টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ভাতাসহ সব ধরনের সরকারি সুবিধা ভোগকারী সেই আলমগীর হোসেন হিরুর বিরুদ্ধে তার আপন ভাইদের করা অভিযোগ তদন্ত করবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল।
আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) কার্যালয়ে এ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করবে জামুকার চেয়ারম্যান। এজন্য জামুকার সহকারী পরিচালক প্রশাসন-২ স্বাক্ষরিত একটি পত্র দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মির্জাপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত হাকিম উদ্দিনের চার ছেলের মধ্যে আলমগীর হোসেন হিরু মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে তিনি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো কিনা তা জানেন না তার বড় তিন সহোদর ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া তিনি যে একজন মুক্তিযোদ্ধা তা জানেন না উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের তিন বারের নির্বাচিত সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাসসহ গ্রামবাসীও।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে আলমগীর হোসেন হিরু জানান, মির্জাপুর পৌর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে একই কোম্পানিতে যুদ্ধ করেছেন তিনি। তবে তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও গ্রামের লোকজন জানেন না বলেও তিনি স্বীকার করেন।
অথচ কমান্ডার মোহাম্মদ আলী জানান, ওই নামের কেউ তার সঙ্গে বা তার কোম্পানিতে যুদ্ধ করেননি। এত কিছুর পরও আলমগীর হোসেন হিরু নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে গোপনে তালিকাভুক্ত করেছেন নিজের নাম। গত কয়েক বছর ধরে ভাতাও উত্তোলন করছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় ইতোমধ্যে এক ছেলে পুলিশে এবং এক মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরিও পেয়েছেন। অপর ছেলেরও পুলিশে চাকরি হওয়ার পথে বলে জানা গেছে।
এদিকে, নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে গোপণে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করে দিনের পর দিন সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন হিরু। এমন অভিযোগ তুলে গত বছর ডিসেম্বরে তার আপন বড় দুই ভাই আবদুল বাছেদ মুন্সী ও বাবুল হোসেন বাবু মিয়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও জামুকা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
পরে জামুকা কাউন্সিল অভিযোগটি আমলে নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত উভয়পক্ষকে কার্যালয়ে হাজির হতে বলেছে। ওইদিন উপযুক্ত স্বাক্ষী ও দালিলিক প্রমাণাদিসহ উভয়পক্ষকে হাজির হতে বলা হয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত হিরুর বড় দুই ভাইয়ের মধ্যে আবদুল বাছেদ মুন্সী গত কয়েক মাস আগে মৃত্যুবরণ করেছেন।
অপর ভাই বাবুল হোসেন বলেন, ‘ছোট ভাই যুদ্ধ না করেও প্রতারনার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম লেখানোতে সমাজে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের কথা শুনতে হয়। এছাড়া মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কেউ প্রতারণা করুক তা আমরাও চাই না। তাই বড় ভাইয়ের ইচ্ছে ছিল এই অপবাদ থেকে মুক্তির। আমিও তাই চাই।’
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার দুর্লভ বিশ্বাস বলেন, ‘আলমগীর হোসেন হিরু যে মুক্তিযোদ্ধা, ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা ভোটার তালিকায় তার নাম দেখে আমি জানতে পেরেছি।’ একই কথা বলেন, গ্রামের বাসিন্দা যুদ্ধকালীন সময়ের স্বেচ্ছাসেবক জোয়াহের আলী।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply