মণিরামপুর প্রতিনিধি: মণিরামপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেরামত ও সংস্কার, স্লিপ, প্রাক-প্রাথমিক,রুটিন সংস্কারে সরকারি বরাদ্দকৃত প্রায় ৪ কোটি ২ লাখ টাকার কাজে নয় ছয়ে বেরিয়ে পড়তে শুরু করেছে থলের বিড়াল। নেপথ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসের ৩ সহকারি শিক্ষা অফিসার ও কতিপয় প্রধান শিক্ষককের গড়ে উঠা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কমিশন বানিজ্যের পরিকল্পনা তথ্য উঠে এসেছে।
এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত বিপুল অর্থের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে নয় ছয় ও ভুয়া বিল ভাউচার জমা দিয়ে বিলের আবেদন নিয়ে সংবাদ প্রকাশে তোড়পাড় সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে (২০১৯-২০) উপজেলার ২শ’৬৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপ বাবদ ১ কোটি ২৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯শ’২৫ টাকা, ১টিতে অস্থায়ী গৃহ নির্মানে ৩ লাখ, মেরামত ও সংস্কারে ৫৯ টি বিদ্যালয়ে ১ কোটি ১৮ লাখ, ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কারে ১৭টিতে ২৫ লাখ ৫০ হাজার, আম্ফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ ৬টিতে ৬ লাখ, নিড বেজড প্লেয়িং এক্সেসোরিস কাজের ৬ টি’তে ৯ লাখ, রুটিন সংস্কারে ২শ’২টি’তে ৮০ লাখ ৮০ হাজার, প্রাক-প্রাথমিক ২শ’৬৭ টি’তে ২৬ লাখ ৭০ হাজার, ওয়াশব্লকের ২৩টি’তে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে সর্বমোট ৪ কোটি ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯শ২৫ বরাদ্দ দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। (এ অংশটুকু গতকাল রিপোর্টে উল্লেখ ছিলো)
অনুসন্ধানে জানাযায়, এসব প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থের কাজের নয় ছয়ের সুযোগ দিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারি শিক্ষা অফিসার মাহিদুল ইসলাম, হায়দার আলী ও পলাশকান্তি হালদার ও প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার দাস, ওমর আলী, রতন রায়, নবিরুজ্জামান, বিধান সরকার, মনছুর আলীসহ কতিপয় শিক্ষকের নেতৃত্বে কমিশন বাণিজ্য সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এসব শিক্ষকদের দিয়ে বরাদ্দ পাওয়া বিদ্যালয়ের বাকি প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে কমিশন হাতিয়ে নেয়ার সব ব্যবস্থা চ’ড়ান্ত করা হয়। এসব শিক্ষকদের স্কুল ফাঁকি দিয়ে ব্যবসাসহ অকারনে অফিস পাড়ায় ঘুরঘুর করার অভিযোগ দির্ঘদিনে। এসব শিক্ষকদের দিয়ে ওই সহকারি শিক্ষা অফিসাররা অনৈতিক সুবিধা আদায়ের বিনিময়ে তাদের এ সুযোগ দিয়ে থাকেন বলেও প্রচার রয়েছে।
খেদাপাড়া ক্লাস্টারের ( শিক্ষার মান উন্নয়ন, তদরাকি করতে ২৫/৩০ বিদ্যালয় নিয়ে ক্লাস্টার গঠিত, যার দায়িত্বে থাকেন একজন সহকারি শিক্ষা অফিসার) দায়িত্বে সহকারি শিক্ষা অফিসার মাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। তিনি ওই ক্লাস্টারের দুই প্রধান শিক্ষক ওমর আলী ও রতন রায়কে দিয়ে যশোরের একটি নির্দিষ্ট দোকান থেকে স্লিপের টাকা দিয়ে প্রিন্টার মেশিন কেনার জন্য চাপ দেন বলে অভিযোগ।
একই ক্লাস্টারের প্রধান জালাল উদ্দীন বলেন, মাহিদুল স্যার সভায় ওমর আলী ও রতন রায়ের মাধ্যমে ক্লাস্টারে অন্তর্ভূক্ত ২৯ টি বিদ্যালয়ে প্রিন্টার মেশিন কেনার কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ওমর আলীর এ অবিযোগ পাশ কাটিয়ে বলেন, সভায় শিক্ষকদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে প্রিন্টার কেনার কথা থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার না থাকায় অনেক স্কুল সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। পরে ১০টি বিদ্যালয়ে প্রিন্টার কেনার অর্ডার যশোরের একটি দোকানে দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, ভাল কাজ করেও সমস্যা। তাতে স্যারদের কথা শুনতে হয়।
প্রধান রতন রায়ও এসব অভিােগ স্বীকার করেননি।
সহকারি শিক্ষা অফিসার মাহিদুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, তার ক্লাস্টারে অন্তর্র্ভূক্ত বিদ্যালয়ে বরাদ্দের শতভাগ কাজ হয়েছে।
লাউড়ী ক্লাস্টার সংশ্লিষ্ট স্বপন কুমার দাস নামের এক প্রধান শিক্ষক সহকারি শিক্ষা অফিসার পলাশ কান্তি হালদারের কথা বলে কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের কাছে অর্থ দাবি করেছেন বলে অভিযোগ। তিনি বাজেটে স্যারের জন্য টাকা রাখতে বলেছেন।
অবশ্য প্রধান শিক্ষক স্বপন দাস তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ স্বীকার করেননি।
সহকারি শিক্ষা অফিসার পলাশকান্তি হালদার এ ধরনের নির্দেশনা কাউকে দেননি বলে দাবি করেন। ঢাকুরিয়া ক্লাস্টারের দায়িত্বে সহকারি শিক্ষক হায়দার আলীর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ পাওয়া গেলেও তিনি তা অস্বীকার করেন।
এসব বিষয় জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার সেহেলী ফেরদৌস বলেন, তার কাছেও ওই তিন শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply