এম শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ পিডিবির দায়িত্বহীন ভৌতিক বিলের মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে “দুসস” নিউজসহ সংবাদকর্মী, অন্যান্য গণমাধ্যম ও ব্র্যাকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন শ্যামলা বেগম।
পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ টাঙ্গাইলের দায়িত্তহীণ ভৌতিক বিল ও অনাকঙ্খিত মামলায় হয়রানীর শিকার বৃদ্ধা শ্যামলা বেগমকে এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির আওতায় সহায়তা আইনী সহায়তা প্রদান করে।
সোমবার ১৪ সেপ্টেম্বর হাজিরার নির্ধারিত তারিখে ব্র্যাক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির আইনজীবি হুমায়ূন কবির আদালতে শ্যামলা বেগমের জন্য জামিন আবেদন করেন। একইদিন মামলার বাদী পিডিবির বিক্রয় ও বিতণ বিভাগ-১ এর সহকারী প্রকৌশলী সাইমুম শিবলী শ্যামলা বেগমের নামে করা মামলাটি প্রত্যাহার পত্র জমা দিয়ে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন।
ব্র্যাক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির টাঙ্গাইল সদর এলাকা অফিসের সিনিয়র এইচআর এলএস অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত খবর দেখে জানতে পারি শ্যামলা বেগমকে বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়েই প্রায় সোয়া লাখ টাকা বিল ও তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পরে শ্যামলা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হয়। এরপর তিনি আমাদের কাছে আইন সহায়তার জন্য আবেদন করলে মামলা মোকাবেলা করার জন্য ব্র্যাক কর্তৃক প্যানেল আইনজীবি নিয়োগ দেওয়া হয়।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এ মামলায় শ্যামলা বেগমকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্ধারিত তারিখ ছিল। ওইদিন ব্র্যাকের আইনজীবি হুমায়ূন কবির শ্যামলা বেগমের জন্য আদালতে জামিন আবেদন করেন। এরপর বাদীপক্ষ আদালতে মামলাটির প্রত্যাহারপত্র জমা দেন। ফলে পিডিবির এ ভিত্তিহীণ মামলা থেকে এখন শ্যামলা বেগম মুক্ত।’
ব্র্যাক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি টাঙ্গাইলের জেলা ব্যবস্থাপক কল্পনা রাণী ভৌমিক বলেন, ‘ব্র্যাক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে আইন সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে সমাজের অসহায় মানুষগুলো হয়রানি থেকে মুক্তি পাচ্ছে। অসহায় মানুষগুলো ফিরে পাচ্ছে তাদের অধিকার।’
মামলার বাদী টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ (বিউবো) এর সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইমুম শিবলী বলেন, ‘শ্যামলা বেগমের নামে করা বিলের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে তদন্ত কমিটি শ্যামলা বেগমের সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ার বিষয়টি দেখতে পায়। এঘটনায় সোমবার আদালতে শ্যামলা বেগমের হাজির হওয়ার নির্ধারিত তারিখ ছিল। নির্ধারিত দিনে টাঙ্গাইলের ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) বিদ্যুৎ আদালতে করা মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
ভুক্তভোগী শ্যামলা বেগম বলেন, আমি সকল গণমাধ্যম কর্মী ও প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার এমন দুঃসময়ে সাংবাদিকরা এগিয়ে এসে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশ করা হয়। যার ফলে ব্র্যাক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি আমার পাশে থেকে আইনী সহায়তা প্রদান করে। তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ।’
প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের দাপনাজোর হাকিমপুর গ্রামের মৃত আবদুর সবুর মিয়ার স্ত্রী শ্যামলা বেগম সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ লাইন নেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) টাঙ্গাইলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর অধীনে আবেদন করেন।
ওই সময় দাপনাজোর হাকিমপুর, দেউলী ও মুড়াকৈ এলাকার ১২ জনের কাছ থেকে সেচ মেশিনে বিদ্যুতের লাইন পাইয়ে দিতে স্থানীয় শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে বাসাইল পৌর এলাকার মশিউর রহমান নামের এক ব্যক্তি ১১ লাখ টাকা নেন। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে তিনি ৯ জনের সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেন।
এছাড়া নিজ দায়িত্বে বাঁশ, সিমেন্টের খুঁটি ও তার কিনে আরও দুইজন তাদের সেচ মেশিনে সংযোগ নেয়। ওই সময় রহস্যজনক কারণে শ্যামলা বেগমের লাইন না দিয়ে সংশ্লিষ্টরা তার লাইন বাতিলের কথা বলে কাজ শেষ করে চলে যায়।
আবেদনের প্রায় পাঁচ বছর পর সম্প্রতি শ্যামলা বেগমের নামে এক লাখ ১৪ হাজার ৬২৭ টাকা বিদ্যুৎ বিল দেখিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ (বিউবো) এর সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইমুম শিবলী বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) বিদ্যুৎ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply