নইন আবু নাঈম, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ বাগেরহাট জেলার, চিতলমারী থানা পুলিশ প্রায় দেড় যুগ ধরে চলা ‘গোল্ড কয়েন’ চক্রের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ ও মামলার পর পুলিশের অভিযানে এক সদস্য আটকের পর চক্রটি ছত্রভঙ্গ হয়ে পরে। মঙ্গলবার এ চক্রের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) জেল হাজতে আটক দুই আসামীর রিমান্ড আবেদন করেন। গত ৩ অক্টোবর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের বাস ও ট্রাক চালক মোঃ আইয়ুব আলী (৩৫) ‘গোল্ড কয়েন’ চক্রের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করেন।
পুলিশ, মামলার বাদী ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাবুগঞ্জ বাজার এলাকায় প্রায় দেড় যুগ ধরে একটি শক্তিশালী চক্র ‘গোল্ড কয়েন’ ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। কিছু প্রভাবশালী ও নেপথ্য নায়কদের ছত্র ছায়ায় ওই চক্রের সদস্যরা সামান্ন পরিচয়ের সুত্র ধরে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে সখ্যতা গড়ে তোলে। এরপর সুযোগ মত ওইসব ব্যক্তিদের মূল্যবান গোল্ড কয়েন দেয়ার কথা বলে। তারা বিশ্বাস বাড়াতে লোকদের এলাকায় এনে স্থানীয় স্বর্ণকারের দোকানে নিয়ে গোল্ড কয়েন পরীক্ষা করে দেখান। এরপর দর কষাকষি চলতে থাকে। নির্ধারিত দিনে ক্রেতাকে টাকা নিয়ে আসতে বলেন। টাকা নিয়ে আসলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে ক্রেতার কাছ থেকে টাকাসহ সবকিছু ছিনিয়ে নেন। এভাবেই গত প্রায় এক দেড় যুগ ধরে প্রতারণা করে আসছে চিতলমারীর এই ‘গোল্ড কয়েন’ চক্রটি।
এরই ধারাবাহিকতায় কিছু দিন আগে এ চক্রের খপ্পরে পড়ে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দুলালী গ্রামের মৃত শমজেদ আলী গাজীর ছেলে বাস ও ট্রাক চালক মোঃ আইয়ুব আলী। চক্রটি তাকে গোল্ড কয়েনের কথা বলে। প্রথমেই তিনি এটা কিনতে অস্বীকার করেন। পরে চক্রটির পিঁড়াপিঁড়িতে রাজি হন। অবশেষে ২৭ সেপ্টেম্বর তার আত্মিয়-স্বজন, প্রতিবেশির কাছ থেকে সুদ করে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে চিতলমারীতে আসেন। এদিন দুপুরে ‘গোল্ড কয়েন’ চক্রের সদস্যরা তাকে স্থানীয় ডাকাতিয়ার মোড় এলাকার নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। এরপর তার কাছ থেকে জোরপূর্বক ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে তাকে কাউকে কিছু না বলার হুমকী দিয়ে তাড়িয়ে দেন। তিনি ৪ দিন ধরে খেয়ে না খেয়ে চিতলমারীর পথে পথে ঘুরতে থাকেন। বিষয়টি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় তিনি বাদী হয়ে ৩ অক্টোবর চিতলমারী থানায় (৪নং) একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর পুলিশ এলাকায় ব্যাপক অভিযান শুরু করে। ৪ অক্টোবর পুলিশ মামলার প্রধান আসামী চিতলমারী উপজেলার খলিশাখালী গ্রামের মৃত রঞ্জন বিশ্বাসের ছেলে কিরণ বিশ্বাস (৪৫) কে আটক করে এবং কিরণের স্বীকারোক্তি মোতাবেক গোল্ড কয়েন বিক্রির ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করেন। এরপর চক্রটি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে। গাঢাকা দিয়েছে চক্রের সর্বস্তরের সদস্যরা। ৫ অক্টোবর মামলার অপর এক আসামী একই গ্রামের রুহিদাস বিশ্বাসের ছেলে রঞ্জিত বিশ্বাস (৪৮) আদালতে হাজির হলে বিজ্ঞ আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন। এ ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এসআই নিকুঞ্জু রায় মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) বিজ্ঞ আদালতে জেল হাজতে আটক দুই আসামীর রিমান্ড আবেদন করেছেন।
এ ব্যাপারে চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শরিফুল হক জানান, প্রায় দেড় যুগ ধরে চলা গোল্ড কয়েন চক্রের আস্তানা পুলিশ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এ চক্রের সদস্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ চক্রের নেপথ্য নায়কদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)
Leave a Reply