মাস্টার। তাই তার কাছে যে কোন বিষয় নিয়ে এলাকার মানুষ তার সাথে পরামর্শ করতেন। বিশেষ করে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই বেশী যেতেন। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাতেন তিনি। সমস্যা সমাধান তো দুরের কথা সোহরাব মাস্টার বুঝে শুনে জমিতে আরো বিভেদ সৃস্টি করে রাখতেন।যাতে পরবর্তীতে এইসব জমির ভূয়া কাগজপত্র বানিয়ে এলাকাবাসীকে ধোকা দিয়ে নিজের নামে কাগজপত্র তৈরি করে জমি বে-দখল করতে পারে।
বর্তমানে পিতার পথে হাটার সেই অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এক পর্যায়ে তিনি দখলবাজ ও ভূমিদস্যু হিসেবে স্থানীয়দের মাঝে পরিচিতি পান।
কথায় আছে যেমন পিতা তেমন পুত্র। এরপর তার ছেলে খালেদ শামস বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলতে থাকে। বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময়ে প্রশাসনের ছত্র ছায়ায় মাদক ব্যবসা, জুয়াসহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে অবৈধভাবে বিশাল কালো টাকার মালিক হন।
এক পর্যায়ে তার বাবার মতই ভুমিদস্যু বনে যান খালেদ শামস। তার বাবার পথ ধরে যে সমস্ত জমির কাগজপত্রের ত্রুটি আছে কৌশলে ঐ জমির কাগজপত্র তৈরি করে বে-দখল দিয়ে কাড়ি-কাড়ি জমির মালিক হয়ে এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিতি পায়।
খালেদ শামস শুধু ভূমিদস্যুই নয় তিনি বিভিন্ন ব্যাংক ও অবৈধ বেকুর দালাল হিসেবেও পরিচিত। তিনি মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বেকুর ব্যবসার প্রলোভন দেখায়। আর এই জন্য তিনি ব্যাংক ও বেকুর দালালি করে পেয়ে থাকেন মোটা অঙ্কের টাকা। মানুষকে সর্বস্বান্ত করে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, বাংলাদেশ আওয়ামী নবীন লীগের ঘাটাইল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস. এম. সালাহ উদ্দিন তুষার বলেন, একদা খালেদ শামস আমাকে বেকু ব্যবসার লোভ দেখায়। আমি তাকে বলি, আমার কাছে এত টাকা পয়সা নেই। তিনি (খালেদ শামস) আমাকে বলেন, টাকার জন্য তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমিই সব ব্যবস্থা করে দেব। এই বলে আমাকে দিয়ে ইসলামী ব্যাংক মধুপুর শাখায় একটি লোন করান। পরবর্তীতে আমাকে কিছু না বলে তিনি একটু পুরাতন নষ্ট বেকু নিয়ে আসেন। যাহার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২০’লক্ষ টাকা। বেকুটি খালেদ শামস ফুলবাড়িয়া উপজেলায় এক ঠিকাদারের মাধ্যমে ভাড়ার ব্যবস্থা করে দেন। তিনি আরো বলেন, বেকুটি সেখানে একদিন চলার পর চুরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই বিষয় নিয়ে আমি থানায় একটি মামলা করি। চুরি হওয়া বেকুর বিষয়ে সেই ঠিকাদারকে থানায় নিয়ে আসা হলে তিনি খালেদ শামসের নাম উল্লেখ করেন। একদিকে আমার বেকু চুরি হওয়া অন্যদিকে ব্যাংকের লোন আমি এখন সর্বস্বান্ত। অভিযোগ রয়েছে এভাবে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ঘাটাইলের অনেক ব্যবসায়ীকে সর্বস্বান্ত করেছেন এই খালেদ শামস ওরফে বেকু খালেদ। আর এভাবে তিনি হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। তাদের কর্মকান্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছেন।
খোঁজ নিতে গেলে এলাকাবসী সূত্রে জানা যায়, সোহরাব মাস্টার মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার ছেলে অভিযুক্ত খালেদ শামস বর্তমানেও জামাত শিবিরের সক্রিয় একজন কর্মী।
সর্বশেষ ঘাটাইল পৌরসভার খরাবর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আবু সিদ্দিকীর স্ত্রীর নামে সাব কবলা জমি বে-দখল করে ঘর নির্মাণ করে আলোচনায় উঠে আসেন। এই নিয়ে গত ২৮ জুলাই উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন করে ভুক্তভোগী পরিবার। মানববন্ধনের পর স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘৯৬ সালে ঘাটাইলের খরাবর এলাকা থেকে তার স্ত্রী ফিরোজা খাতুনের নামে সাব কবলা মুলে এক খন্ড জমি ক্রয় করি। ওই দাগে খালেদ শামস গং’রা বিগত ‘৯৯ সালে রেওয়াজ বদল মুলে অন্যদের কাছ থেকে একটি দলিল করেন। অথচ যাদের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছে ঐ সময় ঐ দাগে তাদের নামে কোন জমিই ছিলনা বলে তিনি জানান। তখন তারা ছিল ভূমিহীন। কিন্তু খালেদ শামস ভূয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে আমাদের জমি বে-দখল করে রেখেছে। তার বিরুদ্ধে কোন কথা বললে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মেরে গুম করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। গত বুধবার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার উপরে হামলা চালায় এবং বলে আসে এই জমি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোদেরকে খুন করে গুম করে ফেলব। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবী করছি।
এ বিষয়ে আরেকজন ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষক বেদেনা খাতুন বলেন, আমাদের জমিও দীর্ঘদিন ধরে এভাবে বেদখল করে রেখেছে। আমি প্রতিবাদ করায় ও মিডিয়ার সামনে কথা বলায় আমাকে নানাভাবে হুমকী দিচ্ছেন খালেদ শামস।
এ বিষয়ে আরো জানতে চাওয়া হলে, খরাবর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নারায়ণ বাবু বলেন, খালেদ শামসের মত খারাপ মানুষ এই এলাকায় আর একটিও নেই। আমার মতো আরো অনেকের সম্পত্তি জবর-দখল করে রেখেছে সে।
এ ব্যাপারে খালেদ শামসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। আমি একজন ভাল মানুষ। আমার মুখ দিয়ে কখনও মিথ্যা কথা বের হয় না। আমার এলাকায় আমার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। আমি মানুষকে সব সময় সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply