নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা না ঘটলেও এ সংক্রান্ত একটি মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করে স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনায় মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুনকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বুধবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার মো: জায়েদুল আলম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা এই মামলার রহস্য উদঘাটনে মামলাটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অভিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসামিদের পরিবারের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ ও বিতর্কিত জবানবন্দি আদায়সহ নানা অভিযোগ উঠায় মঙ্গলবার রাতেই তাকে ক্লোজ করা হয়। পাশাপাশি এ ঘটনায় গঠিত দুইটি কমিটি তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বুধবার সকালে তদন্ত কমিটির সদস্যরা উদ্ধার হওয়া কিশোরীর বাসায় গিয়ে পরিবারের সাথে কথা বলেন এবং তাদের বর্তমান পরিস্থিতির খোঁজ খবর নেন। পাশাপাশি তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন কর্মকর্তারা।
জিসা দেওভোগ পাক্কা রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন। গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিল সে। এর এক মাস ২ দিন পর ৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন তার বাবা।
মামলার বাদীর দাবি, মেয়েকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিতো আব্দুল্লাহ্। একাধিকবার নিষেধ করা হলে সে মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেয়। গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ্ ফোনে ঠিকানা দিলে আমার মেয়ে সেই ঠিকানায় যায়। পরে তাকে অপহরণ করে আব্দুল্লাহ্ ও তার সহযোগীরা।
৯ আগস্ট বিকেলে জেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ূন কবিরের আলাদা তিন আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। ওই সময়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই শামীম আল মামুন ওই সময়ে গণমাধ্যমকে জানান, অপহরণ মামলার পর মেয়েটির মায়ের মোবাইল ফোনের কললিস্ট চেক করে রকিবের সন্ধান পাওয়া যায়। রকিবের মোবাইল নম্বর দিয়েই আব্দুল্লাহ্ জিসার সঙ্গে যোগাযোগ করতো। ঘটনার দিনও ওই নম্বর দিয়ে কল করে সে। রকিবকে গ্রেফতারের পর আব্দুল্লাহ্কে গ্রেফতার করলে সেও নৌকার মাঝি ধর্ষণ ও হত্যার বিষয় স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী পরবর্তী সময়ে মাঝি খলিলুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।
আসামির জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানায়, ঘটনার তিন মাস আগে আব্দুল্লাহ্র সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মেয়েটির। গত ৪ জুলাই বিকেলে বন্ধু রকিবের ইজিবাইকে বন্দরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে তারা। সন্ধ্যায় শহরের ৫ নম্বর ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঘুরতে থাকে তারা। একপর্যায়ে নৌকায় মেয়েটিকে ধর্ষণ করে কথিত প্রেমিক আব্দুল্লাহ্ ও মাঝি খলিলুর রহমান। মেয়েটি সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার ভয় দেখালে অভিযুক্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে রাত ৯টার দিকে বন্দর ইস্পাহানী ঘাটের উত্তর পাশে মরদেহটি ফেলে দেওয়া হয়।
আসামিরা হলেন- বন্দর উপজেলার বুরুন্ডি খলিলনগর এলাকার আব্দুল্লাহ (২২), বুরুন্ডি পশ্চিমপাড়া এলাকার রকিব (১৯) ও নৌকার মাঝি খলিলুর রহমান (৩৬)।
২৩ আগস্ট দুপুরে বন্দরের নবীগঞ্জ রেললাইন এলাকায় সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া যায় নিখোঁজ জিসা মনিকে। এ ঘটনায় চারদিকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পুলিশের তদন্ত ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply