টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে দোকান ও বাড়ি-ঘর ভাংচুর মামলার আসামীরা জামিনে এলাকায় এসেই মামলার বাদী ও তার পরিবারকে প্রান নাশের হুমকি প্রদান করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই মামলার বাদী পক্ষের লোকজন।
মামলার আসামীরা কোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখলের জন্য প্রধান মন্ত্রী ও শেখ হেলালের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। আসামীরা জামিনে এলাকায় এসেই প্রধান মন্ত্রী ও শেখ হেলালের আত্বীয় পরিচয়দানকারী সাফায়েত হোসেন শেখ, যশোরের আশরাফ হোসেন ও মির্জাপুরের বকুল গং সিন্ডিকেট করে মামলার বাদী ও তার পরিবারকে হুমকি দেয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই পরিবার। ২৬ আগস্ট বুধবার এমন দাবি ও অভিযোগ করেনআব্দুল মান্নান।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার তরফপুর ইউনিয়নের টাকিয়াকদমা বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে।
মির্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগি পরিবার জানিয়েছেন, টাকিয়াকদমা মৌজায় ১০৭৩ দাগের টেনু মিয়া, রমজান আলী ও জাগির সিকদারের নিকট থেকে ক্রয় সুত্রে ও পৈত্রিক সুত্রে মালিক আব্দুল মান্নান, রফিক মিয়া, খন্দকার লতিফ মিয়া, মসজিদ, সমেজ হাজী এবং মোসলেম মিয়া ও শাজাহান মিয়া।
তারা যুগ যুগ ধরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি নির্মান করে বসবাস করে আসছেন। তাদের নামে দলিল, সিএস, আরএস, খাজনা খারিজসহ সকল কাগজপত্র রয়েছে। মান্নান ও রফিক অভিযোগ করেন, ভাওড়া গ্রামের আতর আলীর ছেলে বকুল দেওয়ান, বিল্লাল দেওয়ান, তার বোন মনোয়ারা, নুরজাহান, কদমা গ্রামের করিম, সামাদ, জিয়ারত ও তাদের ভাড়াটে বরিশালের শেখ সাফায়েত হোসেন ও যশোরের আশরাফ গংদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে।
এ নিয়ে মির্জাপুর থানা ও টাঙ্গাইল জজ কোর্টে মামলা রয়েছে এবং জমির উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোর্টের নিষেধাঙ্গা অমান্য করে গত ১১ আগস্ট ঢাকা জেলা মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মলীগের সভাপতি মো. সাফায়েত হোসেন শেখ ও আশরাফ হোসেন প্রধান মন্ত্রী ও শেখ হেলালের আত্বীয় পরিচয় দিয়ে (তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে) তাদের নের্তৃত্বে ৫০-৬০ জনের সশস্র ভাড়াটে গুন্ডাবাহিনী টাকিয়া কদমা বাজারে ১৪ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ৪ টি বসতবাড়ির ঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের সহযোগিতা করে বকুল, করিম, সামাদ, জিয়ারতসহ স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। সাফায়েত শেখ, আশরাফ ও বকুল গংদের ভয়ে আব্দুল মান্নান ও রফিক গংরা বের হতে পারেনি এবং পুলিশসহ প্রশাসনকেও জানাতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ায় তাদের ২৫-৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগি পরিবার অভিযোগ করেছেন গত বছরের ১৯ নভেম্বর সাফায়েত হোসেন শেখ ও বকুল গং নানা কৌশলে মান্নান গংদের থানায় ধরে নিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় এবং ২৩ নভেম্বর মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠায়। গত ২৭ জুলাই স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় তাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি ও ভয়ভিতি দেখিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করে। ভিটে মাটি রক্ষা ও পরিবারের নিরাপত্তাসহ ন্যায় বিচার চেয়ে গত (১২ আগস্ট) মির্জাপুর থানায় ১০-১২ জনের নাম উল্লেখ করে আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলার আসামীদের গ্রেফতার না করায় গত সোমবার (২৫ আগস্ট) খুঁটি ও টাকার জোরে আসামীরা জামিনে এসেছেন। আসামীরা জামিনে এলাকায় এসেই বাদী ও তার পরিবারকে হুমকি দেওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। জমি রক্ষা ও পরিবার পরিজনের নিরাপত্তাসহ প্রধান মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবাী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সাফায়েত হোসেন শেখ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বাড়ি বরিশাল, প্রধান মন্ত্রী ও শেখ হেলাল আমার আত্বীয় হতেই পারে। আমি ঐ জমি ক্রয় করেছি। জমিতে এলাকার কিছু লোক তাদের জমি দাবী করে বসবাস করছেন। আমারা লোকজন নিয়ে অবৈধ দোকান ও বাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছি। তার কাছে জমি ক্রয়ের কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি তার নামে জমি ক্রয়ের কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এ সময় বিভিন্ন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে জমির মালিক পচিয়দানকারী বকুল দেওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, টাকিয়া কদমা মৌজায় ১০৭৩ দাগের ১৫৪ খতিয়ানের রমজানের নিকট থেকে ক্রয়কৃত ৭২ শতাংশ জমি রয়েছে। জমিতে আমরা দখলে যেতে পারিনা। এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে তাদের সঙ্গে মামলাসহ বিচার শালিস চলে আসছে। ভাংচুরের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি ভাংচুর করিনি অন্য লোকজন ভাংচুর করেছে ।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর ভাংচুরের বিষয়টি সম্পর্কে প্রথমে থানা পুলিশ অবহিত ছিলাম না। ঘটনার পর ভুক্তভোগি পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এবং মামলা রেকর্ড হয়েছে। তদন্ত চলছে অভিযোগ প্রমানিত হলে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর সার্কেল) মি. দীপংকর ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভাংচুরের ঘটনায় ভুক্তভোগি পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এবং মামলা রেকর্ড হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মীর্জা মো. জুবায়ের হোসেন বলেন, টাকিয়া কদমা বাজারে জমির উপর কোর্টের নিষেধাজ্ঞা (স্থিতাবস্থা জারি রয়েছে)। কারও বাড়িঘর বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করতে হলে কোর্টের নির্বাহী আদেশ ও পুলিশের সহযোগিতায় ম্যাজিষ্ট্রেট স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার বিধান রয়েছে। কারও বাড়ি ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা যাবে না। কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যারা ভাংচুর চালিয়েছেন তারা অন্যায় করেছেন। ভুক্তভোগি পরিবার আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply