ময়মনসিংহ থেকে আনোয়ার হোসেন : ভালুকা ডিজিটাল হাসপাতালের ডাক্তারের অবহেলায় ফজিলা মৃত্যু শয্যায়। ভালুকা পৌর সদরে অবস্থিত ভালুকা ডিজিটাল হাসপাতালের পাশ্ববর্তী ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান মোল্লার স্ত্রী তিন সন্তানের জননী ফজিলা আক্তার(২৮)কে সিজারিয়ান অপারেশনের ৫মাস ১৩দিন পর গত শুক্রবার রাতে(২৫সেপ্টেম্বর) ময়মনসিংহের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে পূনঃরায় অপারেশন করে পেটে আস্ত একটা মুপ বের করা হয়। ফজিলা এখন হাসপাতালে মৃত্যুর শয্যায়।
সূত্রে জানাযায়, ফজিলা আক্তারের তৃতীয় সন্তান প্রসবের জন্য গত ১৩এপ্রিল দুপুরে ভালুকা ডিজিটাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের লোকজনকে জরুরী ভিত্তিতে সিজারিয়ান অপারেশনের পরামর্শ দেন। প্রাইভেট ক্লিনিকের পক্ষে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের সাবেক কনসালটেন্ট ডা.মফিজুল রহমানকে দিয়ে ফজিলার সিজারিয়ান করান। এ সময় অজ্ঞানের ডাক্তার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ডা.মেহদী হাসান। সিজারিয়ান করার পর ফজিলা একটি মেয়ে সন্তান জন্ম লাভ করেন। এ সময় ফজিলার পেটের ভিতরে রক্ত মুছার গজ কাপড় জাতীয় দ্রব্য (যাকে ডাক্তারি ভাষায় মুপ বলে) পেটের ভিতরে রেখে ডা. মফিজুর রহমান কাটা স্থান সেলাই করে দেন। ১৬এপ্রিল অসুস্থ শরীর থাকা সত্ত্বে ফজিলা আক্তারকে ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর শারীরিক নানা জটিলতা লেগেই থাকতো গত কয়েক দিন পূর্বে পেট ফেঁপে গিয়ে প্রচন্ড পেট ব্যথা দেখা দিলে তাকে ভালুকা ও ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে দেখানোর পর ডাক্তাররা ধারনা করতে ছিলেন তাঁর পেটের আতে পেঁচ লেগে পেট ফুলে যাচ্ছে।
গত ২৫সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ শহরের ভাটিকাশর এলাকার আইডিয়েল প্রাঃ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা.শওকত আলী শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে ফজিলাকে পূনঃরায় অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। অপারেশন করার পর তাঁর পেট থেকে আস্ত একটি বড় আকৃতির মুপ বের হয়ে আসে। দীর্ঘ ৫মাসেরও অধিক সময় জরায়ুর মাঝে মুপ আটকে থাকায় জরায়ু পচে ছিঁড়ে মুপ পেটের নাড়িভুঁড়ি সাথে পেঁচ লেগে পেট ফুলতে থাকে। এ সময় ডা: শওকত আলী ফজিলাকে বাঁচানোর স্বার্থে পেটের নাড়ি অনেকটা অংশ কেটে ফেলে দিয়ে বিকল্প ভাবে প্রশ্রাবের ব্যবস্থা করে দেন। তিন মাস পর ফজিলাকে আবারো অপারেশন করে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্রাবের ব্যবস্থা হবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। এ সময় ডা.শওকত আলীকে সহযোগীতা করেন অজ্ঞানের চিকিৎসক ডা. রবিন অপূর্ব।
শাহজাহান মোল্লাহ জানান, আমি একজন দিন মজুর আমার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছে হাত পেতে সহযোগীতা নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছি। আজকে পর্যন্ত ডিজিটাল হাসপাতালের মালিক পক্ষ ও ডাক্তার আমাকে কোনো প্রকার সহযোগীতা করেনি। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার জন্যই আমার স্ত্রীর আজ এ দূরাবস্তা। আমি তিন সন্তানের খাবার জোটাবো না হাসপাতালের খরচ জোগবো এ নিয়ে আমি খুব বিপদে আছি।
ডা. মফিজুর রহমান বলেন,মানুষ মাত্রই ভুল হতেই পারে। অপারেশন করলে শতকরা ২/১টিতে সমস্যা হতেই পারে। যে রোগির সমস্যা হয়েছে তাঁর পরিবারের লোকজন যদি হাসপাতালে যোগাযোগ করতো তাহলে তার চিকিৎসার ভার আমরা গ্রহন করতাম।
ডা.শওকত আলী জানান, সিজারিয়ান অপারেশন করার সময় পেটের ভিতরে আস্ত একটি মুপ রেখে সেলাই করার পর ৫মাস পর আবার অপারেশন করে মুপ রেব করা হয় এবং পেটের ভিতরের অনেক টুকু নাড়ি কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। ভিতরে মুপ আটকে থাকায় জরায়ু ফেটে পেটের নাড়িভুঁড়ি সাথে পেচ লেগে যায়। তিনি আরো বলেন আবার তিন মাস পর রোগীকে অপারেশন করতে হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply